ঝিনাইদহে বিএনপি নেতার প্রটোকলে ভারতে পালিয়ে গেলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা!

স্টাফ রিপোর্টার: ঝিনাইদহ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও একাধিক মামলার আসামি আনিচুর রহমান মিঠু মালিথা ভারতে পালিয়ে গেছেন। অভিযোগ উঠেছে, পালিয়ে যাওয়ার আগে মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়ার আশ্রয়ে ছিলেন তিনি। মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে মিঠু মালিথাকে সবধরনের সহযোগিতা ও প্রটোকল দিয়েছেন এই বিএনপি নেতা জিয়াউর। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। শুরু হয়েছে সমালোচনা।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মিঠু মালিথা পলাতক ছিলেন। ঝিনাইদহে জেলা বিএনপির কার্যালয় ও জেলা বিএনপির সভাপতির বাসভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ছাত্র জনতার ওপর হামলার অভিযোগে মিঠু মালিথার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া ৫ আগস্ট পরবর্তী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ে উসকানি ও মদদ দিচ্ছিলেন মিঠু মালিথা।
সর্বশেষ গত কয়েকদিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই নেতা জেলার মহেশপুরে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়ার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। জিয়ার আশ্রয়ে মহেশপুরে প্রকাশ্যে চলাফেরা শুরু করেন এক সময়ের বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য মুর্তিমান আতঙ্ক মিঠু মালিথা।
গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য মহেশপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন মিঠু। খবর পেয়ে ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে স্থানীয় জনতা। পরে বিএনপি নেতা জিয়াউর রহমান জিয়া তার লোকজনসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে মিঠু মালিথাকে উদ্ধার করেন। আটক মিঠু মালিথাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে মিঠু মালিথাকে ভারতে পাঠিয়ে দেন বিএনপি নেতা জিয়া।
মহেশপুরের স্থানীয় বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৫ আগস্টের পর মহেশপুর উপজেলা পরিষদের সামনে একাধিক দিন আনিচুর রহমান মিঠু মালিথাকে জিয়ার সঙ্গে ঘুরতে দেখেছি। জিয়াউর রহমান জিয়ার সঙ্গে মিঠু মালিথার সখ্যতা নাকি অন্যকিছু, এনিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
জেলা কৃষকদলের সদস্য মোহাম্মদ উল্লাহ শাওকী বলেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর মহেশপুর বর্ডার দিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী ভারতে পালিয়ে গেছেন। সাবেক এমপি আনার হত্যাকা-ের মাস্টারমাইন্ড সাইদুল করিম মিন্টুর ক্যাডার হিসেবে পরিচিত মিঠু মালিথাও পালিয়েছেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এলাকার জনসাধারণ মিঠু মালিথাকে আটকের জন্য জড়ো হলে জিয়াউর রহমান জিয়া তাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকাও রহস্যজনক।
এ ব্যাপারে মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ৫ আগস্টের পর আনিচুর রহমান মিঠু মালিথার সঙ্গে মহেশপুর শহরে অনেকদিন দেখা হয়েছে। শুনেছি তিনি তার খালাতো ভাইয়ের বাড়িতে থাকতেন। তাকে ভারতে পালাতে কোনো সহযোগিতা করিনি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছে।
মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়েজ উদ্দিন মৃধা জানান, উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন মিঠু মালিথা। বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয় জনতা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে খুঁজে পায়নি। তাকে পালিয়ে যেতে কে বা কারা সহযোগিতা করেছে তা আমরা জানি না। আমরা গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ মজিদ বলেন, একজন মামলার আসামিকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করাও অপরাধ। দল কোনো ব্যক্তির কৃতকর্মের দায় নেবে না। মিঠু মালিথাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করার যে উদ্যোগ, এটি ব্যক্তিগতভাবে নেয়া হয়েছে। আমরা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমরা দলীয়ভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করবো। এ ধরনের ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেবে না দল।