ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ সদরের এক নারী গত ১০ মার্চ ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা করেন। পুলিশ অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের যুবকের বাড়ি থেকে ওই নারীকে ঝিনাইদহে ফিরিয়ে আনে। পরে ডাক্তারি পরীক্ষায় তার শরীরে ধর্ষণের কোনো আলামত মেলেনি বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. রোকনুজ্জামান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই নারী প্রবাসীর স্ত্রী। সম্পর্ক করে গত বছর ২০ নভেম্বর টাঙ্গাইলে অভিযুক্ত যুবকের বাড়িতে ওঠেন। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি মেয়েটির বাবা সদর থানায় জিডি করলে পুলিশ টাঙ্গাইল থেকে তাকে উদ্ধার করে। এর প্রায় দেড় মাস পর তিনি মামলা করেন। জানতে চাইলে মেয়েটির বাবা বলেন, ‘পছলেটি ফুসলিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে যায়। তার কাছে আমাদের কিছু গহনা, টাকাসহ দামি সরঞ্জাম রয়েছে। ফেরত না দেয়ায় মামলা করেছি। এগুলো দিলে মামলা তুলে নেয়া হবে।’ সদর হাসপাতালের তথ্যমতে, গত ১৫ মাসে ধর্ষণের অভিযোগে ১৫৩ নারী-শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। এতে প্রায় ৭৩ শতাংশের দেহে কোনো আলামত মেলেনি। যাদের মিলেছে, তাদের প্রায় ৭৩ শতাংশ শিশু-কিশোরী। জেলার ছয় থানায় গত বছর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৫৯টি মামলা হয়। আর চলতি বছর জানুয়ারিতে ৪, ফেব্রুয়ারিতে ২ ও মার্চে ১০টি ধর্ষণ মামলা রেকর্ড হয়। পুলিশের ভাষ্য, জেলায় যে হারে ধর্ষণের মামলা হয়, প্রকৃত ঘটনা তত নয়। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে বয়স ১৮ বছরের কম হলেই মামলা হিসেবে নিতে হয়। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ধর্ষণ মামলায় ২১ অপ্রাপ্ত বয়স্কসহ ৩২ জনকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ভর্তি করা হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯ জনকে পরীক্ষা করে দুই শিশুসহ পাঁচজনের শরীরে স্প্যাম পজিটিভ মেলে। এর আগে গত বছর ১২১ জন ভর্তি হলেও ডাক্তারি পরীক্ষা হয় ৮০ নারী-শিশুর। তাদের মধ্যে ২২ জনের শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে আবার ১৬ জনেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে। পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনায়, চলতি বছরের তিন মাসে ৭৪ এবং গত বছর ৭৩ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে ধর্ষণের আলামত মেলেনি। চলতি বছর পরীক্ষায় যারা পজিটিভ, তাদের ৪০ ভাগ শিশু, যা গত বছর ছিল প্রায় ৭৩ শতাংশ। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ গাইনি বিশেষজ্ঞ মো. আলাউদ্দিন বলেন, হাসপাতালে আসা ৪০ ভাগ নারীর ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। ধর্ষণের আলামত নষ্ট হলে ডিএনএ টেস্ট প্রয়োজন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে করা হয় না। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ছেলেমেয়েরা পরিবারের অমতে সম্পর্ক করে শারীরিক সম্পর্কে জড়াচ্ছে। পরে প্রতারণার শিকার কিংবা পরিবারের চাপে ধর্ষণের মামলা করছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ঝিনাইদহের সভাপতি আমিনুর রহমান টুকু বলেন, ‘প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য এখন হরহামেশা ধর্ষণের অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’