ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের ঘরে ঘরে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। বাতাসে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বাঁচার আকুতি। অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে কাড়াকাড়ি। পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও অবনতির দিকে এগুচ্ছে। ঝিনাইদহে করোনাভাইরাস শনাক্তে রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২০৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪৩টি পজিটিভ ফলাফল পাওয়া গেছে। সংক্রমণের শতকরা হার ৬৮ দশমিক ৭৫ ভাগ। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এছাড়াও এ সময়ের মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে একজন, শৈলকূপায় ২ জন ও মহেশপুর একজন মারা গেছে। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৮৮ জন। সোমবার বেলা ২টার দিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিথিলা ইসলাম জানান রোগীর চাপ সব চেয়ে বেশি। সকাল ৮টা পর্যন্ত ছিল ৪২ জন। এই মুহূর্তে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ জনে। তিনি আরও জানান পরিস্থিতি এতোটা ভয়াবহ যে, ইতোমধ্যে একজন ডাক্তার, ৯ জন নার্স ও ৪ জন ওয়ার্ড বয় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাভাবিক সবধরনের চিকিৎসা সেবা সীমিত করা হয়েছে। তবে একটি ভাল খবর দিয়েছেন ডা. মিথিলা। তা হলো সোমবার সকালের দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ২৫০ বেডের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতো দিন ১০০ বেড হিসেবে কার্যক্রম চলে আসছিল। প্রশাসনিক অনুমোদনের বিষয়টি ঝুলে ছিল। এতে করে আটতলা নতুন ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছিল না। এখন দ্রুত শুরু করা যাবে। ১০০ বেডের পুরাতন হাসপাতাল ভবনটি সম্পূর্ণ করোনা ইউনিট হিসেবে চালু করা হবে বলে নিশ্চিত করেন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিথিলা ইসলাম।
এদিকে চলমান মহামারি পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ডা. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, সদর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা। আক্রান্তদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জেলা শহরের পাড়া মহল্লাতেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। এতে করে প্রতিদিন রোগীর চাপ বাড়ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে সদর হাসপাতালে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। স্বজনরা অক্সিজেন নিয়ে কাড়াকাড়ি করে। আনসার সদস্য মোতায়েন করেও পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছে না। করোনা সংক্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, শেষ সময়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় শহর কেন্দ্রিক লকডাউনে কাজ হবে না। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকর করার তাগিদ দিয়েছেন এই চিকিৎসক।