জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের যুবদল সদস্য ওয়াজ হোসেন বিপ্লব (৩২) ঘটনার দুই দিন পর মারা গেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকার একটি বে-সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। গত সোমবার ভোর রাতে ৯৯৯-এ খবর পেয়ে জীবননগর থানা পুলিশ গয়েশপুরের বিল-কাশারী সড়ক থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় বিপ্লবকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বিপ্লবের স্ত্রী নাজেরা খাতুনের অভিযোগ তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলা যুবদলের পক্ষ হতে এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড দাবি করে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করা হয়েছে। পুলিশ অবশ্য প্রাথমিকভাবে এটিকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে সন্দেহ করছে। এ ফলে বিপ্লবের মৃত্যু নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে।
থানা ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৪নং সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের চাঁন মিয়া ওরফে বুড়োর ছেলে বিপ্লব ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য। তিনি উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন ময়েনের বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। বিপ্লবের স্ত্রী নাজেরা খাতুন জানান, গত সোমবার রাতে ব্যবসায়ীক কাজের কথা বলে একই গ্রামের তরিকুল ইসলাম, বাবলু ও সুলতান বিপ্লবকে বাড়ি থেকে একটি সাদা মাইক্রোযোগে তুলে নিয়ে যায় বলে জ্ঞান ফেরার পর স্বামী বিপ্লব তাকে জানিয়েছে। এরপর একই গ্রামের অপর এক জনের নির্দেশে তার ওপর নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে জখম করে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে রক্তাক্ত অবস্থায় বিল কাশারী সড়কে ফেলে রেখে যায়। ভোরে ৯৯৯-এ কল পেয়ে জীবননগর থানা পুলিশ তাকে গয়েশপুরের বিল কাশারির রাস্তা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে তাকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে বিপ্লবকে ঢাকার একটি বে-সরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হলে গতকাল তার মৃত্যু ঘটে। বিপ্লবের স্ত্রী নাজেরার অভিযোগ করে বলেন, প্রথমে বিপ্লব মোটরসাইকেলে এক্সিডেন্ট করে আহত হয়েছে বলে অপপ্রাচার চালানো হলেও পরে জ্ঞান ফিরলে বিপ্লব তাকে তুলে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করার কথা জানায়। উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মঈন উদ্দিন ময়েন বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। তার শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যেটি হাতুড়ির আঘাতের চিহ্ন বলে মনে হচ্ছে। আমি এর তদন্ত পূর্বক দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
জীবননগর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানা যায়, সোমবার ভোর রাতে যে রোগীকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিলো সেটি দেখে প্রাথমিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনা বলে প্রতীয়মান হয়। ফলে হাসপাতালের রেজিস্টারেও আরটিএও হেড ইনজুরি হিসেবে রোগীর কেস হিস্টোরি লেখা হয়েছে।
জীবননগর থানার ওসি মামুন হোসেন বিশ^াস জানান, রাত প্রায় ৪টার দিকে ইটভাটার শ্রমিকেরা ওই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় মোটরসাইকেলসহ বিপ্লবকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯ ফোন দেয়। খবর পেয়ে জীবননগর থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে এসআই রুবেল ও ফিরোজ হোসেন তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য জীবননগর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরবর্তীতে যশোর হাসপাতালে নেয়া হয়। ঢাকাতে নেয়ার পর আজ তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এখন মরদেহ ময়না তদন্ত করা হবে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে এবং সে অনুযায়ী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে জানান থানা অফিসার ইনচার্জ।