স্টাফ রিপোর্টার: জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) বাসভবনের পেছনে মাদকের আখড়া শিরোনামে স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর ইউএনও মো. আল-আমীন সাংবাদিকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। ফোন করে অফিসে ডেকে স্থানীয় ওই পত্রিকার জীবননগর অফিসের সহকারী ব্যুরো প্রধান ও মাইটিভির প্রতিনিধি মিঠুন মাহমুদের সাথে দুর্ব্যবহার ও রুঢ় ভাষায় ঝাড়ি মারেন ইউএনও। গতকাল বুধবার বেলা দুইটার দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসকক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর জীবননগর থানা পুলিশ গত মঙ্গলবার দুপুরে জীবননগর আমবাজারে অভিযান চালায় এবং সেখান থেকে বেশ কয়েকটি ড্রাম উদ্ধার করে। এ বিষয়ে ওই পত্রিকায় মাদকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ সমাজ সচেতনতার প্রতিবেদন হলেও প্রতিবেদনটি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমীন ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে, গণমাধ্যমকর্মীর সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের চরম দুর্ব্যবহারের ওই কথোপথনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট করে শোনা যাচ্ছে, গণমাধ্যমকর্মী মিঠুন মাহমুদ সালাম দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কক্ষে প্রবেশ করলেই ইউএনও মো. আল-আমীন বলেন, ‘কী খবর আপনার? আপনার সঙ্গে তো কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করি।’
মিঠুন মাহমুদ উত্তরে বলার চেষ্টা করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাকে থামিয়ে বলেন, ‘বাজে কথা বলেন না, আপনি কী মনে করেন? আপনি কী পারেন, আমি জানি না? আর আমি কী করি, আপনি জানেন না? এসময় মিঠুন মাহমুদ বলেন, ‘স্যার আমি আপনার খোঁজ রাখতে পারি না।’ ইউএনও মো. আল-আমীন বলেন, ‘কীসের সাংবাদিক আপনি, ইউএনও’র খোঁজ রাখেন না? আপনার পত্রিকায় যেদিন বিজ্ঞাপন দিলাম, সেদিনই আপনি নিউজ করালেন। আমার বাংলোর থেকে সেখানে যাওয়ার কোনো পথ আছে? আমার বাংলোর পেছনে, আমবাগান না আম বাজার? জায়গাটার পরিচয় কি ইউএনও বাংলোর পেছনে? এটা পরিচয়?’
ইউএনও বলেন, ‘কে কোথায় নেশা করে, মাদক খাই, কে কোন অপরাধ করে, এর জন্য আমার কি কোনো ইনটেলিজেন্স আছে? যাদের ইনটেলিজেন্স আছে, কোটি কোটি টাকা সোর্স মানি আছে, তাদের নিয়ে না লিখে আমাকে নিয়ে লিখলেন। তাদের নিয়ে লিখলেন না কেন? মিঠুন উত্তরে বলতে গেলে তাকে আবারও থামিয়ে দিয়ে ইউএনও বলেন, ‘আপনার যা খুশি আপনি তা লিখতে পারেন না। আপনার লেখার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকলেও। আপনি হলুদ সাংবাদিকতা করেন। যেদিন বিজ্ঞাপনটি দিলাম, একই দিনে নিউজ করে নেমকহারামি করলেন। এই নিউজ তো আপনি করিয়েছেন, আপনার সহকর্মী এটা স্পষ্ট বলে গেছে।’
তখন মিঠুন মাহমুদ ‘আমি বলি’ বলে কথা বলতে গেলেও ইউএনও মো. আল-আমীন তাকে আবারও থামিয়ে দেন। ইউএনও বলেন, ‘আপনার সঙ্গে কথা বলতে রুচি হয় না।’ ‘যারা ২৪ ঘণ্টা বর্ডার থেকে মাদক পাস করছে, মাদকের সঙ্গে ওঠাবসা করছে, তাদের নিয়ে আপনার লেখার সাহস হয় না। আমি কী করেছি? আমাকে নিয়ে লিখলেন।’ ইউএনও বলেন, ‘আপনি মরেন আপনার আচরণের কারণে, আচরণের জন্য, আবারও মরবেন আপনার আচরণের কারণে।’ আপনি আমার যা খুশি তা করে নিতে পারেন।’
মিঠুন বলেন, ‘স্যার আমার তো কিছু করার নেই।’ ইউএনও মো. আল-আমীন বলেন, ‘আপনার সঙ্গে আমার কনসার্টেশন (বিরোধ) শুরু হয়ে গেছে।’ এসময় ইউএনও চিৎকার করেন এবং মিঠুন মাহমুদকে অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।’
এ বিষয়ে স্থানীয় ওই পত্রিকার জীবননগর অফিসের সহকারী ব্যুরো প্রধান মিঠুন মাহমুদ বলেন, ‘গত মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত একটি স্থানীয় দৈনিকের প্রথম পেজে জীবননগর আম বাজারে মাদক বিক্রি হচ্ছে, এমন একটি বিষয়ে নিউজ হয়েছিল। সেই নিউজকে কেন্দ্র করে ইউএনও সাহেব আমাকে ফোন করে ডাকেন। তিনি ডাকলে আমি তার অফিসে যাই। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের রুমে গেলেই ইউএনও আমার সাথে খারাপ আচরণ শুরু করেন। তার বাজে ব্যবহার এবং অশালীন আচরণের মাত্রা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে অফিস থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।’
মিঠুন মাহমুদ আরও বলেন, ‘আমি তাকে বলেছিলাম, এই সংবাদ আমি করিনি। তখন উনি কে বা কার উদাহরণ দিয়ে আমাকেই আবারও দোষারোপ করেন। প্রকৃতপক্ষে সংবাদটির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি উপজেলার সহকারী ব্যুরো প্রধান মাত্র। এ বিষয়ে ইউএনও সম্পাদকের সাথে কথা বলতে পারতেন।’
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল-আমীনের মুঠোফেনে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। যার কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি শুনেছি। তবে বিস্তারিত জানি না। আমি রেকর্ডটি শুনব এবং ইউএনও’র সাথে এ বিষয়ে কথা বলব।’