জীবননগরে গ্রাহকের আমানতের কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা মানব কল্যাণ সংস্থা

এমআর বাবু/সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগরে মানব কল্যাণ সংস্থা (মাকস্) নামের একটি এলএমএল কোম্পানির কর্মকর্তারা সহস্রাধিক গ্রাহকের সঞ্চয় আমানতের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি লাপাত্তা হয়ে গেছে। এ ঘটনায় উপজেলাব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়েছে এবং হুমকির মধ্যে পড়েছে উপজেলার সাধারণ মানুষের কোটি টাকার আমানত। মাত্র দু’সপ্তাহের ব্যবধানে ভূয়া পরিচয় দিয়ে উপজেলা শহরের একটি বাড়িতে এনজিও ঋণ দেয়ার নামে মানবকল্যাণ সংস্থার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে এ টাকা। খুব চতুরতার সাথে পরিচালনা করা ভূয়া এনজিওর কর্মীরা বেছে নেয় উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোকে। গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারগুলোর সদস্যদেরকে নিয়ে রাতারাতি সমিতি সৃষ্টি করে ঋণ দেয়ার নামে কোটি টাকা সঞ্চয় আদায় করে তা আত্মসাত করে পালিয়েছে মানব কল্যাণ সংস্থার কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা জীবননগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভূক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলা শহরের আশতলাপাড়ার মৃত গোলাম রসুলের ছেলে শাহীনের দ্বিতল বাড়িটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এলএমএল কোম্পানি মানব কল্যাণ সংস্থার জীবননগর শাখা অফিসের নাম করে ৫ আগস্ট ভাড়া নেয় প্রতারক চক্রটি। এরপর অফিসটিতে চেয়ার টেবিল ও কম্পিউটার সাজিয়ে সংস্থার কার্যক্রম শুরু করে। শুরুতেই সংস্থাটির কর্মীরা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলকে বেছে নিয়ে হতদরিদ্র ও অসহায় পরিবারের ৩০-৩৫ জন মহিলাকে নিয়ে একটি করে সমিতি তৈরি করেন। এরপর সমিতির সদস্যদের হাতে তুলে দেয়া হয় মানব কল্যাণ সংস্থা (মাকস্) নামে সঞ্চয় আমানতের বই। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে এই চক্রটি উপজেলার বাঁকা, মিনাজপুর, সুটিয়া, বকুন্ডিয়া, রাজাপুর, মানিকপুর, গোয়ালপাড়া, সদরপাড়া, হরিপুর, হাবিবপুর গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে ৫০টি সমিতি তৈরি করে প্রত্যেক সদস্যের নিকট থেকে পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় আদায় করে। এভাবে তারা সহস্রাধিক সদস্যদের কাছ থেকে কোটি টাকা সঞ্চয়ী আমানত সংগ্রহ করেছে। চক্রটি প্রত্যেক সমিতির সদস্যকেই ২০ আগস্ট বৃহস্পতিবার তাদের কার্যালয়ে এসে ঋণ নিতে বলেন। সে মোতাবেক গতকাল বৃহস্পতিবার সমিতির সদস্যরা অফিসে এসে দেখতে পান মানব কল্যাণ সংস্থার প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। ওই অফিসের আশপাশের লোকজনের কাছে সমিতির সদস্যরা জানতে পারের সংস্থাটির সদস্যরা অফিসটি তালা দিয়ে চলে গেছে। এ সময় সমিতির সদস্যরা তাদের কাছে দেয়া সংস্থার ব্যবস্থাপকের মোবাইল নম্বরসহ (০১৭৮৪৩৭৬১৭৯) একাধিক কর্মীর মুঠোফোন নম্বরে কল করে তা বন্ধ পান। এদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে বাড়ির মালিক মানব কল্যাণ সংস্থার সাইনবোর্ডটি খুলে ফেলেন।
ভূক্তভোগী গ্রাহক বাঁকা গ্রামের মৃত মাহাতাব মোল্লার ছেলে মন্টু মোল্লা জানান, সংস্থাটির সদস্যরা তার বাড়িতে এসে স্ত্রীকে ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সমিতি তৈরি করে সঞ্চয়ের নামে ১০ হাজার টাকা নেয়। এ সময় তাকে বলা হয়, যেসব সদস্য পাঁচ হাজার টাকা জমা দেবে তারা ৫০ হাজার টাকা এবং যারা দশ হাজার টাকা সঞ্চয় জমা দেবে তারা এক লাখ টাকা ঋণ পাবে। এছাড়া যারা ৫০ হাজার টাকা জমা দেবে তারা প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা এবং যারা ১ লাখ টাকা জমা দেবে তারা প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে মুনাফা পাবে। এভাবে সহসস্রাধিক সদস্যের কাছ থেকে আমানত নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সংগ্রহ দাঁড়ায় প্রায় কোটি টাকা।
তিনি আরো জানান, সমিতির সদস্য অন্তর্ভুক্তি হবার পর প্র্রত্যেকের কাছ থেকে ২শ’ ৫০ টাকা করে নিয়ে একটি করে সঞ্চয় আমানতের পাশ বই দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি সমিতির নামে দেয়া হয়েছে মাসিক খাতা ও রেজুলেশন বই।
গোয়ালপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত হাসেম আলী বলেন, তিনি প্রতি লাখে মাসিক ১০ হাজার টাকা মুনাফার আশ্বাসে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু অফিস তালাবদ্ধ থাকায় টাকা ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অপর ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারী হরিপুর গ্রামের এনামুল হক অভিযোগ করেন, মানব কল্যাণ সংস্থার কাছে ভাড়া দেয়া বাড়ির মালিক দায় এড়াতে পারেন না।
এ ব্যাপারে জীবননগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার ব্যাপারে দু’টি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Comments (0)
Add Comment