জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলার বেনিপুর বাওড়টি খাস কালেকসনে দেয়া হয়েছে। প্রকৃত মৎস্যজীবীরা এ খাস কালেকসনের দায়িত্ব পায়নি। দায়িত্ব পেয়েছে অন্য একটি মৎস্যজীবী সমিতি। এখন তারা বাওড়ের মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়েছে। এর ফলে বেনিপুর বাওড়ের প্রকৃত মৎস্যজীবীরা কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে। এ অবস্থায় খাস আদায় বন্ধ এবং ইফাদের চুক্তি মোতাবেক আগামী ২৫ বছর নিজেদের অধীনে মাছ চাষের অনুমতি প্রদানসহ ভোগদখলের নিরাপত্তা অব্যাহত রাখার দাবিতে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে জলমহল পাহারা দিচ্ছে বেনীপুর বাওড়ের প্রকৃত ১১৫ মৎস্যজীবী পরিবারের দুই শতাধিক সদস্য। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছে আন্দোলনরত মৎস্যজীবীরা।
বেনীপুর বাওড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি দীন মোহাম্মদ সাংবাদিকদের জানান, ১৯৮৪ সালের এপ্রিল মাসে ইউএনডিপি, ওপিএস এবং ডানিডার যৌথ পরিচালনায় আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল ইফাদ বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ১৯৮৯ সালের ২০ জুন বেণীপুর বাওড় ইফাদ চালিত প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ইফাদ ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক বেনিপুর বাওড়ের তীরবর্তী ধান্যখোলা, বেনিপুর, কুশুমপুর, স্বরুপপুর এবং পেঁপুলবাড়িয়া গ্রামের দুস্থ ও ভূমিহীন ১১৫ জন সুফলভোগী মৎস্যজীবী ১৯৯৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৫০ বছরের জন্য বাওড়টি ইজারা নেন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রতি ১০ বছর পর পর ইজারা নবায়ন করতে হয়। ইজারা মেয়াদের নবম বছর শেষে মৎস্য অধিদফতর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সংশ্লি¬ষ্ট জেলা প্রশাসকের নিকট অনুরোধ জানাবেন। জেলা জলমহাল কমিটি সংশ্লি¬ষ্ট বাওড়ে মৎস্য অধিদফতর এবং বাওড় ব্যবস্থাপনা দলের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং কর্মকান্ড পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন করে জেলা প্রশাসককে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ করবেন। জেলা প্রশাসক জেলা মৎস্য কর্মকর্তার নিকট বাওড় ইজারার মেয়াদ পরবর্তী দশ বছরের জন্য বৃদ্ধি করবেন। এভাবে ৫ দফায় ৫০ বছর ইজারা মেয়াদ বহাল থাকবে। ১৯৯৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ইজারা নেবার পর থেকে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী সময়ে সময়ে বাওড়ের ইজারা বর্ধিত হয়ে আসছে। কিন্তু চলতি বছরের ৬ জুন চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মনিরা পারভীন পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বেনিপুর বাওড় হতে খাস আদায় ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন।
জীবননগর উপজেলা জলমহাল খাস আদায় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বেনিপুর বাওড় ইফাদ প্রকল্পের আওতায় বাংলা ১৪২৬ সাল পর্যন্ত ইজারা প্রদান করা হয়েছিলো। ইফাদ প্রকল্প বর্তমানে চলমান না থাকায় ভূমি মন্ত্রণালয় জলমহালটি সরকারের নিয়ন্ত্রনে নেয় এবং চলতি বছরের ৯ জুন জীবননগর উপজেলা জলমহাল খাস আদায় কমিটি এক মাসের জন্য বেনিপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির অনুকুলে ইজারা দেয়।
বেনীপুর বাওড়ের সাবেক সভাপতি আব্দুর রব জানান, ৩৪৭ বিঘা জলকরের বেণীপুর বাওড়টি ইফাদ প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত করে ৫০ বছরের জন্য ইজারা গ্রহণ করা হয়। ১১৫টি সুবিধাভোগী পরিবারের প্রায় ৭০০ সদস্যের রুজি-রুটি হতো এ বাওড়ে মাছ চাষ করে। বেণীপুর বাওড় ছাড়া আমাদের আয়ের আর অন্য কোনো উৎস নেই। ইতোমধ্যে আমরা ব্যাংক এবং এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২৫ লক্ষ টাকার মাছের রেণু বাওড়ে ছেড়েছি এবং প্রায় অর্ধ কোটি টাকার খাবার দিয়েছি। এখন যদি আমরা বাওড়ের মাছ ভোগদখল করতে না পারি তাহলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। এর জন্য বাওড় রক্ষায় তারা ইতোমধ্যে মাথায় কাপড়ের কাপড় বেঁধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনসহ বাওড়ে পাহারা বসানো হয়েছে। যাতে তারা মাছ ধরতে না পারে।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু ইফাদ প্রকল্প চলমান নেই, সেহেতু উক্ত প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে বলে গণ্য হবে। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী প্রকল্প চলমান না থাকায় জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৯ এর ৩ (খ) অনুচ্ছেদ অনুসারে উক্ত বাওড় ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপর ন্যস্ত হয়েছে। এ কারণে অধিক পরিমাণে সরকারি রাজস্ব আদায়ের জন্য বাওড়টি নতুন করে ইজারা দেয়া হয়েছে।