স্টাফ রিপোর্টার: প্রথম শ্রেণির পৌরসভা চুয়াডাঙ্গায় নাগরিক দুর্ভোগ চরমাকারে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ কবরী রোডসহ বেশির ভাগ সড়কই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পানীয় জলের রয়েছে চরম সংকট। আলমডাঙ্গা থেকে পৌর শহরের প্রবেশমুখসহ সড়কের ধারে যথেচ্ছা ময়লা আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধে চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে।
নাগরিকদের অভিযোগ, প্রতিবছর পৌর এলাকার উন্নয়নে কোটি কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন ও কাজের টেন্ডার হলেও দৃশ্যত সেভাবে কাজ চোখে পড়ে না। অথচ, প্রতিবছর বর্ষা মরসুমে রাস্তা খোঁড়াখুড়ি স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, বিগত অর্থবছরের শহরের পুরাতন হাসপাতাল সড়ক, কোর্ট মোড় থেকে কলেজ মোড় এবং কোর্ট মসজিদ থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের কাজ করা হয়। কাজ শেষ হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় পৌর কর্তৃপক্ষ পাইপ বসানোর নামে অপরিকল্পিতভাবে যথেচ্ছা রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করে। সেসময় পৌরসভার পক্ষ থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে জানানো হয়েছিলো, পাইপ বসানো শেষ হলেই সড়কগুলোকে আগের অবস্থায় অর্থাৎ পাথর ও বিটুমিন দিয়ে সংস্কার করে দেয়া হবে। অথচ, একবছরেরও বেশি সময় পার হলেও তা করা হয়নি।
সদর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, সাবেক মেয়রের সময়কার প্রস্তাবিত ট্রাক টার্মিনালের জন্য কেনা এক একর জমিসহ টানা এক কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। বৃষ্টি হলে ময়লা রাস্তায় চলে আসছে। এতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে বোয়ালমারী গ্রাম পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। সড়ক দিয়ে চলাচল করায় দুরূহ হয়ে পড়েছে। ময়লা আবর্জনার একটি স্থায়ী সমাধান দরকার।
তবে, পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পৌর এলাকার দুই নম্বর ওয়ার্ডের সুমিরদিয়া মৌজার বুজরুকগড়গড়ি কবরস্থানের পাশ দিয়ে ভেতরে দিকে তৃতীয় নগর পরিচালনা অবকাঠামো উন্নতিকরণ (সেক্টর) প্রকল্প-ইউজিপ -৩ এর আওতায় স্যানিটারি ল্যা- ফিল্ডের জন্য তিন একর জমি কেনা হয়েছে। ওই জমিতে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই ময়লা-আবর্জনার স্থায়ী সমাধান হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আয়ুব আলী বিশ্বাস বলেন, স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল্ডের তিন একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। চার মাস ধরে ডিজাইনের কাজ চলছে। পৌর এলাকার বর্জ্য প্রসেস হবে। ঘোড়ামাড়ার ব্রিজের পাশে এক একর জমি ২০১১-১২ অর্থবছরে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পৌর ফান্ডে টাকা না থাকায় ট্রাক টার্মিনাল করা সম্ভব হচ্ছে না।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (অব.) অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ময়লা-আবর্জনার কারণে মানুষের শরীরে শ্বাসকষ্ট, এলার্জি ও এ্যাজমা রোগ হতে পারে। এ জন্য শহরের প্রবেশমুখে এ ধরনের ময়লার স্তূপ থাকা উচিৎ নয়।
চুয়াডাঙ্গা নিরাপদ সড়ক চাই এর সভাপতি অ্যাড. আলমগীর হোসেন বলেন, ময়লা-আবর্জনার কারণে আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গা সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অবিলম্বে স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল্ড নির্মাণ করে জনগণকে দুর্ভোগ থেকে পৌর কর্তৃপক্ষ রেহায় দেবে এ প্রত্যাশা করছি।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল্ড নির্মাণের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়ে যাবে এবং টেন্ডার করতে পারবো বলে আশা করছি। এছাড়া, ঘোড়ামারা ব্রিজের কাছে ট্রাক টার্মিনাল তৈরির জন্য দুটি প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। টাকা পেলেই কাজ শুরু করা হবে।