স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা পর্যায়ে ৭দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে স্মারণলিপি প্রদান করা হয়। একই দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ১১ মার্চ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারক লিপি পেশ করা হবে। ইটভাটা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, তারা পরিবেশ বান্ধব জিগজাগ পদ্ধতি ব্যবহার করে ইট উৎপাদন করে দেশের রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও ভবনসহ অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এখন যদি এসকল ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে এ সকল ভাটা মালিক ঋণগ্রস্থ হয়ে পথে বসে পড়বে এবং তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপনের মধ্যে পড়তে হবে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই হাইকোর্টের নির্দেশনা প্রত্যাহার করে ইটভাটাকে শিল্প হিসাবে ঘোষণা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বক্তাগণ। দাবি গুলো ছিলো; ২০১৩ সালের ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের জিগজাগ ভাটা বৈধ পদ্ধতির উল্লেখ থাকলেও উক্ত আইনের ৮(৩)(ঙ) এবং ৮ (৩) (খ) উপ-ধারায় ‘দূরত্ব নির্দিষ্ট’ করণের কারণে দেশের কিছু জিগজাগ ইটভাটার মালিকগণ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর হাইব্রিড কিলন এবং ট্যানেল কিলন এর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ এলাকার দুরত্ব ১০০০ মিটারের পরিবর্তে ৪০০ মিটার নির্ধারণ করেছে সুতরাং আমাদের জিগজাগ ভাটার জন্য উক্ত আইনের ৮ (৩) (ঙ) ধারায় নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ৪০০ মিটার এবং আইনের ৮ (৩) (খ) এ বনের দুরত্ব ৭০০ মিটার করে লাইসেন্স ও ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিপত্র জারীর মাধ্যমে পরিচালনা করার সুযোগ প্রদানের আবেদন জানাচ্ছি। জিগজাগ ইটভাটায় কোনো প্রকার হয়রানি বা মোবাইলকোর্ট করা যাবে না, তাহা না হলে আমরা ভ্যাট ট্যাক্স দেয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবো। কোনো ইটভাটা বন্ধ করতে হলে সরকারিভাবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে বন্ধ করতে হবে। মাটি কাটার জন্য ডিসির প্রত্যয়নপত্র নেয়ার বিধান বাতিল করতে হবে। পরিবেশগত ছাড়পত্র, ডি.সি লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্রাদি ইস্যু/নবায়নের সময় কেন্দ্রীয় ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির প্রত্যয়নপত্র বাধ্যতামূলক ভাবে জমা দেয়ার বিধান করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ করছি। ইটভাটাকে শিল্প হিসাবে ঘোষণা দেয়ার দাবি করছি। ইটভাটা পরিচালনায় দীর্ঘ মেয়াদী পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। চুয়াডাঙ্গায় ৭দফা দাবিতে ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সমিতির জেলা কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর বিক্ষোভ মিছিলটি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হয়। সেখানে শ্রমিক-মালিকদের সম্মিলিত বিক্ষোভ মিছিলে নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় এলাকা প্রকম্পিত হয়। সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব বিক্ষোভকারীদের থামিয়ে উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে ৭দফা দাবি সম্মিলিত একটি স্বারকলিপি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাইফুল্লাহর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর প্রেরণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব, সমিতির নির্বাহী সদস্য আব্দুল ওয়াহেদ, ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সদস্য জাবালুল বাশার সেলিমসহ সদর উপজেলার ইটভাটা মালিকগণ। স্মারকলিপি প্রদান শেষে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল মোতালেব বলেন, দাবিসমূহ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে আলোচনায় না বসলে পবিত্র ঈদের পরে ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বরাবর পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় ইটভাটা মালিক সমিতির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্বারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার আলমডাঙ্গার ইটভাটা মালিক সমিতি এ কর্মসূচি পালন করেন। বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ মঞ্চ চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলামের নিকট স্বারকলিপি প্রদান করেন। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আসিরুল ইসলাম সেলিম, জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ আবিদুদ্দোজা ক্যাবল মিয়া, ইটভাটা ব্যবসায়ী চাঁন্দ আলী, হাজি খালেক, জাবুর, লিংকন, ওয়াজেদ আলীসহ উপজেলার ২২টি ইটভাটার মালিক ও তাদের শ্রমিকবৃন্দ।
দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় ভাটা মালিক-শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিল ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। ইটের ভাটায় অভিযান ও হয়রানি বন্ধসহ ভাটাগুলো চালানো ও সংশোধিত আইন পরিবর্তনের দাবিতে শ্রমিকরা বিভিন্ন সেøাগান দেন এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। ইট ভাটা মালিক শ্রমিকদের প্রদানকৃত স্মারকলিপি গ্রহণ করেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. মমতাজ মহল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দীন শান্তি, সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন টিটু, সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন মিয়া, নির্বাহী সদস্য আব্দুল মালেক, হাজি. আব্দুল কাদির প্রমুখ। উল্লেখ্য, জেলার মধ্যে দামুড়হুদা উপজেলায় বেশি ইট ভাটা রয়েছে। এ উপজেলায় সর্বমোট ৩২টি ইট ভাটার মধ্যে বর্তমান ২৭টি ইট ভাটা চলমান রয়েছে। যার বেশির ভাগই অবৈধ বলে জানাগেছে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, অবৈধ সকল ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয়ার হাইকোর্টের নির্দেশ দানের প্রতিবাদে জীবননগর উপজেলা ইটভাটা মালিক ও শ্রমিক সমিতি বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে হাইকোর্টের নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর ইউএনও’র মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার ইটভাটা মালিক ও শ্রমিক সমিতি এ কর্মসূচি পালন করে। জীবননগর মুক্তমঞ্চে এনবিএম ব্রিক্সের পরিচালক নেছার উদ্দিন টুটুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে ইটভাটা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যে অনিক বীক্সের হায়দার আলী, পিয়াস ব্রীক্সের আসাদুজ্জামান আকুল, খান ব্রীক্সের আজিম খান, লতিফ ব্রিকস্’র মোস্তফা, মা-বাবা ব্রিকস্’র শাহজাহান মিয়া ও শাহা ব্রিকস্’র শামিম হোসেন এবং শ্রমিকদের মধ্যে খোকন মিয়া, জামান, মাহাবুল ও শরীফ উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বিক্ষোভ শেষে হাইকোর্টের নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ইউএনও মো. আল-আমীন জানান, স্মারকলিপি পেয়েছি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। জীবননগর উপজেলায় বর্তমানে ২১টি ইটভাটা চালু রয়েছে। প্রতিটি ইটভাটা ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়ে পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও প্রতিটি ইটভাটায় গড়ে ১৫০ থেকে ২০০জন শ্রমিক কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে সদর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলা কার্যালয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাইরুল ইসলামকে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর সদর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এমএ নাঈম, সাধারণ সম্পাদক মিলন খান, রাশেদুল ইসলাম ইরানী, জাহাঙ্গীরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা এবং পরিবেশ, বন ও পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর ম্মারকলিপি প্রদান করেছে গাংনী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতি। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল সহকারে গাংনী উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিভিন্ন ইটভাটার মালিক ও শ্রমিকরা অবস্থান নেন। এবং বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন। এ সময় ইটভাটার বিপুল পরিমাণ শ্রমিকরাও অংশ নেন। বক্তব্য রাখেন গাংনী উপজেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক, গাংনীর সাবেক এমপি ইটভাটা মালিক আমজাদ হোসেন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইটভাটা মালিক জুলফিকার আলী ভূট্টো, বামন্দী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইটভাটা মালিক আওয়াল বিশ্বাস, ইটভাটা শ্রমিক আলফাজ উদ্দিন প্রমুখ। তারা আরও বলেন, গাংনী উপজেলায় ৫৫টি ইটভাটায় রয়েছে। এই ইটভাটা গুলোতে হাজার-হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এসব ইটভাটাগুলো প্রায় ৩৫-৪০ বছরের অধিক সময় ধরে চলমান রয়েছে। পরে উপজেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা এবং পরিবেশ, বন ও পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছে, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে মুজিবনগর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে মুজিবনগর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির উদ্যোগে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা এবং বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। মুজিবনগর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমানের নেতৃত্বে মুজিবনগর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন ইট ভাটা মালিক ও হাজারে নারী/পুরুষ শ্রমিক মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা সেøাগানে সেøাগানে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ মুখরিত করে রাখে। পরে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তাদের স্মারকলিপি প্রদান করেন। মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ মন্ডল স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। এ সময় মুজিবনগর উপজেলা ইটভাটার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাসমিউল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট রুমন, ফারুক, আজিমুল বারী মুকুলসহ উপজেলার সকল ভাটার মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।