চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশে জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল : ঢাকায় ডা. শফিকুর রহমান

ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না চোখ রাঙাবেন না : আজহারুল মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জুলুমের শিকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনেকেই মুক্তি পেয়েছে এতে আমরা আনন্দিত। কিন্তু কেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি হয়নি এবং হচ্ছে না প্রশ্ন রেখে আমীরে জামায়াত বলেন, আমার চেয়েছি অন্তবর্তীকালীন সরকার বৈষম্যহীনের উদাহরণ সৃষ্টি করবে। কিন্তু কাউকে মুক্তি দিবে কাউকে মুক্তি দিবে না সরকারের এমন কর্মকান্ডে জাতি আশাহত হয়েছে। স্পষ্ট করে বলতে হয়, অনতিবিলম্বে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতিক ফেরত দিবে দিতে হবে। নতুবা জামায়াতে ইসলামী রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলমান রাখবে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করা হবে। মনে রাখতে হবে, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, ফ্যাসিবাদের জুলুম ধরে রাখা যাবে না। সকল জুলুমের কবর রচনা করতে হবে। গতাকল মঙ্গলবার বিকেলে পল্টন মোড়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর কর্তৃক এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ সারাদেশে জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমিরে জামায়াত আরো বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে আওয়ামী লীগ বিচারিক হত্যা করেছে। যখন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন এটিএম আজহারুল ইসলাম, তখন আওয়ামী লীগ তাকে আটক করে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিগত ১৩ বছর কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। ফ্যাসিবাদের ভাষায় নয় রাজনীতির ভাষায় কথা বলতে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী এক আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করে না। কারো কাছে মাথানতো করে না। বহু আপসের প্রস্তাব জামায়াতে ইসলামী ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। কারা কোথায় মাথানত করেছে তা আমাদের জানা আছে, তথ্যও আছে। জামায়াতে ইসলামী কারো চোখ রাঙানীকে ভয় করে না। বরং সকল অপশক্তি ও ফ্যাসিবাদের নিপাত করতে জানে। তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের থেকে জানতে চান, বিগত সাড়ে ১৫ বছর যেভাবে জাতিকে ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ থেকে বৈষম্য দূর করতে লড়াই করা হয়েছে, বৈষম্য মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সেই লড়াই অব্যাহত রাখা যাবে কিনা? এ সময় উপস্থিত লাখ-লাখ নেতাকর্মী লড়াই অব্যাহত রাখার সেøাগান দিতে দেখা যায়। দেশ এখনো বৈষম্যমুক্ত হয়নি। তাই দেশ যতদিন বৈষম্যমুক্ত না হবে, ততদিন আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম বন্ধ হবে না। কারণ, আমাদের বিজয় সবে শুরু হয়েছে কিন্তু শেষ হয়নি। তিনি উচ্চকিত কণ্ঠে সেøাগান দিয়ে বলেন, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ; শেষ হয়নি যুদ্ধ’। তিনি জনতার উদ্দেশ্যে প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের যুদ্ধ-সংগ্রাম চলছে এবং চলবে ইনশাআল্লাহ।
এদিকে, এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে সারা দেশের ন্যায় চুয়াডাঙ্গাতেও বিক্ষোভ মিছিল ও সামবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় শহীদ হাসান চত্বরে জেলা জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা আজিজুর রহমান। সংগঠনের সেক্রেটারি আসাদুজ্জামানের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আমির রুহুল আমিন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে এই প্রথম জামায়াতে ইসলামী রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর দেশবাসী আশা করেছিল তারা সকল প্রকার জুলুম নির্যাতন থেকে উদ্ধার পাবে। যারা মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক ছিলেন তারা মুক্তি পাবে। শেখ হাসিনার পতনের পর অনেকে মুক্তি পেলেও মুক্তি পাননি জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের ৬ মাস ১০দিন অতিবাহিত হচ্ছে আজ। দেশের মানুষ আশা করেছিলেন এ সময়ের মধ্যে এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পাবেন। কিন্তু তার মুক্তি না হওয়ায় দেশবাসী বিস্মিত ও হতবাক হয়েছেন। ২০২৪ সালে ছাত্রজনতার গণঅভুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। দেশ স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্তি লাভ করে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে বিচারিক কার্যক্রমসমূহ সারা বিশে^ বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যত। স্বৈরাচারের আমলে গ্রেপ্তারকৃত এটিএম আজহারুল ইসলামকে কারাগারে আটক রাখা তার প্রতি চরম জুলুম ও অন্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে তাকে এখনো আটক রাখায় জাতি বিস্মিত ও হতবাক। দেশবাসী স্বৈরাচারের কবল থেকে পরিপূর্ণ মুক্তি চায়। এই পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী সহকারী সেক্রেটারি অ্যাড. মাসুদ পারভেজ রাসেল, আব্দুল কাদের, মুফতি আমির হামজা, জেলা ইউনিট সদস্য অ্যাডভোকেট মুসলিম উদ্দিন ও জেলা শিবির সভাপতি সাগর আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন জেলা কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ। সমাবেশ শেষে শহীদ হাসান চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বড় বাজার, কবরী রোড, কলেজ রোড হয়ে আবার বড় বাজার শহীদ হাসান চত্বরে এসে শেষ হয়। এ সময় শহর জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে মেহেরপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে হোটেল বাজার মোড়ে শেষ হয়। এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন মেহেরপুর জামায়াতের আমির মাওলানা তাজউদ্দিন খাঁন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম ১৩ বছরেরও অধিক সময় কারাগারে আটক আছেন। তাকে বারবার রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি বেশ কয়েকবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাকে ন্যূনতম চিকিৎসা সেবাটুকুও দেয়া হয়নি। দেশবাসী আশা করেছিল যে, চরম জুলুম-নির্যাতনের শিকার এটিএম আজহারুল ইসলাম স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশে মুক্তিলাভ করবেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের ৬ মাস ১০দিন অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও তাকে মুক্তি দেয়া হয়নি। আরও বলা হয়, স্বৈরাচারের আমলে গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলামকে কারাগারে আটক রাখা তার প্রতি চরম জুলুম ও অন্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে তাকে এখনো আটক রাখায় জাতি বিস্মিত ও হতবাক। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, নায়েবে আমির মাওলানা মাহাবুবল আলম, রাজনৈতিক সেক্রেটারি কাজী রুহুল আমিন, বায়তুলমাল সেক্রেটারি জার্জিস হুসেইন, জেলা শ্রমিক কল্যাণ সভাপতি আব্দুর রউফ মুকুল, জেলা সুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য গাংনী-২ আসনের সংসদ প্রার্থী নাজমুল হুদা, গাংনী উপজেলা আমীর ডা. রবিউল ইসলাম, সদর উপজেলা আমীর মাওলানা সোহেল রানা, সাধারণ সম্পাদক জাব্বারুল ইসলাম, মুজিবনগর উপজেলা আমির মাওলানা খান জাহান আলী, সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার, জেলা শিবির সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন, জেলা সুরা পরিষদের সদস্য আল আমিন ইসলাম বকুলসহ অন্যান্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।