স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া দুজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষায় মৃত দুজনের রিপোর্ট পজেটিভ আসে। এছাড়া জেলায় আরও ৪৫ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চুয়াডাঙ্গা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯৮৭ জনে। নতুন ৭ জনসহ মোট সুস্থ হলেন ৪৯২ জন। পরীক্ষার জন্য নতুন নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে ২৬ জনের। এদিকে, করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল শুক্রবার ভোরে দামুড়হুদার রামনগর গ্রামের শাফিউল আজম নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগসূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গার ৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৪৫ জনের পজেটিভ আসে। এর মধ্যে মারা যাওয়া আলমডাঙ্গার নতিডাঙ্গা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাতিকাটা গ্রামের বীর আমীর হামজার শরীরেও করোনা শনাক্ত হয়েছে। তারা দুজনেই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের হলুদ জোনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত বুধবার সকালে জ্বর, ঠা-া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন আলমডাঙ্গার নতিডাঙ্গা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ। উপসর্গ থাকায় তার নমুনা সংগ্রহ করে হলুদ জোনে রাখা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। গতকাল শুক্রবার রাতে তার করোনা পজেটিভ আসে। অপরদিকে, বুধবার বিকেলে করোনা উপসর্গ নিয়ে হাতিকাটা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হামজা আইসোলেশন ওয়ার্ডের হলুদ জোনে ভর্তি হন। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাতে আমির হামজার পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়। এছাড়াও শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের হলুদ জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাফিউল আজম (৪৫) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি জ্বর, ঠা-া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। শাফিউল আজম দামুড়হুদা উপজেলার রামনগর গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় আরও ৪৫ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৩০ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১১, জীবননগর উপজেলার ১ ও দামুড়হুদা উপজেলায় ৩ জন রয়েছেন। ৪৫ জনের মধ্যে পুরুষ ৩১ জন ও নারী ১৪ জন। তাদের বয়স ৭ থেকে ৮৫ বছর।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলার দৌলাতদিয়াড়ে দুজন, ঝোড়াঘাটা গ্রামের একজন, ইসলামপাড়ার একজন, বুজরুকগড়গড়ি পাড়ার দুজন, গাইদঘাট গ্রামের দুজন, হাসানহাটী গ্রামের একজন, ওয়াপদা পাড়ার একজন, জাফরপুর গ্রামের ৩ জন, বোয়ালমারী গ্রামের একজন, গুলশানপাড়ার দুজন, নতুন ভান্ডারদহ গ্রামের একজন, কেদারগঞ্জ পাড়ার একজন, ফার্মপাড়ার একজন, মাঝেরপাড়ার একজন, মাদ্রাসাপাড়ার একজন, হাতিকাটা গ্রামের একজন, মুক্তিপাড়ার ৩ জন, পুরাতন হাসপাতাল পাড়ার একজন, বড়বাজার পাড়ার একজন, ডিসি অফিসের স্টাফ একজন ও এসপি অফিসের স্টাফ দুজন রয়েছেন। আলমডাঙ্গা উপজেলার আসমানখালী গ্রামের একজন, ভাংবাড়িয়া গ্রামের একজন, হারদির একজন, বাদেমাজু গ্রামের একজন, থানাপাড়ার একজন, শালিকা গ্রামের একজন, নতিডাঙ্গা গ্রামের একজন, গড়চাপড়ার গ্রামের একজন, আনন্দধামের ১ জন, ভালাইপুর ১ জন রয়েছেন। দামুড়হুদা উপজেলার ছোটবলদিয়া গ্রামের ১ জন, লোকনাথপুর গ্রামের ১ জন ও ইব্রাহিমপুর গ্রামের ১ জন ও জীবননগর থানার ১ জন স্টাফ রয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামিম কবির জানান, গেলো বুধবার বিকেলে হাতিকাটা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আমির হামজা ও বৃহস্পতিবার বিকেলে রামনগর গ্রামের শাফিউল আজম জ্বর, ঠা-া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনার উপসর্গ থাকায় সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হামজা (৭৮) ও শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে শাফিউল আজম করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ভালাইপুর প্রতিনিধি জানান, ভালাইপুর মোড়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রামনগর গ্রামের শফিউল আজমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় রামনগর কবরস্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন সম্পন্ন হয়। তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় ভালাইপুর মোড়ের সকল ব্যবসায়ী দোকানপাট বন্ধ রেখে শোকপ্রকাশ এবং শোকসন্তুপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানায়। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শফিউল আজম দীর্ঘদিন ধরে হার্টের সমস্যাসহ শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এরমধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা জেলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ৪৯ জন ও হোম আইসোলেশনে ৪২৫ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। নতুন ৭ জনসহ এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪৯২ জন। দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমডাঙ্গার নতিডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রশিদ ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাতিকাটা গ্রামের আমীর হামজা মৃত্যুবরণ করার পর তাদের নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ আসে। তারা দুজনসহ এ পর্যন্ত মোট ২০ জনের মৃত্যু হলো।