বেগমপুর প্রতিনিধি: সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ঈদের আগে চুয়াডাঙ্গার বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদে নিম্নমানের দুর্গন্ধযুক্ত চাল সরবরাহকে কেন্দ্র করে পরিদর্শক কর্মকর্তাকে কারণ দর্শনো নোটিশ প্রদান করেছে নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা। নোটিশে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাবও চাওয়া হয়েছে। এদিকে নিজের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করে প্রকৃত ঘটনা আড়াল অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে সচেতনমহল মনে করছেন। প্রশ্ন উঠেছে ২০১৬-১৬-১৭ সালের বস্তায় ভরা প্রাপ্ত চাল আসলো কোথা থেকে? আর সরবরাহ করলো কোন প্রতিষ্ঠান? এর দায়ভার কি কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন নিয়ন্ত্রক ও কারিগরিক পরিদর্শক কর্মকর্তা?
ঈদের আগে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯টি ওয়ার্ডে ১ হাজার ৬৮৫ জন সুবিধাভোগির বিপরীতে ১৬ হাজার ৫৬০ কেজি (৩০ কেজি ওজনের ৫৫২ বস্তা) ভিজিএফ’র চাল সরবরাহ করে চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ। পরের দিন চাল বিতরণ করতে গেলে নিম্নমানের চাল নিয়ে ইউনিয়নবাসি প্রতিবাদি হয়ে ওঠেন। একপর্যায় দুপুরের দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান অভিযোগ পেয়ে চাল বিতরণ বন্ধ রাখেন এবং অবশিষ্ট ৩৫২ বস্তা (১০ হাজার ৫৬০ কেজি) চাল জব্দ করে খাদ্যগুদামে ফেরত পাঠান। ঈদ সন্নিকটে হওয়ায় রাতের মধ্যেই খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ ভালোমানের সমপরিমাণ চাল পরিষদের অনুকূলে সরবরাহ করেন। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হবার পর থেকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম ও খাদ্য পরিদর্শক আবু বকর সিদ্দিকের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়।
একটি সূত্র জানিয়েছে, যেদিন নিম্নমানের ৬৬৬ বস্তার এক ট্রাক চাল গোডাউনে আসে তখন পরিদর্শক তা গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং চালের নমুনার ছবি তুলে নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার নিকট পাঠান। প্রতি উত্তরে নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা লেখেন ‘খারাপ ই তো, কাল সকালে আসছি’। এমন উত্তর পেয়ে পরিদর্শক তা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। পরিদর্শক চালের নমুনার যে ছবি নিয়ন্ত্রকের নিকট পাঠিয়েছেন বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদে সরবরাহ চালের সাথে যতেষ্ট মিল রয়েছে। খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম বলেন, আমার কাছে যে নমুনা পাঠানো হয়েছিলো সে চাল এ চাল না। ঘটনার পর থেকে নিম্নমানের এ চাল নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা এবং পরিদর্শক কেউ দায় নিতে চাইছেন না। তাহলে দায় কার? গোডাউনেই বা কি করে ২০১৬ সালের বস্তায় চাল ঢুকলো।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সঠিক তদন্ত হলে সত্য বেরিয়ে আসবে। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন করেছি মাত্র। সেই সাথে প্রশ্ন উঠেছে চেয়ারম্যান চাল এক জায়গায় না রেখে দু’জায়গায় কেন রাখলেন?
চেয়ারম্যান আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার বলেন, বেগমপুর ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউনের ছাদের অবস্থা ভালো না। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। ইদুরে খায়। চাল বিতরণের সুবিধার্থে ৯টি ওয়ার্ডে রাখার নির্দেশনা ছিলো। বেশি জায়গায় রাখলে সুরক্ষা এবং তদারকি করা যেমন কঠিন ছিলো, তেমনি ঈদের আগে গরিব মানুষের ঘরে চাল পৌঁছুনোও কঠিন হতো। কারণ ট্যাগ অফিসার তো একজন। প্রতিদিন এক ওয়ার্ড করে দিলেও তো ৯দিন লেগে যেত। আয়তন এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৪ ওয়ার্ডের চাল বেগমপুর পরিষদের গোডাউনে এবং ৫ ওয়ার্ডের চাল নেহালপুর ইউনিয়ন পরিষদ গোডাউনে রাখা হয়। নিম্নমানের এ চাল নিয়ে সঠিক তদন্তের দাবি তুলেছে সচেতনমহল। সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহকারী কয়েজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকার যখন চাল ক্রয় করেন তখন সর্বপ্রথম মাননিয়ন্ত্রণ কারিগরি পরিদর্শক নমুনা নিয়ে মাননিয়ন্ত্রণ করে নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাকে অবহিত করে। নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সন্তোষ প্রকাশ করলে পরিদর্শক কর্মকর্তা নির্দেশ মোতাবেক চাল গোডাউন জাত করে থাকেন। আর চাল গোডাউন জাত হয়ে থাকে দুভাবে। প্রথমত সরাসারি ক্রয়সূত্রে, দ্বিতীয়ত প্রাপ্তসূত্রে। যে চাল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সদর গোডাউনে প্রাপ্ত হিসাবে পেয়েছে।
তারা আরও জানান, নিম্নমানের এ চালের দায়ভার কোনভাবেই নিয়ন্ত্রক ও কারিগরিক পরিদর্শক কর্মকর্তা এড়িয়ে যেতে পারেন না। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব চেয়ে পরিদর্শক কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করেছেন। রেজাউল ইসলাম বলেন, নোটিশের জবাব পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আবুবক্কর বলেন, চিঠি পেয়েছি প্রাপ্ত চালের বর্ণনা দিয়ে জবাব দিবো। এ ব্যাপারে খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। জেলা থেকে প্রতিবেদ আসলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৮ জুন জনৈক এক ব্যক্তির গোডাউন থেকে ১ হাজার ২৬৬ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। হইচৈই পড়ে যায় চাল নিয়ে। সেই জব্দকরা চাল নিয়ে শেষ পরিণতি কি হয়েছে আজও তিমিরে রয়ে গেছে।