ভালাইপুর/আসমানখালী প্রতিনিধি: ইয়াস কেটে গেছে রাতেই। হালকা বাতাস ছিলো সারারাতজুড়ে। চুয়াডাঙ্গায় ভোরের আলো ফোটার পর পরই বদলে গেলো আবহাওয়া। বদলে গেলো চুয়াডাঙ্গার আকাশ। চারদিক কালো করে দমকা হাওয়া কিছুক্ষণ পর রূপ নেয় কয়েক সেকেন্ডের টর্নেডোয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে মুহূর্তেই ল-ভ- হয়ে গেছে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নান্দবার ও আইন্দিপুর গ্রাম। এর ঘর ভেঙেছে তো ওর ঘরের টিন উড়ে ঠেকেছে নারিকেল গাছের মাথায়। ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট কয়েক সেকে-ের এই ঝড়ে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, গাছপালা, পানের বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাত্র কয়েক সেকে- স্থায়ী এ ঝড়ে সবকিছু ল-ভ- হয়ে গেছে। সবকিছু হারিয়ে পরিবারগুলো এসে দাঁড়িয়েছে খোলা আকাশের নিচে। খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে প্রশাসন।
আইন্দিপুর গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, টর্নেডোর হানায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছেন অনেকেই। কেউ কেউ ভেঙে পড়া ঘরের ছিন্নভিন্ন টিন খুঁজে নিয়ে এসে বাড়ির উঠানে জড়ো করছেন। আবার কেউ ঘর মেরামতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গ্রামটিতে অন্তত ৩৬টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮০ বছর বয়সী আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমি বাপু, ৩০-৩৫ বছর আগে অ্যাকবার ঝড় দেইকেলাম। তেবে, এবেড্ডা হটাশ (হঠাৎ) করে ঝড় আইল আর চলে গেলো। তাকি দেকি ভিটেটুকু ছাড়া আর কিচুই নেই।’ ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন গৃহবধূ রুপালি বেগম (৩০)। তিনি বলেন, ‘ঝড়ে শুদো মাটিটুকুই রাইকে গিয়েচে। আমার আর ছেলেপিলেদের পরনের জামা ছাড়া কিচুই নেই। সব উড়ে গিয়েচে।’
গাংনী ইউনিয়নের নান্দবার গ্রামে ঢুকেই চোখে পড়ে ঝড়ের ধ্বংসলীলা। গ্রামের সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে একদল যুবক ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের খাবারের জন্য খিচুড়ি রান্না করছেন। পুরো গ্রাম ঘুরে ঝড়ের তা-ব চোখে পড়ে। পান চাষের ওপর নির্ভরশীল হাসিবুর রহমান, রতন আলীসহ অসংখ্য কৃষকের পানের বরজ মাটিতে মিশে গেছে। মিনারা বেগম, ফারুক হোসেনসহ ১৬ জনের বাড়ি ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের ঘরের চাল অন্তত ৫০ ফুট ওপরে গাছের মগডালে আটকে থাকতে দেখা যায়। গ্রামের মোহাম্মদ আলী দাবি করেন, ৮৫ বছর বয়সে ঝড়ে এমন তা-ব কখনো চোখে দেখেননি।
ভুক্তভোগীরা জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে ঝড়ে হানা দেয়। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেকেরই ঘরের চাল, টিনের বেড়া উড়ে যায়। গাছের ডালপালা ভেঙে যায়। অনেক গাছ উপড়ে যায়। অনেকের টিনের চাল উড়ে নিরুদ্দেশের ঘটনাও ঘটে।
আইন্দিপুর গ্রামের মাহাবুল ইসলাম জানান, সকালে হঠাৎ ৩০ সেকেন্ডের হু হু শব্দের ঘুর্ণিঝড়ে সব ল-ভ- করে দিলো। মাঠের পানের বরজগুলো সব ভেঙে গেছে। ঘুর্ণিঝড়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে গ্রামের শতাধিক পরিবারের।
খবর পেয়ে দুপুরে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার ম-ল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ুন কবীর, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এনামুল হক, চিৎলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বিপ্লব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য সহায়তা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার ম-ল। সরকারিভাবে আরও সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি। এছাড়া নান্দবার গ্রামের যুব সমাজের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রান্না করা খাবার বিতরণ করেন।
জেলা প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্যসহায়তা দেয়া হয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির পর তাদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।