গাংনী পৌরসভা নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিয়ে নেতাকর্মীদের ভাবনার সীমা নেই  : আ.লীগের চ্যালেঞ্জ ঐক্য আর বিএনপির টিকে থাকার লড়াই

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভা নির্বাচনে জয়-পরাজয় নিয়ে নেতাকর্মীদের ভাবনার সীমা নেই। দলীয় প্রতীক জয়লাভের মধ্য দিয়ে মানসিক প্রশান্তি আর দলের অবস্থান সুদৃঢ় করার আশায় বুক বেঁধেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীরা। জয়লাভের ক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। অপরদিকে হামলা-মামলার আশঙ্কা নিয়ে ভোটের মাঠে কতটুকু টিকে থাকতে পারবে তা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে।
২০১৫ সালে গাংনী পৌরসভা নির্বাচনের ভোটের হিসেব অনুযায়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম জয়লাভ করেছিলেন। তিনি জগ প্রতীকে ভোট পেয়েছিলেন ৭ হাজার ৩৭৭। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আহম্মেদ আলী (নৌকা) পেয়েছিলেন ৫ হাজার ৩৮৮ ভোট। জয়-পরাজয়ে ভোটের ব্যবধান ছিলো ১ হাজার ৯৮৯। ওই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ইনসারুল হক ইন্সুর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিলো। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ৭৯৫ ভোট। ১৭ হাজার ৫৫৭ জন ভোটারের মধ্যে ১৪ হাজার ৬৪ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বাতিল হয়েছিলো ২৪৬ ভোট। ভোট প্রদানের হার ছিলো ৮০ দশমিক ১০ ভাগ।
নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বলিষ্ঠ নেতা হিসেবে পরিচিত আহম্মেদ আলী নৌকা প্রতীক পাওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে জয় নিয়ে আশার আলো দেখা দেয়। কিন্তু নেতাকর্মীদের অনৈক্য থাকায় ভোটের মাঠে সুবিধা আদায় করতে ব্যর্থ হয় ক্ষমতাসীন দলটি। নেতাকর্মীদের একে অপরের দোষারোপের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের সময় পার হয়। অপরদিকে দলের কিছু নেতাকর্মী ও বিএনপি-জামায়াতের অনেক ভোট স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল ইসলামের জগ প্রতীকে পড়ে। এতে বিএনপি প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয় হয়।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রার্থী এ প্রসঙ্গে বলেন, ২০১৫ সালের নির্বাচনের পরিস্থিতি আর এবারের নির্বাচনের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। যদিও গাংনীর আওয়ামী লীগ এখনো দু’গ্রুপে বিভক্ত তবুও যোগ্য প্রার্থী চুড়ান্ত হলে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে দু’গ্রুপ পৃথকভাবে সমাবেশ পালন করায় নেতাকর্মীদের মনে ঐক্য নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। একই মঞ্চে একইসাথে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীদের কর্মসূচি পালনের মতামত ছিলো বলে জানায় দলের একটি সূত্র। সেটি না হয়ে প্রকাশ্য গ্রুপিংয়ের ঘটনায় ভোটের মাঠে কতটা ঐক্য থাকবে তা নিয়ে এখন নানা সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মতো গ্রুপিং না থাকলেও বিএনপির গ্রুপিং নেই তা নয়। জামায়াতের সাথেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে টানাপড়েন রয়েছেন নেতৃবৃন্দের। পৌরমেয়র প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গ্রুপিং আর জামায়াতের সাথে সমন্বয় না হলে বিএনপি প্রার্থীও বেকায়দায় পড়তে পারেন। নেতাকর্মীদের তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগের একক ভোটের চেয়ে পৌরসভায় বিএনপি-জামায়াতের ভোট কিছুটা বেশি। সেক্ষেত্রে সমন্বয় না হলে আবারও স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিতে পারেন নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ। বতর্মান মেয়র আশরাফুল ইসলাম গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ যুদ্ধ থেকেই বাদ পড়েছেন। তিনি এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন বলে জানা গেছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের কয়েকজন গেলো কয়েকটি নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আওয়ামী লীগের যোগ্য ও শক্ত প্রার্থী যদি নৌকা প্রতীক পান তাহলে বিএনপি-জামায়াতের নেতার্মীরা ভোটের মাঠে স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন না। ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নিয়েও তাদের মাঝে সংশয় আছে। নানা হিসেব করে তারা ধানের শীষের পক্ষে কতটুকু কাজ করতে পারবেন তা নিয়ে হিসেবের অন্ত নেই। চলছে প্রতীক পাওয়া যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন কে পাচ্ছেন তার ওপর এবারের নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা।

Comments (0)
Add Comment