গাংনী প্রতিনিধি: এক সময় জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা মেহেরপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন আজ দলের সব কমিটি থেকেই বিচ্ছিন্ন। ফলে এলাকার আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতাকর্মীদের মনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। আর সেই ক্ষোভের বর্হিঃপ্রকাশ ঘটেছে গতকাল বুধবার উপজেলা যুবলীগের আলোচনাসভায়। মকবুল হোসেনের জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে অপকৌশলে দলের বাইরে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন যুবলীগ নেতৃবৃন্দ।
জাতীয় শোক দিবস পালনে গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণে বুধবার বিকেলে এ আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হাজারো মকবুলভক্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সমস্বরে বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের প্রতি অবিচল আস্থার জানান দেন।
অনুষ্ঠানে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন। তিনি বক্তৃতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি তুলে ধরেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা; বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যার নেতৃত্ব আমার রক্তের সাথে মিশে আছে। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সত্ত্বেও আপনারা যে আমাকে ভুলে যাননি এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতেও আপনারা আমার সাথে থাকবেন এবং আমিও আপনাদের সাথে ছিলাম, আছি এবং থাকবো।
স্বাগত বক্তব্যে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, জননেতা মকবুল হোসেনকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই; আপনারা দেখে যান মকবুল হোসেনকে গাংনীর আওয়ামী লীগ কতো ভালবাসে। আপনাদের মতো জামায়াত-শিবির নিয়ে মকবুল হোসেন দল করে না। মকবুল হোসেনের পরিবারের সদস্য ও কর্মী হিসেবে আমি বলতে চাই, আঘাত করলে পাল্টা আঘাত আমরাও করবো।
বর্তমান এমপির প্রতি ইঙ্গিত করে মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, আপনি যা পারবেন আমরা তা পারবো না। কারণ আপনি রাজাকারের সন্তান আর আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আপনার কাছে দল কতোটুকু নিরাপদ তা গাংনীর মানুষ ইতোমধ্যে বুঝেছে। আপনি যদি দলের মানুষকে আর নির্যাতন করেন তাহলে দলের লোক আর বসে থাকবে না। আপনি নিজেকে আওয়ামী লীগের মানুষ হিসেবে দাবি করলেও কাদের সাথে চলাফেরা করেন তা ইতিমধ্যে গাংনীর মানুষ বুঝতে পেরেছে।
কি অপরাধে মকবুল হোসেনকে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাখা হয়নি প্রশ্ন রেখে মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, তিনি যখন মনোনয়ন পেয়েছিলেন তখন মকবুল হোসেনের কাছে পড়েছিলেন। আমরা সবাই মিলে এমপি ও উপজেলা ভোটে নৌকা প্রতীক জিতিয়েছি।
বক্তৃতায় উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শফি কামাল পলাশ বলেন, বর্তমান এমপি এক সাক্ষাৎকারে মকবুল হোসেনসহ কয়েকজনকে উচ্ছিষ্ট আওয়ামী লীগ বলেছেন। যা আওয়ামী লীগের মানুষের মনে চরম আঘাত দিয়েছে।
দলের পদ-পদবি থেকে মকবুল হোসেনকে বাদ দেয়ার বিষয়ে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেকের উদ্দেশ্যে বলেন, মনে রাখবেন মকবুল হোসেন কিন্তু শিকড়গাড়া বৃক্ষ। মকবুল হোসেনকে তোলার জন্য কালবৈশাখী লাগবে, টর্নোডো লাগবে, তাইফুন লাগবে তারপরেও উপড়ে ফেলা সম্ভব না। ২০১৪ সালে সদরে অ্যাড. ইয়ারুল ইসলাম ও গাংনীতে মকবুল হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচন করেন। ইয়ারুল ইসলামকে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু মকবুল হোসেনকে সদস্য পদেও রাখা হয়নি। এসবই মকবুল হোসেনের জনপ্রিয়তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ।
উপজেলা যুবলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মজিরুল ইসলাম বক্তব্যে মকবুল হোসেনকে গাংনী আওয়ামী লীগের বটবৃক্ষ উল্লেখ করে জেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, তার নামটি জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাখতে আপনাদের খুব কষ্ট হয়েছে। কিন্তু মকবুল হোসেনকে এই জনগণের কাছ থেকে কিভাবে নিশ্চিহ্ন করবেন? জনগণ মকবুল হোসেনকে যেভাবে ভালোবাসে সেই ভালোবাসা আপনারা কোথায় পাবেন? আপনারা পাঁচটি বছর উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার টাকা-পয়সা লুটপাট করেছেন। এসব দুর্নীতি তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, উপদেষ্টা ইয়াছিন রেজা, উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি নবীর উদ্দীন ও আল ফারুক, উপজেলা কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান পলাশ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক তৌহিদুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আমিনুল ইসলাম সেন্টু, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ডালিম রানা, সাধারণ সম্পাদক নাছিরুল ইসলাম মোহন, ষোলটাকা ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা আনোয়ার পাশা, তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফি ও যুবলীগ নেতা তন্ময়, গাংনী পৌর যুবলীগের সভাপতি আশরাফ উদ্দীন বাবুসহ নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন ও রাইপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম।
আলোচনা সভা শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে একটি শোক শোভাযাত্রা গাংনী শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে আলোচনাসভাস্থলে দোয়া মোনাজাত ও কাঙ্গালি ভোজ বিতরণ করা হয়। দোয়া মোনাজাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের প্রয়াত সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মকবুল হোসেন ভক্তদের এক প্রকার মিলনমেলায় পরিণত হয়। যুবলীগের বিভিন্ন ইউনিট নেতাকর্মীরা ছাড়াও ওয়ার্ড পর্যায় থেকে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিলে মিছিলে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।