স্টাফ রিপোর্টার: কোটচাঁদপুরের ৩ বছর বয়সী শিশু জান্নাতুন নিসাকে বটি দিয়ে টুকুরো টুকরো করে পালিয়ে ফেরীওলা ছদ্মবেশে ঘুরলেও শেষ রক্ষা হয়নি পেশাদার খুনি কেসমত ফকির ওরফে দুলাল ফকিরের। ৬৫ বছরের কেসমত ফকির যশোরের অভয়নগরের ধোপাদি এলাকায় এক বৃদ্ধাকে কুপিয়ে খুন করে পালানোর সময় ধরাপড়ে। তার প্রকাশিত ছবিই ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুরের শিশু খুনের নেপথ্য উন্মোচনের পথ দেখায়।
পুলিশ বলেছে, ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুর উপজেলা শহরের দরগাপাড়ার সজবি বিক্রেতা তোফাজ্জেল হোসেন টুকুর তিন বছর বয়সী ফুটফুটে শিশু কন্যা জান্নাতুন নিসা খুনের নেপথ্য উন্মোচন নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে পুলিশ। অবশেষে শুক্রবার (৩১ জুলাই) ঝিনাইদহ আদালতে কিসমত ফকির স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবাবন্দির ভিত্তিতে কোটচাঁদপুর থেকে ছালমা খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই সালমাই ২০ হাজার টাকা কেসমত ফকিরকে দিয়ে তার শ্বশুরের দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে নিসাকে খুন করিয়েছিলো। ইউসুফের স্ত্রী ছালমাকে পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও কিছু তথ্য পেতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, গত ১১ মার্চ ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা শহরের দরগাপাড়ার সবজি বিক্রেতা তোফাজ্জেল হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রীর তিন বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতুন নিসা খুন হয়। তাকে বটি দিয়ে কেটে টুকুরো টুকরো করা হয়। এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর থানায় মামলা হয়। থানার ওসি মাহবুবুল আলম তদন্তভার নেন। তিনি জানতে পারেন ওই বাড়িতে একজন ভাড়াটিয়া ছিলেন। আনুমানিক ৬৫ বছরের বৃদ্ধই শিশু জান্নাতুন নিসা ওরফে জান্নাতুল নেসাকে খুন করে পালিয়েছে। যেহেতু ওই বৃদ্ধের কোন ঠিকানা ছিলো না, ছিলো না কোন ছবি। ফলে পুলিশকে দিশেহারা হয়ে পড়তে হয়। অপরদিকে যশোরের অভয়নগরের ধোপাদি এলাকার সুহাসিনী নামের ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধাকে কুপিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। ফেরিওয়ালা কিসমত ফকির ওরফে দুলাল ফকির স্থানীয়দের হাতে ধরাপড়ে। সুহাসিনী নামের জখম বৃদ্ধাকে যশোর আড়াইশ বেড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান। বিষয়টি পত্রিকার পাতায় গুরুত্বসহকারে উঠে আসে। ছাপা হয় খুনির ছবি। এদিকে কোটচাঁদপুর থানার ওসি ওই পত্রিকা হাতে পেয়ে পুর্বে শোনা খুনির চেহারার বর্ণনায় মিল খুঁজে পান। তিনি শিশু নিসার পিতাকে দেখান। ছবি দেখে নিসার পিতা তাকে শনাক্ত করেন। এরপরই শিশু খুন মামালায় শোনএ্যারেস্ট দেখানো হয়। চাওয়া হয় ১০ দিনের রিমান্ডে। দুদিনের রিমান্ড ম-র করেন বিজ্ঞ আদালত। বৃহস্পতিবার কিসমত ফকির ওরঠে দুলাল ফকিরে নেয়া হয় কোটচাঁদপুর থানায়। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে কিসমত ফকির জানায়, তাকে তিন বছরের শিশু জিন্নাতুন নিসাকে হত্যা করার জন্য কুড়ি হাজার টাকা দিয়েছিলো ছালমা। ছালমার কারণেই আদর করে ডেকে ঘরে নিয়ে বটি দিয়ে টুকুরো টুকরো করে কেটে ফেলি। এরপর চয়ে যাই যশোরের অভয়নগরে। সেখানে শাড়ি কাপড় ফেরি করতে গিয়ে কথা কাটাকাটি হয় এক বৃদ্ধার সাথে। তাকে কুপিয়ে সরে পড়তে গেলে জনগণ ধরে ফেলে। এসব কথা সে শুক্রবার (৩১ জুলাই) আদালতে স্বীকারোক্তিতে বলেছে। ছালমা কেনো অতোটুকু শিশুকে টাকা দিয়ে খুন করিয়েছে? শিশু জিন্নাতুন নিসা ওই ছালমার শ্বশুরের দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে। দ্বিতীয় স্ত্রী পাগল বানাতেই তার মেয়েকে টাকা দিয়ে খুনের সিদ্ধান্ত নেয় বলে গ্রেফতারের পর সে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।
গত শুক্রবার বিকেলে কিসমত ফকিরকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে পুলিশ। এ সময় কিসমত খুনের কথা অকোপকে স্বীকার করে বুঝিয়ে দেয় সে পেশাদার খুনি। তার বাড়ি রাজবাড়ি জেলায়। দুজনের খুনের কথা সে স্বীকার করলেও আরও কাউকে সে খুন করে ছদ্মবেশ ধরেছিলো কিনা তাও জানার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।