কুষ্টিয়ায় ২৪ ঘণ্টায় করোনা-উপসর্গে ১৭ জনের মৃত্যু

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল কিছুতেই থামছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১০জন ও উপসর্গ নিয়ে সাতজন মারা গেছেন। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এমএ মোমেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ২৫০ বেডের করোনা ডেডিকেটেড এই হাসপাতালটিতে এখন শয্যার চেয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ২৭৭ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই ১৮৭ জন। উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন আরও ৯০ জন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, শয্যা না থাকায় এখন রোগীদের মেঝেতে ও করিডোরে রাখতে হচ্ছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগীর চাপ যেভাবে বাড়ছে তাতে সেবা দেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে।
এদিকে, কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৮০১টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে নতুন করে ২৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ২১ ভাগ। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৪৩২ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৩০ জন। মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৫ জনে।
নতুন করে শনাক্তের মধ্যে কুষ্টিয়া সদরের ৯৬ জন, দৌলতপুরের ৪৭ জন, কুমারখালীর ৩৯ জন, ভেড়ামারার ১৭ জন, মিরপুরের ১৬ জন ও খোকসার ১৯ জন।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে কুষ্টিয়ায় চলমান লকডাউন আগামী ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। এতে বলা হয়েছে, কুষ্টিয়ায় চলমান লকডাউন আগামী ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে। এ সময় ওষুধ, নিত্য প্রয়োজনীয় মুদি দোকান, কাঁচাবাজার ছাড়া বাকি সবধরনের দোকান ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন কার্যকরে কুষ্টিয়ায় মাঠে নেমেছে প্রশাসন। র্যািব-পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর তৎপরতা দেখা গেছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় জনসমাগম ঠেকাতে মাইকিং করে ঘরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করছে প্রশাসন। এই লকডাউন বাস্তবায়নে ছয়টি উপজেলায় সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন আছে। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করতে পুলিশ মাঠে তৎপর রয়েছে। জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশি করা হচ্ছে। সবার কাছ থেকে লকডাউন কার্যকর করতে সহযোগিতা পাচ্ছি। কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা.এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে বর্তমানে সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। সব উপজেলায় হু হু করে বাড়ছে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। লকডাউনের মধ্যেও কেউ কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে রাস্তাঘাটে চলাচল করছেন। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। ফলে লকডাউনের সুফল মিলছে না। জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার প্রবণতার কারণে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। করোনার সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ কঠিন হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। মানুষকে সচেতন করতে মাঠে নেমে কাজ করা হচ্ছে। আমি নিজেও বিভিন্ন স্থানে ঘুরে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছি। এ ছাড়া বিধিনিষেধ প্রতিপালনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। তারা লকডাউন কার্যকর করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।

Comments (0)
Add Comment