কালীগঞ্জে বিষাক্ত তামাক চাষে ঝুঁকছে কৃষক

শিপলু জামান: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় বিগত বছরের তুলনায় তামাক চাষ এ বছর কয়েক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার মালিয়াট, পাঁচকাহুনিয়া এবং পারখির্দ্দা গ্রামে গত বছর ২ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হলেও এ বছর তা ১০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন ক্ষতিকর তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব অনেক চাষির শরীরে দেখা দিলেও অধিক লাভের আশায় এ পেশা আকড়ে ধরে রেখেছেন তামাক চাষিরা।
সরজমিনে কালীগঞ্জ উপজেলার মালিয়াট, পাঁচকাহুনিয়া ও পারখির্দ্দা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে রোপণ করা অধিকাংশ তামাক গাছ ১৪-১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত উচ্চতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তামাকের বিষাক্ত সবুজ পাতার সমারোহে ভরে আছে গ্রামগুলোর মাঠ। এখানকার অধিকাংশ মানুষ তামাক চাষের সাথে সম্পৃক্ত। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলে তামাকের পাতা সংগ্রহ এবং তা আগুনের তাপে শুকানোর কাজ। সে সময় দেখা গেছে তামাক চাষিরা তামাক পাতা আগুনের তাপে শুকানোর জন্য বাড়িতে বাড়িতে মাচা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তামাক উৎপাদনের আগে কোম্পানিগুলোর দাম নির্ধারণ, বিক্রয়ের নিশ্চয়তা, চাষের জন্য সুদ মুক্ত ঋণের কারণে চাষিরা তামাক উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন প্রতি বিঘাতে তামাক উৎপাদন হয় ৫শ-৬শ কেজি। যার প্রতি কেজি বাজার মূল্য ২২৬-২৫০ টাকা পর্যন্ত। সে হিসাবে প্রতি বিঘায় এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত তামাক পাতা বিক্রি করা সম্ভব হয়।
উপজেলার পাঁচকাহুনিয়া গ্রামের তামাক চাষি ও ক্যান্সার আক্রান্ত নান্নু মীর জানান, আমি এ বছর ৬ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছি। আমার তিন ছেলে-মেয়ে। বড় ছেলে বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র, ছোট ছেলে কলেজে পড়ে আর মেয়ে স্কুলে। তারা আমাকে তামাক চাষ করতে নিষেধ করে। তবে আমার কিছু করার নেই। অন্য ফসলের উপার্জনে আমার সংসার চালানো সম্ভব না। পাঁচকাহুনিয়া গ্রামের নান্নু মীরের মত একই গ্রামের অসীম কুমার সরকার ৮ বিঘা, প্রশান্ত কুমার রায় ৫ বিঘা, উত্তম কুমার রায় ৫ বিঘা, জাকির হোসেন ৪ বিঘা জমিতে এ বছর তামাক চাষ করেছেন। এছাড়া পারখির্দ্দা গ্রামের সোহাগ হোসেন উপজেলায় সর্বচ্চো ১৮ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছেন। তাছাড়া মালিয়াট গ্রামের অনেক চাষি তামাক চাষ করেছেন এ বছর।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এ উপজেলায় সর্বোচ্চ ২৫ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছিল। বিগত কয়েক বছর তামাকের চাষ তলানীতে নামলেও বিভিন্ন তামাকজাত কোম্পানির লোভনীয় প্রস্তাবে তামাক চাষ আবার বাড়তে শুরু করেছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি জানান, তামাক চাষে কৃষকদের আমরা বরাবরই নিরুৎসাহিত করে আসছি। তামাক চাষের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আমরা মাঠ দিবস এবং বিভিন্ন সভা সেমিনারে কৃষকদের মাঝে তুলে ধরছি। কৃষকদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি তামাক চাষের পরিবর্তে উচ্চমূল্যের ফসল চাষাবাদের জন্য।