আলমডাঙ্গার সনাতনে চোর সন্দেহে নির্মমভাবে পেটানো হলো অজ্ঞাত বৃদ্ধকে 

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলায় গরু চোর সন্দেহে অজ্ঞাত বৃদ্ধকে আটকের পর গণধোলাই দিয়েছে গ্রামবাসী। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে উপজেলার আইলহাস ইউনিয়নের সোনাতন গ্রামে এঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘোলদাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বৃদ্ধকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। বৃদ্ধের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।

পুলিশ বলছে, প্রাথমিক তদন্তে ওই বৃদ্ধ পুলিশের সন্দেহের তালিকায় নেই। পরিচয় শনাক্তের পর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনজীবিরা বলছেন, চোর সন্দেহ তো দূরের কথা, চোর নিশ্চিত হলেও কাউকে মারধর করা যাবে না। এটা আইনলঙ্ঘনের সামিল।

প্রত্যক্ষদর্শী সোনাতন গ্রামে মিন্টু দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, রাত সাড়ে ১২ টার দিকে দেখতে পায় এক ব্যক্তি আমার বাড়ির সামনে ঝোপের মধ্যে থেকে চলে যাচ্ছে। এসময় একটি গরুকেও দৌড়ে চলে যেতে দেখে আমি চিৎকার দিই। পরে গ্রামবাসী ওই ব্যক্তিকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে হস্তান্তর করে।

ওই ব্যক্তি গরু ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরু দৌড়ে রাস্তার ওপর একাই চলে যেতে দেখি। আর এই সময় ওই ব্যক্তিকে ঝোপের মধ্যে থেকে বের হতে দেখি। কয়েকদিন যাবত গ্রামে গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। তাই গরু চোর সন্দেহে আমি চিৎকার করলে গ্রামবাসী এসে তাকে মারধর করে। এসময় ওই ব্যক্তির কাছে পরিচয় জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, আসলে মারধর করা ঠিক হয়নি। গ্রামবাসীরা মারধর করলেও আমি একা কিছু করতে পারি না। আগামীকাল (আজ) বৃদ্ধকে দেখতে হাসপাতালে যাবো। সেই সাথে তার চিকিৎসা নিশ্চিত করবো আমরা।

ঘোলদাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রাজু আহমেদ দৈনিক মাথভাঙ্গাকে বলেন, রাতে আটকের পর গরু চোর সন্দেহে সনাতনপুর গ্রামবাসী গণধোলাই দিয়েছে বৃদ্ধকে। খবর পেয়ে রাত দেড়টার দিকে সোনাতন গ্রাম থেকে বৃদ্ধকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। বৃদ্ধের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। তিনি কথাও বলতে পারছেন না। কার বাড়িতে গরু চুরি করতে গিয়েছিলো জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, কোথায়, কার বাড়িতে চুরি করতে গিয়েছিলো এটা আমার জানা নেই। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।  এদিকে ওই বৃদ্ধ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি (পুরুষ) ওয়ার্ডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় একা একাই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহরাব হোসেন দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, রাত সাড়ে ৩ টার দিকে আনুমানিক ৬০ বছরের এক বৃদ্ধকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ সদস্যরা। বৃদ্ধের মাথা বাদে শরীরে সব স্থানে শক্ত কোনো লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়েছে। এমনকি দুই পায়ের পাতা পর্যন্ত ফুলে গেছে। তিনি শঙ্কামুক্ত নয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সার্জারী ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ভবঘুরে টাইপের লোক মনে হয়েছে। আমাদের সন্দেহের তালিকার মধ্যে পড়ছে না। হতে পারে বৃদ্ধটি যাওয়ার সময় গরু গোয়াল ঘর থেকে ছুটে গেছে। এ কারণে গ্রামবাসী চোর সন্দেহে মারধর করেছে। এমনও হতে পারে চুরি করতে গিয়েছিলো। তার সঙ্গীরা পালিয়ে গেছে, সে ধরা পড়েছে। আমরা সব ঠিক বিবেচনা করে তদন্ত করছি। তার পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। পরিচয় পাওয়া গেলে বৃদ্ধের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার বলেছেন, চোর সন্দেহ তো দূরের কথা, চোর নিশ্চিত হলেও কাউকে মারধর করা যাবে না। এটা আইনলঙ্ঘন। তাকে নিকটস্থ থানায় হস্তান্তর করতে হবে।

Comments (0)
Add Comment