রহমান মুকুল: আলমডাঙ্গা বিএনপির মহীরুহ কিংবদন্তিতুল্য জনপ্রিয় নেতা হিসেবে শহিদুল কাউনাইন টিলু দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ফুঁসফুসে সংক্রমণে ভুগছেন। আজ ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতের ভেলরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভেলরে অবস্থিত সিএমসি হাসপাতালে ভর্তি করে তাঁকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসাধীন রাখা হবে। গত ১০/১২দিন ধরে প্রিয় নেতাকে দেখতে ও সান্নিধ্যে কিছুটা মুহূর্ত কাটাতে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন ভক্তরা। শহিদুল ইসলাম টিলু বিএনপির আর দশজন নেতার মতো মামুলি কোন নেতা নন, এতদাঞ্চলের তুমুল জনপ্রিয় নেতা। আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা নিয়ে দশকের পর দশক ধরে তিনি এই জনপদের মানুষকে মুগ্ধতায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত রেখেছেন। নিজকে গড়ে তুলেছেন এলাকার আনপ্যারালাল কিংবদন্তিতে। হয়ে উঠেছেন সকলের প্রিয়তম ‘ওস্তাদ’। যারপরনাই সরল সোজা মানুষটা নিজেকে তৈরি করেছেন ‘আমি তোমাদেরই লোক’ রূপে। নির্দ্বিধায় বলা যায়, তিনি হচ্ছেন এই অঞ্চলের রাজনৈতিক হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালা। টিলু ওস্তাদকে বলা যায় চির বিরোধীদলীয় নেতা। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও তিনি ক্ষমতার পাদপ্রদীপের নীচে কখনও ঠাঁয় নেননি। ভোটের মাঠে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নিরলস পরিশ্রমকারী টিলু ওস্তাদকে নির্বাচনের পর তাকে দেখা যেত বিরোধি শিবিরে। অত্যন্ত সহজ সরল টিলু ওস্তাদ সারাজীবন নিজ দলীয় এমপির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, নিয়েছেন সাধারণ মানুষের পক্ষে। অনায়াসে দলীয় ক্ষমতার সকল সুবিধা ও সুযোগ অগ্রাহ্য করেছেন। দীর্ঘ বছর ধরে আলমডাঙ্গাতে বিএনপির গ্রুপিং। দুই বা তিন ভাগেও বিভক্ত থাকে। কিন্তু সকল গ্রুপের নেতাকর্মীর নিকটই তিনি ওস্তাদ হিসেবেই মান্য হতেন। বর্তমান বিএনপির (শরিফ গ্রুপ হিসেবে খ্যাত) উপজেলা কমিটি গঠণের পর সদ্য সভাপতি প্রয়াত আব্দুল জব্বার ভাই আমাকে ও সাংবাদিক ফিরোজকে ডাকলেন চায়ের নিমন্ত্রণে। উপস্থিত হলে জিজ্ঞেস করলেম, ‘কমিটি কেমন হল?’ আমি স্বভাবসুলভভাবে উত্তর দিলাম যে ভালো হয়নি খুব একটা। তিনি বললেন, ‘একটা গল্প শোন। শ্রীরামপুরের আবদার আমার ফুফাতো ভাই। তাকে ইউনিয়ন সভাপতি করে কমিটি গঠন করব। বার বার তাকে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। তার বাড়িতে গিয়ে একসাথে খেতে বসে ওয়াদা করিয়েছি। কমিটি গঠনের সময় তাকে আর পায়নি। ফোন বন্ধ। পরে শুনি যে, টিলু ওস্তাদ তাকে ফোন করে নিষেধ করেছেন। তাই ফুফাত ভাই ওয়াদা রাখেন নি। এবার বোঝ যে টিলু ওস্তাদকে মাইনাস করে কমিটি গঠন করা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিলো। পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ওল্টু বলেন, টিলু ভাই সকলের ওস্তাদ। তিনি আমাদের সঙ্গে রাজনীতি করলেও ওস্তাদ থাকবেন৷ না করলেও ওস্তাদের সম্মান পাবেন। তিনি অসুস্থ। ইন্ডিয়া যাবেন। দেখা করে এসেছি। তার জন্য দু’আ করি। আল্লাহ তায়ালা যেন দ্রুত সুস্থ করে দেন। অসুস্থ টিলু ওস্তাদকে দেখতে গিয়ে প্রতিদিন নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছুটে আসছেন। ডাক্তারের পরামর্শ অমান্য করেই তাকে তাদের সাথে আলাপচারিতায় মেতে থাকতে দেখা গেছে। সাধারণ নেতাকর্মী যেন তার অক্সিজেন। উপজেলার কোন কোন গ্রামে কে কে ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন, কে কে যাবেন তা যেন ওস্তাদের মুখস্ত। তাদের চিকিৎসার খোঁজ নিচ্ছিলেন এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মীদের নিকট থেকে। এই জনপদের প্রতিটা মানুষ যেন তার পরিবারের অংশ। এতটা আপনার ওস্তাদকে দেখতে এসে অনেককেই অশ্রুসিক্ত অবস্থায় দেখা গেছে। এমন পরিস্থিতে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় কবিতা স্মরণে এল।