দামুড়হুদার হোগলডাঙ্গায় ব্যবসায়ীদের হালখাতায় পুলিশের হস্তক্ষেপ

কিল খেয়ে কিল চুরি : টাকা দিয়ে পেলো হালখাতার অনুমতি

দামুড়হুদা ব্যুরো: দামুড়হুদার হোগলডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে হালখাতার নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেছেন, করোনা ভাইরাসের অজুহাতে হালখাতা করতে না দেয়ার ঘোষণার পর পুলিশকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে হালখাতা করতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
এলাকা সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের বেশকিছু ব্যবসায়ী চলতি বোশেখ মাসে হালখাতার প্রস্তুতি নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে হোগলডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শফিকুল ইসলাম প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান এবং ব্যবসায়ীদের বলেন করোনা ভাইরাসের কারণে হালখাতা করা যাবে না। করতে হলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। কিভাবে করতে হবে তা আমি শিখিয়ে দেবো। পরবর্তীতে তিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে হালখাতার অনুমতি দেন। এক পর্যায়ে বিষয়টি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য যাওয়া হয় হোগলডাঙ্গা গ্রামে। টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অধিকাংশ ব্যবসায়ী ভয়ে প্রথমে মুখ খোলেননি। পরে তারা বলেছেন ওনি দোকানে এসেছেন এটা ঠিক। কিন্তু আমরা মিষ্টি খেতে দিয়েছি। দুই-একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, যারা যারা হালখাতা করেছেন সবাইকে টাকা দেয়া লেগেছে। টাকা ছাড়া কেউ হালখাতা করতে পারেনি। টাকা দিলেও এখন ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। কথায় আছে না কিল খেয়ে কিল চুরি। বিষয়টি অনেকটা ওই রকম। একজনের কাছে ৫ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। তিনি এলাকার এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি গোপনে মিটিয়ে নেন। এভাবে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫ থকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। হোগলডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শফিকুল ইসলামের বিষয়ে এলাকাবাসী আরও জানান, গ্রামের এক ছোট শিশু পাপড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ওনার হাত থেকে সেও রেহাই পায়নি। তাকেও দিন ৩০ টাকা হিসেবে দিতে বলা হয়েছে । এ বিষয়ে হোগলডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো কাছে টাকা নিইনি। তবে কয়েক দোকানদার আমাকে মিষ্টি খেতে দিয়েছে। এটাতো দোষের কিছু না। এছাড়া যে অভিযোগ উঠেছে তা ওই দোকানদাররাই ছড়িয়েছে। তিনি বিষয়টি পরিস্কার করতে গিয়ে বলেন, এক দোকানদার হালখাতার কার্ড নিয়ে পাওনাদারের কাছে গিয়ে বলেছেন, হালখাতার কার্ড দিয়ে গেলাম, যা পাবো পুরো টাকা পরিশোধ করতে হবে। পুলিশকে টাকা দিয়ে হালখাতা করতে হচ্ছে এমন কথা কানে আসার পর আপনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি। এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আব্দুল খালেকের কাছে জানতে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে সত্যতা পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন ওখানে দুটি পক্ষ আছে। দোকান খোলা নিয়ে পুলিশের সাথে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে গ্রামবাসী পুলিশের উপর চড়াও হয়। এরই জের ধরে তারা এটা বলতে পারে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হোগলডাঙ্গা গ্রামে প্রায় ২০-২২ জন ব্যবসায়ী চলতি বোশেখ মাসে হালখাতা করেছেন। এলাকার সচেতন মহলের প্রশ্ন, করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের কোথায় হালখাতা করার সুযোগ না দেয়া হলেও এখানে কিভাবে ২০-২২ জন ব্যবসায়ী হালখাতা করলো। বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত আইসির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে পুলিশ সুপারের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকার ভূক্তভোগী মহল।

Comments (0)
Add Comment