মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর সদর উপজেলার দীঘিরপাড়া বেলেগাড়ি এলাকায় খড় চাষ করে দু’শতাধিক পরিবার তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। খড় থেকে বাড়–ন তৈরি ও পান বরজে বিক্রি করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। শুধু তাই নয়, খড় চাষ ও বিক্রিতে নারী-পুরুষ সমান তালে হয়েছেন স্বাবলম্বী। সন্তানদেরকেও পাঠাচ্ছেন স্কুলে।
দীঘিরপাড়া বেলেগাড়ির মাঠে ওই গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন ২ বিঘা ৭ কাঠা, আশরাফ ৪ বিঘা, ইস্রাফিল ৩ বিঘা, মিকাইল ৪ বিঘা ও তাহাজুল ৪ বিঘা জমিতে খড়ের চাষ করেছেন। এ বছরও বেলেগাড়ি মাঠে নতুন ৫০ বিঘাসহ প্রায় দুই শত বিঘা জমিতে খড়ের চাষ হয়েছে। এছাড়া আশে-পাশের মাঠে আরও প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে খড় চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেনসহ স্থানীয় কয়েকজন খড় চাষি।
জাহাঙ্গীর হোসেনসহ এলাকার আরও কয়েকজন খড় চাষি জানান, এলাকার অধিকাংশ চাষি নিজ জমিতে খড় চাষ করেছেন। তবে অনেকে ২০ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য প্রতি বিঘা জমি লিজ নিয়েও খড় চাষ করছেন। তারা আরও জানান, প্রতি বিঘা জমিতে খড় চাষ করতে প্রথমবার ২০ হাজার টাকা খরচ হয় এবং একই জমি থেকে পরপর চার বছর খড় সংগ্রহ করা সম্ভব। এছাড়াও শীত মৌসুমে খড় কাটা না গেলেও প্রতি বছরের গ্রীষ্ম মৌসুমে চারবার খড় কাটা যায়। প্রথমবার খড় কাটার পরের তিনবার খড়ের যতœ নিতে প্রতিবার তিন-চার হাজার টাকা করে খরচ হয়। পান বরজের জন্য প্রতিমণ খড় বিক্রি হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকায়। আর প্রতি বছর এক বিঘা জমির খড় বিক্রি হয় প্রায় দেড় লাখ টাকায়। চাষীরা আরও জানান, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ জেলার খড় চুয়াডাঙ্গা ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে। লেবারের খড় গ্রেডিং এর পাশাপাশি গৃহিনী আরজিয়াকে রোদে খড় শুকাতে দেখা গেছে। তিনি জানালেন- খড় কাটা, শুকানো ও গ্রেডিং করতে প্রতিটি লেবারকে দিন হাজিরা দিতে হয় পাঁচশ টাকা। তাই এ গ্রামের নারী-পুরুষ সকলে মিলে এ কাজ করে থাকি। তিনি আরও বলেন- এ বছর আমরা একবিঘা সাত কাঠা জমিতে খড় চাষ করে তিনবার কেটে বিক্রি করে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা পেয়েছি। এ বছর আরও একবার খড় বিক্রি হবে। এছাড়া অল্প অল্প খরচ করে আরও তিন বছর ওই জমি থেকে খড় পাবো। তিনি আরও বলেন, গত ২০ বছরে এ গ্রামের মানুষের জীবন চিত্র পাল্টে গেছে। প্রায় প্রতিটি কাঁচা বাড়ি পাকা হয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে একটি করে মোটর সাইকেল হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজে পড়াচ্ছে সকলেই। মেয়েদের ভালো ঘর-বর দেখে বিয়ে দিতে পারছে।
একই গ্রামের খড় গ্রেডিংয়ের লেবার সেলিম রেজা ও সাদ্দাম হোসেন জানান, পাঁচশত টাকা (খরচ) দিন হাজিরায় কাজ করছি। এ গ্রামের প্রায় দুইশত লোকের খড় চাষ আছে। আবার লেবার খেটে দিন চালাচ্ছে আশপাশের গ্রামের আরও প্রায় দুই-তিন শত লোক। বছরের গ্রীষ্ম মৌসুমে এ গ্রামে সহজে কাজ পাওয়া যায়।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, মেহেরপুর শহরের উপকন্ঠ দীঘিরপাড়া বেলেগাড়ি এলাকায় প্রচুর পরিমানে খড় চাষ হচ্ছে। ঘর ছাউনি, ঘর ঝাড়–র বাড়–ন তৈরি এবং পান বরজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে খড়ের চাহিদা প্রচুর। তাই মূল্য বেশি হওয়ায় এ এলাকার চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। সাথে সাথে এলাকায় খড় চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।