মেহেরপুরের গাংনী থেকে সন্তানসহ সেই শরিফা খাতুন ফিরেছে তার আপন ঠিকানায়

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনীর দেবীপুর গ্রামে সন্তান প্রসব করা পাগলীর পরিচয় মিলেছে। তার প্রকৃত নাম শরিফা খাতুন। তিনি নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার কুলিয়াটি গ্রামের মৃত হান্নান মিয়ার মেয়ে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নজরে আসে শরিফার পরিবারের। অবশেষে গতকাল বুধবার সকালে শরিফার আত্মীয় স্বজনদের পরিচয় শনাক্ত ও নিশ্চিত হয়ে উপজেলা প্রশাসন তাকে হস্তান্তর করে। শরিফাকে হস্তান্তরের সময় গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিতম সাহা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীমসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
গৃহকর্তা মহসিন আলী জানান, মাসখানেক আগে রাস্তায় ঘুরছিলো পাগলীটি। ছেলেমেয়রা উত্ত্যক্ত করছিলো তাকে। বিষয়টি দেখে পাগলীকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে তার পরিবারের লোকজন। শারিরীক গঠন দেখে সন্তান সম্ভবা বুঝতে পেরে স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। গত (১২ অক্টেবর) ওই পাগলী ফুটফুটে সন্তান জন্ম দেন।
মহসিন আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, মহসিন আলীর স্ত্রী জোসনা খাতুন পাগলীর ফুটফুটে কন্যা ফাতেমার খেলনা আর জিনিসপত্র গোছাচ্ছিলেন আর চোখের জল ফেলছেন। সেই সাথে শরিফার আত্মীয় স্বজনকে বাচ্চার যতœ নেয়ার আবদার করছিলেন। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, গেল এক মাস নিজের সন্তানের মতো করে তাদেরকে দেখভাল করছেন। কোন ত্রুটি রাখেননি তাদের প্রতি। বাড়িটি ছিল আনন্দে। অভাবের সংসারেও ছিল বেশ হাসি খুশি। পাগলীকে বিদায় জানাতে কষ্ট হলেও তার পরিবারের কাছে দিতে পারছেন এটাই বড় শান্তনা।
শরিফা খাতুনের চাচা মহব্বত মন্ডল জানান, শরিফা খাতুনের ২য় সন্তান জন্ম দেয়ার পর মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। ছয় বছর যাবত চিকিৎসা করেও কোন লাভ হয়নি। এক বছর আগে বাসা থেকে বের হন। অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি তাকে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে দৃষ্টিগোচর হয়। পরে সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করে শরিফাকে নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়।
শরিফা খাতুনের ফুফাতো ভাই আমিনুল মন্ডল জানান, শরিফা খাতুন ও তার পরিবার একদম অসহায়। তাকে নিতে আসার টাকাটা পর্যন্ত ছিলো না। পরে সাংবাদিকদের দেয়া টাকায় পথ খরচ দিয়ে শরিফাকে নেয়ার জন্য আসা হয়।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আরশাদ আলী জানান, বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থান পরিদর্শন করা হয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রসাশক মহোদয়কে জানানো হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাগলীকে আদালতের মাধ্যমে ভবঘুরে পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রেরণ করা হবে। ইতোমধ্যে পাগলীর পরিবারের লোকজন জানতে পেরে তাকে নিতে আসেন। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাতে হস্তান্তর করা হয়। মা ও শিশু সন্তানকে হস্তান্তরের সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতের কাপড় ও নগদ টাকা সহায়তা দেয়া হয়।