মহাষ্টমীতে আজ কুমারী পূজা

স্টাফ রিপোর্টার: শারদীয় আবেশ লেগে আছে প্রকৃতি জুড়ে। নীলাকাশ, সাদা মেঘের ভেলা, কাশফুলের সমারোহ। শিউলি ঝরা প্রভাত। ঘাসের পরে শিশির বিন্দু। রাত গভীরে শীত শীত আমেজ। তার মধ্যে পূজাম-পগুলো মুখরিত ঢাকের বাদ্য আর উলুধ্বনি-শঙ্খের আওয়াজে। হিন্দুদের উৎসবের জোয়ার বইছে চারদিকে। গতকাল থেকেই মন্দিরগুলোতে ঠাকুর দর্শনের জন্য দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। হাজার হাজার হিন্দু ভক্ত-দর্শনার্থী ঢাকেশ্বরী মন্দির, তাঁতীবাজার, জগন্নাথ হল, শাঁখারিবাজার, সিদ্ধেশ্বরী, বনানীসহ বিভিন্ন মন্দিরে দুর্গাকে দর্শন ও প্রার্থনা-তর্পণে যাচ্ছেন। মুখরিত হয়ে উঠছে প্রতিটি মন্দির প্রাঙ্গণ। গতকাল মহাসপ্তমী বিহিত থেকেই মূলত উৎসবের জোয়ার নামল পূজায়। আর মাত্র দুটি দিবানিশির প্রহর পেরুলেই উমার কৈলাশ গমন। ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ’ এই সুর এখন ভক্ত প্রাণে। আজ শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমী। এক বালিকার মধ্যে শুদ্ধ নারী রূপ চিন্তা করে হিন্দু ধর্মীরা তাকে ‘দেবী’ জ্ঞানে পূজা করবে। প্রথা ও নিরাপত্তার কারণে মেয়েটির নাম এবং পরিচয় পূজা সূচনার পূর্বাবধি প্রকাশ করা হয় না। সব নারীতে মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার লক্ষ্য। পাঁচ থেকে সাত বছরের বালিকাকে সাজানো হবে কুমারী মাতৃকারূপে।
মেরুতন্ত্রে বলা আছে, সর্বকামনা সিদ্ধির জন্য ব্রাহ্মণ কন্যা, যশোলাভের জন্য ক্ষত্রিয় কন্যা, ধনলাভের জন্য বৈশ্য কন্যা ও পুত্রলাভের জন্য শূদ্রকুল জাত কন্যা কুমারী পূজার জন্য যোগ্য। গুণ ও কর্ম অনুসারেই এই জাতি বা বর্ণ নির্ধারিত হয়। সেজন্যই প্রচলিত শাস্ত্র অনুসারে, বিভিন্ন মিশন ও মন্দিরগুলোতে সর্বমঙ্গলের জন্য ব্রাহ্মণ কন্যাকেই দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। সব নারীর মধ্যেই বিরাজিত রয়েছে দেবীশক্তি। তবে কুমারী রূপেই মা দুর্গা বিশেষভাবে প্রকটিত হয়েছিলেন। তাই কুমারী রূপে নারীকে দেবীজ্ঞানে সম্মান জানানোর একটি হচ্ছে ‘কুমারী পূজা’। ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ শুরু করেছিলেন বেলুড়মঠের দুর্গাপূজো। সেই বছরই কুমারী পূজোর প্রচলন করেছিলেন তিনি।
এদিকে দুর্গোৎসবে গতকাল ছিল মহাসপ্তমী। এদিন ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন শেষে দেবীর মহাসপ্তমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজাশেষে যথারীতি অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতির আয়োজন ছিল। বিভিন্ন মন্দিরের পুরোহিতরা জানান, দুর্গাকে বিশেষ রীতি অনুসারে স্নান করানো হয়। দুর্গার প্রতিবিম্ব আয়নায় ফেলে বিশেষ ধর্মীয় রীতিতে তা স্নান করানোর পর বস্ত্র ও নানা উপচারে মায়ের পূজা দেয়া হয়। হিন্দু ধর্মমতে, এবার দেবী এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে আর যাবেন দোলায় চড়ে। এ বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ১১৮টি ম-পে হচ্ছে দুর্গাপূজা।

Comments (0)
Add Comment