বৈষম্যের শিকার কেরু উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক

দর্শনা অফিস: কেরু উচ্চ বিদ্যালয় অত্র অঞ্চলের একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি চুয়ডাঙ্গা জেলার উল্লেখযোগ্য স্কুলগুলোর মধ্যে একটি। বিদ্যালয়টি ১৯৪৭ সালে স্থাপিত হয়ে অধ্যবধি পিইসি, জেএসসি এবং এসএসসিতে ভালো ফলাফল করে আসছে। বিদ্যালয়টি বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশনের অধীন কেরু এ্যা- কোং (বাংলাদেশ) লি. দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। কেরু এ্যা- কোং (বাংলাদেশ) লি. বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ চিনি শিল্প এবং এশিয়ার ২য় বৃহত্তম চিনি শিল্প।
প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে কেরু এ্যা- কোং (বাংলাদেশ) লি. একটি লাভজনক চিনি শিল্প। এই শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। কিন্তু এই শিল্পের অধীন কেরু উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ চরম বৈষম্যের শিকার। যেহেতু চিনির কাঁচামাল ইক্ষু সেহেতু মিলটির চিনি ইউনিটটি ইক্ষু কর্তনের সাথে জড়িত। এই ইউনিটটি সাধারণত শীত মৌসুমে চালু হয়। তখন কেরুতে কিছু অতিরিক্ত শ্রমিক-কর্মচারীর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই সময় চিনি উৎপাদনের নিমিত্তে ক্রয়কৃত কাঁচামাল ইক্ষু পরিমাপের জন্য ৪ (চার) টি স্কেল চালু থাকে। একটিতে ট্রাক ও ট্রাক্টরের আখ ওজন নেয়া হয় (৪০ টন), একটিতে ভর্তি পাওয়ার ট্রলি ওজন করা হয় (২নং স্কেল) একটিতে খালি পাওয়ার ট্রলি ওজন করা হয় (৩নং স্কেল) এবং আরেকটিতে ভর্তি ও খালি গরুর গাড়ী ওজন করা হয় (১নং স্কেল)। এই সকল স্কেলে সিআইসির নেতৃত্বে কিছু কর্মচারী কাজ করেন। তাদের ওজন সঠিকভাবে নেয়া হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য এবং তা রেকর্ড করার জন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে একজন করে চেকিং কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়। প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকে এই ডিউটিটা কর্মকর্তারাই করে আসছিলেন। তবে কোন একসময় কর্মকর্তা স্বল্পতার কারণ দেখিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে থেকে এই ডিউটিটা ৪০ টন নামক স্কেলে ১০ দিন অন্তর অন্তর দেয়া হতো। কিন্তু আশির দশকে তৎকালীন ম্যানেজমেন্ট শিক্ষকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক এই চেকিং ডিউটি হতে শিক্ষকদের অব্যাহতি দেন। তারপর থেকে দীর্ঘদিন শিক্ষকরা এই ডিউটি হতে বিরত আছেন। কিন্তু ২০১৪ সালের পর মো. মনোয়ার হোসেন মহাব্যবস্থাপকের (প্রশাসন) দায়িত্ব পাওয়ার পর পুনরায় শিক্ষকদের চেকিং ডিউটি দেয়া শুরু করেন। শিক্ষকরা চেকিং ডিউটি থেকে অব্যহতি পাওয়ার জন্য বারংবার অনুরোধ করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। তিনি শিক্ষকদের সম্মানের কথা চিন্তা তো করেননি বরং এবার তিনি সকল স্কেলেই ডিউটি প্রদান করেন। শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল বারবার চেষ্টা করেছেন কিন্তু না ইউনিয়ন, না ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি নিয়ে সহযোগিতা করেছে। শিক্ষকদের ট্রেড ইউনিয়নে ভোটাধিকার নেই এই অজুহাতে ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে কোন কর্ণপাত করে না। শুধুমাত্র তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই বিদ্যালয়ে যায় বা শিক্ষকদের সাথে কথা বলে। শিক্ষকদের কোন উপকারে তারা কখনো আসে না বরং সুযোগ পেলে শ্রমিক স্বার্থের জন্য শিক্ষকদের অপমান করতেও ছাড়ে না।
অন্যদিকে কর্মকর্তারা মনে করেন শিক্ষকরা তো কর্মকর্তা না। সুতরাং তারা কেন তাদের মতো সুযোগ-সুবিধা পাবে? তাদের সুযোগ-সুবিধার ভাগ দেবে না আবার কাজের বোঝার ভাগ দেবে। শুরুতে চেকিং ডিউটি ছিল ৪০ টন নামক স্কেলে। পরবর্তীতে কিছু কর্মকতা আপত্তি করেন এখানে কর্মকর্তারা ডিউটি করবে। তাই শিক্ষকদের সরিয়ে অন্য স্কেলে ডিউটি দিতে হবে। একারণে শিক্ষকদের ওখান থেকে সরিয়ে ১নং, ২নং ও ৩নং স্কেলে দায়িত্ব দেয়া হয় যার পরিবেশ ৪০ টন হতে নি¤œমানের।
এখানেই শেষ নয়, বর্তমানে বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যিনি নিজেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দাবি করেন, বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তার ডিউটিটা বাতিল করে নেন এবং সহকারী শিক্ষকদের ওপর তার ভাগের ডিউটিটা চাপিয়ে দেন। অথচ অন্যান্য চিনিকলের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদ্বয় এই ডিউটিটা করেন (যেমন- উত্তরবঙ্গ চিনিকল) এবং সহকারী শিক্ষকরা ডিউটিটা করেন না। আরো পরিতাপের বিষয় হচ্ছে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এমডি ও এডিএম’র কাছে ভালো হওয়ার জন্য শিক্ষকদের ২য় শিফটে বিকেল ৪টা হতে রাত ১২টা (গাড়ী শেষ না হওয়া পর্যন্ত) ডিউটি দিতে বলেন। ফলে শিক্ষকদের সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত স্কুলে ৬-৭ টা ক্লাস নিতে হয় এবং বিকেল হতে রাত ১২টা (গাড়ী শেষ না হওয়া পর্যন্ত) ২য় শিফটে চেকিং ডিউটি করতে হয়। আবার কখনো কখনো রাত ২-৩ টা পর্যন্ত ডিউটি করে পরদিন সকাল ৮টায় স্কুলে যেতে হয়।
শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা যে স্কেলে ডিউটি করে সেখানে আদৌ কোন অফিসার কাজ করেন না। সেখানে সবাই কর্মচারী। অথচ এই ডিউটিটা কর্মকর্তাদের। তাহলে প্রশ্ন কেরুতে কি শিক্ষকরা কর্মচারী? শিক্ষকদের কথায় আরো বলতে হয় অন্যান্য বেশ কিছু চিনিকলের শিক্ষকরা এই চেকিং ডিউটি করেন না। যেমন- জিল বাংলা চিনি কল। শিক্ষকরা এই বৈষম্য থেকে মুক্তি চায়। তাদের দাবি ম্যানেজমেন্ট চেকিং ডিউটি থেকে তাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে তাদের সম্মান সমাজে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করুক।