পরকীয়া ও বিয়ে, সমালোচনায় গাংনীর জোড়পুকুরিয়া হাইস্কুলের দুই শিক্ষক

 

গাংনী প্রতিনিধি: দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করাকালীণ সময়ে প্রেম, পরকীয়া ও বিয়ে নিয়ে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছেন মেহেরপুরের গাংনীর জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল হান্নান ও নুসরাত সুলতানা। প্রথম সংসার ও স্ত্রী সন্তানদের ফেলে পড়ন্ত বয়সে তাদের এই কর্মকা-ে একটি সংসার ভেঙেছে আর একটি সংসার ভাঙতে বসেছে। বিষয়টি যেমন এলাকায় মুখরোচক কাহিনীর সৃষ্টি করেছে তেমনই ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ হয়েছে প্রতিষ্ঠানের। এমনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন জোড়পুকুরিয়া গ্রামের নানা শ্রেণির মানুষ।

জানা গেছে, আব্দুল হান্নানের বাড়ি জোড়পুকুরিয়া গ্রামে আর ওই গ্রামেরই কলেজ শিক্ষক জাবলুন্নবীর স্ত্রী ছিলেন নুসরাত সুলতানা। হান্নান ও নুসরাত সহকারী শিক্ষক হিসেবে জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত। চাকরীর সুবাদে একই সাথে বিদ্যালয়ে যাতায়াত ও কোনো প্রশিক্ষণ কিংবা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন দুজনে। এভাবে দুজনের মধ্যে প্রেম পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে বিষয়টি নজরে আসে জাবলুন্নবী ও তার পরিবারের।

জানা গেছে, স্কুল পড়–য়া দুই ছেলের মুখের দিকে চেয়ে স্ত্রীর পরকীয়া সহ্য করছিলেন কলেজ শিক্ষক জাবলুন্নবী। এ নিয়ে শ^শুর পরিবারের সদস্যদের সাথে দফায় দফায় কথা বলে সুধরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। দীর্ঘ সময় ধরে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন জাবলুন্নবী ও তার দুই ছেলে। স্ত্রীর পিতার পরিবারের পক্ষ থেকে তেমন সদুত্তর না পেয়ে আরও অশান্তিতে পড়েছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে দুই ছেলে আর পরিবারের সদস্যদের চাপে পড়ে স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন জাবলুন্নবী।

জাবলুন্নবীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চেহারায় সুদর্শন আর ন¤্র ভদ্র আচরণের একজন মানুষ জাবলুন্নবী। পারিবারিকভাবে সম্মানীয় বংশ ও শিক্ষিত পরিবারের সদস্য। সুনামের সাথে দীর্ঘদিন চাকরী করছেন কলেজে। স্ত্রীর পরিবারও সম্ভ্রান্ত। প্রায় দেড়যুগ ধরে সংসার করছেন নুসরাত সুলতানার সাথে। জোড়পুকুরিয়া গ্রামেই তাদের কর্মস্থল। যা গ্রামের বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরত্বে নয়। গ্রামে রয়েছে থাকার মতো সুন্দর একটি বাড়ি। এরপরেও শুধুমাত্র স্ত্রীকে খুশি রাখতেই গাংনী শহরে বাসা ভাড়া করে থাকতেন তিনি। গাংনী ভাড়া বাসা থেকে দুজনে জোড়পুকুরিয়া গ্রামে স্কুল কলেজে শিক্ষকতা করতে যেতেন। এছাড়াও নুসরাত জাহানের শখ ও ইচ্ছে পূরণে তিনি সবসময় সচেষ্ট ছিলেন। এমন একটি সুখী দাম্পত্য জীবনে নুসরাত জাহানের পরকীয়া প্রেম যেনো বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই অবস্থা ছিলো জাবলুন্নবী ও তার দুই ছেলের কাছে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে বুঝিয়ে শোধরানোর সব চেষ্ট যখন ব্যর্থ হয় তখন ডিভোর্স দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবুও আব্দুল হান্নানের পরকীয়া প্রেমের আসক্তি কমেনি। শেষ পর্যন্ত ডিভোর্স হলে আব্দুল হান্নানকে বিয়ে করে পরকীয়া প্রেমের ষোলকলা পূর্ণ করেছেন সহকারী শিক্ষক নুসরাত জাহানা। যা খুবই দুঃখজনক ও দৃষ্টিকটু বলে মন্তব্য এলাকার মানুষের। একজন শিক্ষক হয়ে প্রতিষ্ঠানের আরেক সহকর্মীর সাথে প্রেম পরকীয়া ও বিয়ে টক অব দ্য ভিলেজে পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে দুই শিক্ষকের পরকীয়ার বিষয়টি এলাকায় তীব্র সমালোনায় পরিণত হয়। বিদ্যালয়ে তাদের অবস্থান আর মেলামেশার বিষয়টি বাকা নজরে দেখতে থাকেন সহকর্মীরা। তাদের মাঝে যে পরকীয়া সম্পর্ক বিরাজ করছে তা নিশ্চিত হয় অনেকে। কিন্তু বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনোপ্রকার বাধা কিংবা শাসন করা হয়নি। ফলে বিদ্যালয়ের কর্মকালীন সময়ে বিনা বাধায় তারা চুটিয়ে পরকীয়া প্রেম চালিয়ে যান। এ বিষয়টিতেও মারাত্মকভাবে আহত হন জাবলুন্নবী। স্ত্রীকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করেও তিনি পরকীয়া থেকে ফেরাতে ব্যর্থ হন।

এদিকে জাবলুন্নবী ডিভোর্স দেয়ার পর বিষয়টি তেমন আলোচনায় ছিলো না। সম্প্রতি তারা দুজনে বিয়ে করেছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে আবারও তীব্র সমালোচনা শুরু হয় জোড়পুকুরিয়া গ্রামজুড়ে। আব্দুল হান্নান দাম্পত্য জীবনে এক ছেলের জনক।  ছেলে স্কুলপড়–য়া। এমন সময়ে দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি তার স্ত্রী। এ নিয়ে গেলো কিছুদিন ধরে সংসারে চরম অশান্তি শুরু হয়।

জানতে চাইলে বিয়ের বিষয়টি স্বীকার করেন আব্দুল হান্নান ও তার প্রথম স্ত্রী। সহকারী শিক্ষক নুসরাতকে তালাক দিয়ে প্রথম স্ত্রীর সাথেই সংসার করবেন আব্দুল হান্নানের এমন আশ^াসে সংসার সুখের আশা করছেন বলে জানান তার প্রথম স্ত্রী।

এদিকে গত কয়েক দিন আগে প্রচার হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ দেখা গেলেও নীরব রয়েছে প্রতিষ্ঠান। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা যখন বিদ্যালয়ে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। ঘর সংসার ছেড়ে আবারো বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন এমন নৈতিক অবক্ষয়ের ঘটনায়ও বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এলাকায়। চায়ের দোকান থেকে শুরু বিভিন্ন পাড়ামহল্লার গল্পের প্রধান শিরোনাম এখন দুই সহকারী শিক্ষকের পরকীয়া প্রেম অতঃপর বিয়ে।

শিক্ষক আব্দুল হান্নানের স্ত্রী দাবি করেন, তার স্বামীকে অনেকটা ব্ল্যাকমেইল করেছেন নুসরাত ম্যাডাম। শুধু হান্নানই নয়, স্বামী রেখে একাধিক পরকীয়া জড়িয়েছেন এই ম্যাডাম। বিদ্যালয়ের আরও রাঘব বোয়াল এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তারা পরকীয়া শেষে ফাঁসিয়ে দিয়ে গেছেন হান্নানকে। তাদের সাথে টেক্কা দিতে না পেরে অবশেষে হান্নানকে শিকার করেছেন। স্বামীর পক্ষে এমন সাফাই গাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করছি আব্দুল হান্নানের সাথে সংসার করার।

গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, সহকারী শিক্ষক আব্দুল হান্নান তিনটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীকে রেখে কুঞ্জুনগর গ্রামে বিয়ে করেন। সেই স্ত্রীর একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। এরই মাঝে পরকীয়ার মজে সহকর্মীকে বিয়ে করলেন তিনি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ক্রীড়া শিক্ষক আব্দুল হান্নান বিয়ে করার কথা স্বীকার করে বলেন, বিয়ে করা অপরাধ কি? দুজন শিক্ষক ঘর সংসার রেখে পরকীয়া প্রেমের মাধ্যমে বিয়ের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা কি শিক্ষা নেবে এমন প্রশ্ন করলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।

জানতে চাইলে এ ব্যাপারে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হাসান আল নুরানী জানান, বিষয়টি ওই দুই শিক্ষকের ব্যক্তিগত ও রুচির ব্যাপার। এতে কোনো কিছু করার নেই বিদ্যালয়ের।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক নুসরাত সুলতানার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Comments (0)
Add Comment