জুড়ানপুর প্রতিনিধি: দামুড়হুদার জুড়ানপুরে ২ সন্তানের জননী জোছনা খাতুন (৩০) নামের এক গৃহবধূকে বিষপান করিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক বলে দাবি জোছনার পরিবারের। গতকাল শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার সময় বিষ খেয়েছে বলে জোসনার স্বামী নওশাদ ও পরিবারের লোকজন জোছনাকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পাকস্থলী ওয়াস করে বিষ না উঠলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠায়। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে সাড়ে ৩টার সময় পিতারবাড়ি বিষ্ণুপুরে হস্তান্তর করেছে।
জানা গেছে, বিষ্ণুপুর পশ্চিমপাড়ার কাবিল হোসেনের মেয়ে জোছনা খাতুনের বিগত ৯বছর আগে বিয়ে জুড়ানপুর পূর্বপাড়ার বুধ হোসেনের ছেলে নওশাদ আলীর (৩৫) সাথে। তাদের সংসারে আছে ১ মেয়ে তামান্না খাতুন (৫) ও ১ ছেলে নাইম (৩)। বিয়ের পর থেকেই সংসারে বনিবনা খুব কম হয়েছে সংসারে অশান্তি লেগেই থাকে একের পর এক। গৃহবধূ নিহত জোছনা খাতুনকে প্রায়ই মারধর করতো এবং বাড়ি থেকে বের করে দিতো। জুড়ানপুর গ্রামের গণ্যমান্য লোকজনসহ মেম্বার এসে মীমাংসা করে আবার নিহত জোছনা খাতুনকে তার স্বামীর সংসারে ফিরিয়ে দিয়েছে অনেকবার। কিন্তু তারপরও হয়নি কোনো বনিবনা। হঠাৎ গতপরশু সন্ধ্যার সময় ঝামেলা হয় সংসারে। নিহত জোছনা খাতুন তার পিতাকে ফোন দিলে তার পিতা ও মাতা দুজনেই যায় জুড়ানপুর। পিতা-মাতার সাথে কথা বলতে দেয় না শ্বশুর-শাশুড়ি। এমনকি তার শ্বশুর বুধ ও শাশুড়ি মনোয়ারা, জোছনা খাতুনের পিতা কাবিলকেও মারতে যায়। এরপর কাবিল মেয়েরবাড়ি থেকে বিষ্ণুপুর নিজবাড়িতে ফিরে যায়। তারপর রাত আনুমানিক ১০টার দিকে নিহত জোছনা খাতুন তার পিতা কাবিলকে ফোন দেয় যে আমি হয়তো আর বেঁচে থাকবো না আমি না মারা গেলে এই সংসারে আর সুখ ফিরে আসবে না। সেই রাতেই রাত ৪টার দিকে বিষপান করে হত্যাচেষ্টা করা হয়; নিহত জোছনা খাতুনকে। তারপর শুরু হয় আত্মহত্যার নাটক। নিহত জোছনার শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলে জোছনা বিষ খেয়েছে এবং তাকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে সেখানে বিষ তোলার নাটক করা হয়। কিন্তু কোনো বিষ ওঠেনি। পরবর্তীতে চুয়াডাঙ্গা সদরের রেফার করে সেখানে জোছনা খাতুন মৃত অবস্থায় পৌঁছায়। তারপর নিহত জোছনা খাতুনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে তার পিতারবাড়ি বিষ্ণুপুরে পাঠানো হয়। মেয়ে তামান্না খাতুন (৫) ও ছেলে নাইমকে (৩) মায়ের লাশটুকু দেখতে বাধা প্রদান করে নিহত জোছনার শ্বশুর-শাশুড়ি।
এ বিষয়ে নিহতদের পিতা কাবিল হোসেন ও মাতা হীরা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে সংসারে সুখ পাইনি বিয়ের পর থেকে। বারবার মারধর করে তাড়িয়ে দিতো জামাই নওশাদ। শেষমেষ মেয়েটাকে মুখে বিষ দিয়ে মেরে ফেলেছে। এখন নাটক করে বলছে বিষ খেয়েছে। আমি নিজে বাদী হয়েছি আমার মেয়ে হত্যার। আমার নাতি নাতনি তাদের খোরপোষ ও জমি জমা সব কিছু পরিমাণ মতো না দিলে আমার মেয়ের লাশ দাফন হবে না।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সংবাদ আসে জুড়ানপুর গ্রামের একজন গৃহবধূ বিষপান করেছে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক সংবাদ পেয়ে মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ওয়াশ করার পর অবস্থার অবনতি হওয়ায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠায়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে নিয়ে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত্যুর ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের থেকে একটি অপমৃত্যুর অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছে। তবে যদি অভিযোগ পাই তবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসআই মাসুম রেজাকে মরদেহ সুরতহাল রিপোর্টের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জানাজা শেষে রাত ৮ সময় পশ্চিমপাড়া কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত একটি অঙ্গীকার নামার বলে আপস মীমাংসা হয়েছে। নিহত জোছনা খাতুনের নাবালক মেয়ে তামান্না ও ছেলে নাইমকে বাড়ি ও মাঠের জমিসহ ১বিঘা জমি লিখে দিয়েছে। নাবালক নাবালিকার পক্ষে নানা অভিভাবক থাকবে।