ঝিনাইদহে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ হচ্ছে ৫৩টি সড়ক

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ-জীবননগর মহাসড়ক থেকে মহেশপুর প্রবেশ করতে হলে যেতে হবে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ হামিদুর রহমান সড়ক দিয়ে। একটু এগিয়ে খাদ্য গুদাম পার হলেই পেয়ে যাবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন সড়ক। হামিদপুর মোড় পেরুলেই মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক সড়ক। সোনালী ব্যাংকে যেতে হলে যেতে হবে মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান সড়ক দিয়ে। শুধু এই সড়কগুলো নয় ঝিনাইদহের মহেশপুর পৌরসভা এলাকার ৫৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে নামকরণ করা হয়েছে ৫৩টি সড়কের। যেগুলোর নামফলক স্থাপনের কাজ চলছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, বিজয়ের এই মাসে তারা পৌর এলাকার সব মুক্তিযোদ্ধার নামে সড়কের নামকরণ শেষ করবেন। ইতোমধ্যে ২৯টি সড়কের নামফলক স্থাপন শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে। পাশাপাশি সব মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে প্রবেশের রাস্তাগুলোও পাঁকা করা হবে। ইতোমধ্যে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি যাওয়ার রাস্তা পাঁকা করা হয়েছে। যাদের মধ্যে কারো কারো বাড়ি পিচ রাস্তা, আবার কারো ইট বিছানো রাস্তা করা হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলার একটি মহেশপুর। ভারত সীমান্তবর্তী এই উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার জানান, এই উপজেলায় মোট মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে ৩৬১ জন, যার মধ্যে বেঁচে আছেন ১৯৬ জন। আর মহেশপুর পৌর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন ৫৩ জন, যার মধ্যে এখনও জীবিত আছেন ১৯ জন। যাদের প্রত্যেকের নামে সড়কের নামকরণ কাজ চলছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানান, ইতোমধ্যে ভালাইপুর ব্রিজ হতে আলম ‘স’ মিল পর্যন্ত বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সড়ক, হামিদপুর মসজিদ মোড় হতে রামচন্দ্রপুর রাস্তা পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক সড়ক, গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় বটতলা হতে দাসপাড়া পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান সড়ক, বালিবাজার হতে গাড়াবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান সড়ক, সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস মোড় হতে কিয়ামতের বাড়ি পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা মৃত শফি উদ্দিন সড়ক, মহেশপুর কাঁচা বাজার মোড় হতে সন্ন্যাসীর দোকান পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা সড়ক, কাজীপাড়া হয়ে মেইন সড়ক পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা আ. ছালাম সড়কসহ ২৯টি সড়কের নামফলক স্থাপন শেষ হয়েছে। মহেশপুর পৌরসভার মেয়র আবদুর রশিদ খাঁন জানান, পৌরসভার বর্তমান পরিষদ মনে করে মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান দেয়া তাদের দায়িত্ব। তাছাড়া পৌর এলাকার ৫৩ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে বর্তমানে বেঁচে আছেন ১৯ জন, বাকি ৩৪ জন মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন তারাও মারা যাবেন। দেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া এই বীর সন্তানরা মারা যাওয়ার পর তাদের স্মৃতি হারিয়ে যাবে এটা হতে পারে না। তাই তারা পৌরসভায় সভা করে নামকরণ চুড়ান্ত করেছেন। চলতি বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে নামফলক স্থাপন শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে ২৯টি সড়কের নামফলক স্থাপন শেষ হয়েছে। মেয়র আরও জানান, এই ডিসেম্বরেই ৫৩টি নামফলক করা হবে। পাশাপাশি পৌরসভা এলাকার আলোচিত চা-বাজারে মুজিব চত্বরের উদ্বোধন করা হবে। প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে সড়কের নামকরণের বিষয়ে জানান, এ বিষয়ে সরকারি পরিপত্র দেখে করতে হবে। তাছাড়া ইউনিয়ন বা পৌরসভা এলাকার কোনো সড়কের নামকরণ করতে হলে প্রথমেই স্ব-স্ব পরিষদ তাদের সভায় রেজুলেশনের মাধ্যমে নামকরণ করার প্রস্তাব করবেন। তারপর সেটা উপজেলা পরিষদের সভায় আলোচনা শেষে অগ্রগামী করে জেলা প্রশাসকের দফতরে যাবে। জেলা প্রশাসন এর দফতর থেকে অনুমোদন শেষে যাবে মন্ত্রণালয়ে। এরপর সেটার সরকারি স্বীকৃতি মিলবে।

মহেশপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পৌরসভার সাবেক কমান্ডার মুক্তিযেদ্ধা আব্দুুস সাত্তার জানান, ৭১ সালে যুদ্ধ শেষে স্বাধীন দেশের মাটিতে প্রথম পাঁ রেখে যে আনন্দ পেয়েছিলেন, তার নামের রাস্তার ওপর দিয়ে চলার সময় সেই আনন্দ মনে করিয়ে দেয়। তিনি বলেন, বেঁচে থাকতে তারা এই নামকরণ দেখে যেতে পারলেন এতে আরও বেশি খুশি। তিনি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে সড়কের নাম মুক্তিযোদ্ধার নামে করার দাবি করেন। আরেক মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বলেন, অনেকদিন পর হলেও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানান। তাছাড়া মেয়রসহ অন্যান্যের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, তাদের এই উদ্যোগ মুক্তিযোদ্ধারা মনে রাখবেন। এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্বাশতী শীল জানান, তারাও সরকারি নিয়ম মেনে চেষ্টা করছেন প্রতিটি ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়কের নামকরণ। মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়কের নামকরন হবে এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ বলে তিনি জানান।

 

Comments (0)
Add Comment