চুয়াডাঙ্গা শম্ভুনগরে ঐতিহ্যবাহী ঝাঁপান খেলা অনুষ্ঠিত

পাঁচমাইল প্রতিনিধি: গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিনোদন সাপের ঝাপান। এই খেলায় সাধারণত গোখরা সাপ মঞ্চে ছেড়ে দিয়ে ফনা তোলানোর জন্য নানা অঙ্গী ভঙ্গি করেন সাপুড়েরা। গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন শম্ভনগর গ্রামে এ আয়োজন করেন। সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে ঐতিহ্যবাহী সাপের ঝাঁপান। সাপুড়েরা নেচে গেয়ে দর্শক মাতিয়ে রাখেন। যা দেখতে আসেন নানা বয়সের মানুষ। মনোমুগ্ধ হয়ে তারা আনন্দ উপভোগ করেন। সাপ দেখলেই গা শিউরে উঠে অনেকের। আর যদি হয় বিষধর সাপ, তাহলে তো কথাই নেই। তবে এই সাপ নিয়েই উপমহাদেশে রয়েছে নানা ধরণের ঐতিহ্যবাহী খেলা। গ্রাম বাংলার এমনই এক ঐতিহ্যবাহী খেলা হলো ‘সাপের ঝাপান’। এ খেলায় অংশ নিতে আশপাশের জেলা থেকে মাটির পাত্র ও কাঠের বাক্সে করে সাপ নিয়ে আসেন ৩টি সাপুড়ে দল। মঞ্চের ওপরে এসব সাপ যখন ছেড়ে দেন সাপুড়ে, তখন দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকেন। একেকটি বিষধর গোখরা সাপ মঞ্চে নেমেই ফোঁস করে ফনা তোলে। সে ফনা উঁচু করতে সাপের সামনে নানান ভঙ্গিতে নাচতে শুরু করেন সাপুড়ে। যার সাপের ফণা যতো উঁচু হবে, বিজয়ী হবেন সেই সাপুড়ে। মনিবের ইশারা ইঙ্গিত তাকে ঠিক বুঝিয়ে দিয়েছে, শুধু মানুষকে আনন্দ দেওয়ার খেলা নয় বরং আজ মর্যাদার লড়াই। প্রতিযোগিদের মধ্যে নিজেকে সেরা প্রমাণিত করতে দলের ওঝাদের চলে আপ্রাণ প্রচেষ্টা। সরজমিনে দেখা যায়, শত শত মানুষের মাঝে কাঠের মাচাতে বিষধর সাপ রাখা। সাপুড়ে বাদ্যের তালে তালে গান গাইছে। সেই সাথে সাপগুলোও সাপুড়ের দিকে তাকিয়ে তাকে ছোবল মারতে চাইছে। চলে সাপ এবং সাপুড়ের প্রেমের মিতালী। এক সাপুড়ের গান শেষ হলে তিনি বসে যান তার সাপগুলোকে নিয়ে। তারপর আসেন নতুন এক সাপুড়ে। তিনিও তার সাপগুলোকে প্রদর্শন করেন। এভাবেই দিনভর চলে সাপের খেলা। দর্শকরাও দেখে আনন্দ উপভোগ করেন। তিনটি দল এ খেলায় অংশগ্রহণ করেন।
খেলা দেখতে আসা মানোয়ার হোসেন জানান, আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই খেলা কোথাও দেখা যায় না। এবার প্রথম তিনি এই ঝাপান খেলা দেখতে এসেছেন। সাপুড়ে ইসাহাক কবিরাজ জানান, ছোট থেকেই তিনি এ পেশায় (সাপুড়ে)। গ্রামের লোকের বাড়ি এবং মাঠ থেকে বিষধর সাপ ধরেন। সেগুলোকে পেলে পুষে বিক্রয় করেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খেলা দেখান। এই সাপের খেলা (ঝাপান) দেখিয়ে তাদের তেমন সংসার চলে না। তারপরও এ পেশাকেই তিনি বেছে নিয়েছেন। সাপুড়ে জাহাঙ্গীর আলম জানান, ১৬ বছর বয়স থেকেই তিনি সাপুড়ে। এখন আর সাপ ধরেন না। গোমা, আড়ল বেকা, গোখরা ও কেউটোসহ বিষধর সাপের খেলা দেখান তিনি। মানুষকে আনন্দ দেয়ায় মূল উদ্দেশ্যে তাদের।