স্টাফ রিপোর্টার: দেশজুড়ে অভাবনীয় উৎসাহ-উদ্দীপনা আর মুখর উৎসবের মধ্যদিয়ে বাংলা নতুন বছর ১৪৩২ বরণ করেছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। গ্রাম-গঞ্জ, শহর-নগর-বন্দর-সমতল থেকে পাহাড়-সবখানেই ছিল প্রাণোচ্ছ্বাসের আমেজ। ফ্যাঁসিবাদের পতনের পর নতুন পটভূমিতে মানুষ এবারের বর্ষবরণ করেছেন নতুন আঙ্গিকে-নতুন প্রণোদনায়। গানে কবিতায় শোভাযাত্রার উচ্ছলতায় কণ্ঠে কণ্ঠে অনুরণিত হয়েছে এসো হে বৈশাখ এসো এসো…সুর। ছিলো বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় দীপ্ত অঙ্গীকার। প্রত্যাশায় ছিলো ‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’। ১৪৩২ বাংলা বর্ষকে স্বাগত জানাতে পথে প্রান্তরে শোভাযাত্রা, মেলা-সমাবেশে এসেছিলো মানুষ।
চুয়াডাঙ্গায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপন করা হয়েছে। সোমবার পয়লা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ভিক্টোরিয়া যুবিলি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে (চাঁদমারী মাঠ) চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ৭০টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সমবেত হয়। সকাল ৮টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দের উদ্বোধন করেন। এর আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত ও বাংলার চিরাচরিত ঐতিহ্যবহনকারী গান ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো…..এর পরিবেশনার মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নববর্ষের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ও চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মাওলা (পিপিএম সেবার) নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমির মুক্ত মঞ্চে ৩দিনব্যাপী (লোকজ সংস্কৃতিক) বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন। মেলা উদ্বোধন শেষে জেলা পোশাক ও পুলিশ সুপার চুয়াডাঙ্গা সরকারি চত্বরে প্রবেশ করেন। পূর্ব থেকে নির্ধারিত চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্বরে এসে বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এসে জড়ো হয়। এরপর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার উদ্যোগ বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক জনকে চিড়া, মুড়ি ও বাতসা বিতরণ করা হয়। জেলা প্রশাসকের সমাপনী বক্তব্যের মধ্যদিয়ে প্রথম দিনের কর্মসূচি শেষ হয়। আনন্দ শোভাযাত্রায় তিনটি বিভাগে অংশগ্রহণকারী দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে বাঙালি ঐতিহ্য ও বাংলার পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকা হাজার বছরের বাঙালীয়ানাকে তুলে ধরার মধ্যমে তীব্র প্রতিযোগিতা হয়। এই প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারকারীদের নির্বাচন করতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৫ বিচারককে দায়িত্ব দেয়া হয়। চুয়াডাঙ্গা শহরের তিনটি স্পটে এ সকল বিচারকগণ অবস্থান নিয়ে নিষ্ঠার সাথে সকল দলের উপস্থাপনাকে গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করে তাদেরকে মূল্যায়ন করেন। সকল বিচারকদের বিচারিক বিভাগে পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্তর অধিকার করে রেলবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২য়স্থান অধিকার করে কেদারগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে ইসলামপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ‘খ’ বিভাগে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দলগুলোর মধ্যেও চলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এই গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করে চুয়াডাঙ্গা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে রাহেলা খাতুন গার্লস একাডেমি ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে মালিক আব্দুল বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। গ বিভাগে অংশগ্রহণ করে কলেজ ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এই গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ, তৃতীয় স্থান অধিকার করে ওয়েভ ফাউন্ডেশন চুয়াডাঙ্গা।
এবারের বাংলা নববর্ষে জাতি ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল পেশাজীবী সংগঠন ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের দল বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে ব্যাপক উপস্থিতি নিয়ে। ৭০টিরও বেশি পেশাজীবী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। প্রত্যেকটি দলই তাদের প্রাণপণ চেষ্টা করেছে বাঙালিয়ানা সাজে সজ্জিত হয়ে বাংলার পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকা যে সকল সেগুলোকে তুলে ধরার। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই কেউ বা সেজেছিল কামার-কুমার জেলে তাঁতি বরবধ গরু-মহিষের গাড়ি, ঘটক, বরযাত্রী, জেলে তাঁতি, কৃষক, বাংলার বধূ, হারিয়ে যাওয়া গরুর গাড়ি, পালকি, ঢেঁকিয়াল, গাছি, পুরোহিত, সাপুড়েসহ নানা বাঙালিয়ানা সাজে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা কলেজের মুখে মধ্যে অবস্থিত জেলা শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে শুরু হয়েছে তিনদিনের লোকজ ও সংস্কৃতি মেলা। যে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মাওলা (বিপিএম সেবা)।
এদিকে, বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আয়োজনে বৈশাখী উৎসব ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ চত্বরে আয়োজিত উৎসবে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ। পরে জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন জেলা জাসাস’র শিল্পীবৃন্দ। এরপরে সাহিত্য পরিষদ চত্বর থেকে শুরু হয় বর্ণাঢ্য বৈশাখী শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার শুরুতে ছিলো বিশাল ৫৪ ফুট দীর্ঘ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এতে অংশ নেয় জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি, সদর থানা বিএনপি, জেলা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, বিএডিসি শ্রমিক দল, রেলওয়ে শ্রমিক দল, মাক্রো-কার শ্রমিকদলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। শোভাযাত্রায় ছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাটিকাটা কোদালের প্রতিকৃতি (ফিরোজ মাবুদের মাধ্যমে), গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি, ঐতিহাসিক লাঠিয়াল বাহিনী (কেদারগঞ্জপাড়া), পালকি বাহক নবাব (খালিদ মাহমুদ মিল্টন), পোস্ট অফিসের রানার, রস বিক্রেতা, কামার, মাঝি, কুমার, নববধূর পালকি, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা, বাউল একতারা, বাংলার বধূর ঢেঁকি, জেলের জাল ফেলার অনবদ্য দৃশ্য প্রভৃতি। বৈচিত্রপূর্ণ সাজে সজ্জিত অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতি শোভাযাত্রায় এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। শোভাযাত্রাটি সাহিত্য পরিষদ চত্বর থেকে শুরু হয়ে কোর্ট মোড়, ভি.জে স্কুল, চৌরাস্তা মোড়, পৌরসভা মোড়, কবরী রোড, কলেজ রোড ঘুরে আবার সাহিত্য পরিষদ চত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর শুরু হয় বৈশাখী উৎসবের মূল সাংস্কৃতিক আয়োজন। বাউল সংগীত, লোকসংগীত, বৈশাখী গান পরিবেশনের পাশাপাশি আপ্যায়নের জন্য উপস্থিত সকলের মাঝে পরিবেশন করা হয় পান্তা ভাত, আলু ভর্তা, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ এবং মহিলা দলের উদ্যোগে চটপটি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু, সফিকুল ইসলাম পিটু, খালিদ মাহমুদ মিল্টন, সদর থানা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম নজু, পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান লিপটন, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি এম. জেনারেল ইসলাম, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রউফ উর নাহার রিনা, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মোকাররম হোসেন, মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান বাবলু, বাড়াদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের সদস্য সচিব তোবারক হোসেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশীদ ঝন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহেদ মোহাম্মদ রাজিব খান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক জাহানারা পারভীন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এম.এ. তালহা, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম, ছাত্রদলের সভাপতি শাহজাহান খান ও সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিন, সদর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাড. এম. শাহজাহান মুকুল, সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মন্টু, কৃষক দলের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাড. আ.স.ম. রউফ, ওলামা দলের আহ্বায়ক ফজলুর রহমান, সদস্য সচিব মাওলানা আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মাহাবুল হক। এছাড়া জেলা ওলামা দলের সৌজন্যে সবার মাঝে লেবু গাছের চারা বিতরণ করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে এতে অংশগ্রহণকারী বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্য থেকে চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপি প্রথম স্থান, সদর থানা বিএনপি দ্বিতীয় স্থান এবং জেলা যুবদল তৃতীয় স্থান অর্জন করে। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ মিল্টন।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা সাহিত পরিষদের উদ্যোগে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজসত্য সুন্দর’ শীর্ষক আলোচনা, স্বরচিতগল্প ও কবিতা পাঠ, নির্বাচিত কবিতা আবৃত্তি, সংগীত পরিবেশনসহ অনুষ্ঠানের শুরুতে মিষ্টিমুখ ও অনুষ্ঠান শেষে প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। পরিষদের সভাপতি ইকবাল আতাহার তাজের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা করেন পরিষদের অন্যতম উপদেষ্টা অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন ও সহ-সভাপতি সরদার আলী হোসেন। স্বরচিত লেখাপাঠ করেন ইদ্রিস ম-ল, আব্বাস উদ্দিন, লতিফা রহমান বনলতা, শওকত আলী বিশ^াস, চিশতি এম এ হামিদ, মিম্মা সুলতানা মিতা, শহিদুল ইসলাম, গোলাম কবীর মুকুল, হেলাল হোসেন জোয়ার্দ্দার, খন্দকার রাবিয়া খাতুন রাবু, আবুল কালাম আজাদ ও কাজল মাহমুদ। নির্বাচিত কবিতা আবৃত্তি করেন আকিব তৌফিক চৌধুরী ও নজির আহমেদ। সংগীত পরিবেশন করেন আদিল হোসেন, তুষার ও আবুল কালাম আজাদ।
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আলমডাঙ্গার গোকুলখালী ডা. আফছার উদ্দীন কলেজে আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টায় কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষক কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ মো. মাহবুল ইসলাম।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলা পরিষদ বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করেন। বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রাটি উপজেলা চত্বর থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ মঞ্চে শেষ হয়। বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও সঙ্গঠণের অংশগ্রহণে শোভাযাত্রাটি দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে। রাস্তার দুপাশে মানুষ দাঁড়িয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা উপভোগ করে। আনন্দ শোভা যাত্রা শেষে উপজেলা পরিষদ মঞ্চ চত্বরে ৩দিন ব্যাপী লোকজ সাংস্কৃতিক মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন রঙ-বেরঙের ব্যানার, বাংলার ঐতিহ্য পালকিতে নববধূ, কৃষক, গরু ও মহিষের গাড়ি, নানা প্রাচীন জনজীবনের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন অনুসঙ্গ নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। উপজেলা চত্বরে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে আলমডাঙ্গার কলা কেন্দ্রের শিল্পীরা। প্রভাষক একেএম ফারুক হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম মাস্টার ও এমদাদ হোসেনের উপস্থাপনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান চত্বরে এম সবেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আয়োজিত লাটি খেলা দর্শকরা উপভোগ করে। ৩দিন ব্যাপী লোকজ সাংস্কৃতিক মেলার স্টলগুলোতে বাংলা ঐতিহ্য ফুটে উঠেছে।
দামুড়হুদা অফিস/প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ বর্ণাঢ্য ও বর্ণিল আয়োজনের মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলা নববর্ষ পহেল বৈশাখ বরণের আয়োজন করে। গত সোমবার সকালে উপজেলা চত্বরে দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রথমে জাতীয় সংগীত ও এসো হে বৈশাখ গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুয় হয়। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিথি মিত্র’র নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজ, দামুড়হুদা সরকারি পাইলট হাই স্কুল, দামুড়হুদা পাইলট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, দামুড়হুদা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। পরে অনুষ্ঠিত হয় লোকোজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ৩দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন। এ সময় উপস্থিত সবাইকে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পান্তা ভাত খাওয়ানো হয়। বাংলা নববর্ষ বরণে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নতুন খাতা খুলে নববর্ষে হালখাতার সূচনা করে এবং তাদের ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করান।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দর্শনায় পয়লা বোশেখ উদযাপন হয়েছে। ১৪৩২ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনের সকালে হরেক রকম সাজে শোভাযাত্রা বের করে বিভিন্ন রাজনীতি, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, পেশাজীবী সংগঠনসহ সরকার, বে-সরকারি অফিসের পক্ষ থেকে। শোভাযাত্রায় অংশ নেয় দর্শনা পৌর বিএনপি, পৌরসভা, দর্শনা সরকারি কলেজ, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, লোকমোর্চা, অনির্বাণ, গণউন্নয়ন গন্থাগার, রামাযুষ, পূর্বরামনগর সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সংগঠন। উপস্থিত ছিলেন দর্শনা পৌর বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বুলেট, অন্যতম সমন্বয়ক আলহাজ মশিউর রহমান, এনামুল হক শাহ মুকুল প্রমুখ।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজে নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ উদযাপন হয়েছে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে কার্পাসডাঙ্গা বাজার সড়কে আনন্দ শোভাযাত্রা করে। এর আগে কলেজ প্রাঙ্গনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। কলেজের অধ্যক্ষ মো. হামিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কলেজ গর্ভনিং বডির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মনির। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও গর্ভনিং বডির সদস্য অ্যাড. আব্দুল্লাহ আল মামুন এরশাদ প্রমুখ।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যালয়ের সামনে থেকে জাতীয় সংগীতের সুরে বাংলা নববর্ষের সূচনা করা হয়। জাতীয় সংগীতের পর বেঝে উঠে তধ্বনিত হয় ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো। শুরু করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজের নেতৃত্বে বাংলা নববর্ষের বিভিন্ন সেøাগান সম্মিলিত ব্যানার সহকারে শোভাযাত্রাটি মেহেরপুর শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ড. শহীদ শামসুজ্জোহা পার্কে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছেলে-মেয়েরা বাংলার ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসা কৃষক, বাউল, বৈষ্টম, জেলে তাঁতিসহ বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে শোভাযাত্রা শোভা বর্ধন করেন। শোভাযাত্রায় অন্যদের মধ্যে সিভিল সার্জন ডা.এ কে এম আবু সাঈদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গাজী মূয়ীদুর রহমান, সাজেদুল ইসলাম, আবীর হোসেন, তানজিনা শারমিন দৃষ্টি, এস্তামুল হক, শাকির আহম্মেদসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মেহেরপুর শহীদ শামসুজ্জোহা পার্কের উদ্যানে বাংলা নববর্ষকেক স্বাগত জানিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এ অনুষ্ঠানে মেহেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা এতে সংগীত ও নিত্য পরিবেশন করেন। এর আগে সেখানে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম, মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুল্লাহ আল আমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল মালেক প্রমুখ।
অপরদিকে, মেহেরপুর জেলা বিএনপির আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে জাতীয় সংগীতের সুরে বাংলা নববর্ষের সূচনা করা হয়। জাতীয় সংগীতের পর বেজে ওঠে তধ্বনিত হয় ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো। শুরু করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টনের নেতৃত্বে বাংলা নববর্ষের বিভিন্ন সেøাগান সম্মিলিত ব্যানার সহকারে শোভাযাত্রাটি মেহেরপুর শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মেহেরপুর জেলা বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন জেলা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সদস্যরা বাংলার ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসা কৃষক, বাউল, বৈষ্টম, জেলে তাঁতিসহ বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে শোভাযাত্রা শোভা বর্ধন করেন। শোভাযাত্রা মিছিল আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. কামরুল হাসান, জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক অধ্যাপক ফয়েজ মোহাম্মদ, জেলা বিএনপির সদস্য ইলিয়াস হোসেন, আলমগীর খান ছাতু, আনসারুল হক,ওমর ফারুক লিটন, হাফিজুর রহমান হ্যাপি, জেলা বিএনপির সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মিজান মেনন,জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আজমুল হোসেন মিন্টু, শহিদুল ইসলাম, মো. মফিজুর রহমান, জাসাস আহ্বায়ক বাঁকা বিল্লাহ, সম্মেলন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম,জেলা জাসাসের সদস্য সচিব বাকা বিল্লাহ, জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি মোশারফ হোসেন তপু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন আহবায়ক ফিরোজুর রহমান ফিরোজ, রাকিবুল ইসলাম সজল, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ইলিয়াস হোসেন, যুবদল নেতা মশিউল আলম দ্বীপু, যুবদলের সদস্য মেহেদী হাসান রোলেক্স, জনি সহ জেলা বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা শেষে ১লা বৈশাখীর বাঙ্গালীদের প্রিয় খাবার পান্তা ভাত ইলিশ মাছ খেয়ে শেষ করেন। পরে বিকেল তিনটার সময় জেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের সৌজন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক বাঁকা বিল্লাহ, সাংনিষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে বিনোদনমূলক নাচ গান, নিত্য, কবিতা উৎসব, আবৃত্তি, আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টন, বিশেষ অতিথি সদস্য সচিব এডভোকেট কামরুল হাসান, জেলা বিএনপি’র যুগ্মআহবায়ক ফয়েজ মোহাম্মদ, জেলা সদস্য ইলিয়াস হোসেন, সদস্য আনসারুল আলমগীর খাঁন ছাতু, হাফিজুর রহমান হ্যাপিসহ বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে বিভিন্ন ইউনিটে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ ১৪৩২ উপলক্ষে মেহেরপুরের মুজিবনগরে আয়োজন করা হয় নানা রঙিন কর্মসূচি। সোমবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পলাশ ম-লের নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রাটি শেষ হয় উপজেলা পরিষদ চত্বরে। শোভাযাত্রায় অংশ নেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুস সাদাত রতœ, মুজিবনগর থানার তদন্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল মোমিন, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা রকিবউদ্দীন, বিআরডিবি কর্মকর্তা কাওসার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান হাবীব, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইজারুল ইসলামসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থীরা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এ সময়ে সংগীত পরিবেশন করেন আমজাদ হোসেন, হেলাল খান, রিয়াজ শাই ও ইতি মন্ডল। শোভাযাত্রা শেষে সবাই অংশ নেন ঐতিহ্যবাহী পান্তা উৎসবে, যেখানে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো পরিবেশ। এছাড়াও মুজিবনগর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শামীমুল করিমের নেতৃত্বে অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ ও ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের সাজে এক বিশাল শোভাযাত্রা নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। অন্যদিকে, মুজিবনগর উপজেলা বিএনপি তাদের দলীয় কার্যালয় থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। মেহেরপুর জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক আমিরুল ইসলামের নেতৃত্বে এই শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বৈশাখের উৎসব উদযাপন করে।