চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে পূজামন্ডপে ছিলো উপচেপড়া ভিড় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় ‘কুমারীপূজা’

স্টাফ রিপোর্টার: দেশ, জাতি ও বিশ্ববাসীর মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে গতকাল রোববার শারদীয় দুর্গাপূজার তৃতীয় দিন মহাষ্টমীতে দেশের বিভিন্ন মন্দিরে কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ দেশের পূজামন্ডপে ছিলো দর্শনার্থী-পুণ্যার্থীর উপচেপড়া ভিড়। বিশেষ করে রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন মন্ডপে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলার রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। আজ উৎসবের চতুর্থ দিন দেবীর মহানবমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। শারদীয় দুর্গোৎসবে মহাষ্টমীর অন্যতম আকর্ষণ কুমারীপূজা। সনাতন ধর্মমতে, দেবী দুর্গা সব নারীর মধ্যে মাতৃরূপে আছেন। সবার মধ্যে এই উপলব্ধি জাগাতেই কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গা মাতৃভাবের প্রতীক আর কুমারী নারীর প্রতীক। কুমারীর মধ্যে মাতৃভাব প্রতিষ্ঠাই এ পূজার মূল লক্ষ্য। দুর্গাপূজায় কুমারীপূজা হলো অশুভ, অন্যায়, পাপ পঙ্কিলতার বিরুদ্ধে ন্যায়, পূর্ণ, সত্য, শুভ ও সুন্দরের যুদ্ধ। কুমারী প্রতীকে জগজ্জননীর পূজায় পরম সৌভাগ্য লাভ হয়। এই রূপ কুমারী সমগ্র জগতের বাক্যস্বরূপা, বিদ্যাস্বরূপা। তিনি এক হাতে অভয় এবং অন্য হাতে বর প্রদান করেন। কুমারীপূজার উদ্ভব ঘটে বানাসুর বধের মধ্য দিয়ে। এ পূজায় অনধিক ১৬ বছরের অরজঃস্বলা কুমারী মেয়েকে দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। বয়স ভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। এক থেকে ১৬ বছর বয়সি কন্যাকে যথাক্রমে ‘সন্ধ্যা’,’সরস্বতী’, ‘ত্রিধামূর্তি’, ‘কালীকা’, ‘সুভগা’, ‘উমা’, ‘মালিনী’, ‘কুব্জিকা’, ‘কালসন্দর্ভা’, ‘অপরাজিতা’, ‘রূদ্রাণী’, ‘ভৈরবী’, ‘মহালক্ষ্মী’, ‘পীঠনায়িকা’, ‘ক্ষেত্রজ্ঞা’ এবং ‘অন্নদা’ বা ‘অম্বিকা’ নামে ডাকা হয়।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, ধুপের ধোঁয়া, ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ, কাঁসর ও উলুধ্বনিতে মুখর এখন দেশের দূর্গামন্ডপ প্রাঙ্গণ। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী নয়, মন্ডপে ঘুরে ঘুরে শারদীয় দুর্গোৎসবে অংশ নিচ্ছেন অন্যরাও। শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমী উদযাপিত হয়েছে গতকাল রোববার। মহাঅষ্টমীর দিনে সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা ও চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল মামুন সহকর্মীদের নিয়ে আলমডাঙ্গায় কয়েকটি মন্ডপ পরিদর্শন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন, পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মো. নাজমুল হামিদ রেজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ (পিপিএম), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল আনিসুজ্জামান লালন, পুলিশ সুপারের সহধর্মিনী পুনাকের সভানেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন, আলমডাঙ্গা সহকারী কমিশনার ভূমি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভারপ্রাপ্ত রেজওয়ানা নাহিদ, সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম সাইফ, আব্দুর রহমান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল কাফি, কৃষি অফিসার রেহানা পারভীন, আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) একরামুল হোসাইন, পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন মোহাম্মদ ফরিদ, কালিদাসপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ শেখ আশাদুল হক মিকা, পৌর ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম স্বপন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক, উপজেলা রিসোর্চ ইন্সটেক্টর জামাল হোসেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ডা. অমল কুমার বিশ^াস, পৌর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি পরিমল কুমার কালু ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক জয় কুমার, স্টেশনপাড়া পূজা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেবদাস দে, সাংগঠনিক সম্পাদক তাপস বেদ প্রমুখ। প্রথমে স্টেশনপাড়া পূজা মন্ডপ ও পরে কালিদাসপুর, ক্যানেলপাড়া, রথতলা ও কলেজপাড়া পূজা মন্ডপ পরির্দশন করেন।
এদিকে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গার বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেছেন। সন্ধ্যার পর খাসকররা ইউনিয়নের পথসভা ও গণসংযোগ শেষে প্রথমে খাসকররার দুটি মন্ডপ পরিদর্শন করেন। এরপর রাতে সরোজগঞ্জের বোয়ালিয়া ম-প, সরোজগঞ্জ বাজার সংলগ্ন কাছারিপাড়া ম-প ও চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মালোপাড়া পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন ও পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন। পূজামন্ডপ পরিদর্শনকালে সফর সঙ্গী ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ দোবে বাবুলাল, বিশিষ্ট ঠিকাদার ওয়ায়েচ কুরুনি টিটু, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পবিত্র কুমার আগরওয়ালাসহ খাসকররা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগসহ এর অংগসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিকে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিয়ষক সম্পাদক মিনিস্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক খান রাজ চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন পুজামন্ডপ পরিদর্শন করেছেন। গতকাল রোবাবর পুজামন্ডপ পরিদর্শনকালে মন্ডপ কমিটির সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর জেলা আনসার কমান্ড্যান্ট প্রদীপ চন্দ্র দত্ত মেহেরপুর সদর এবং মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেছেন। গতকাল রোববার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত জেলা কমান্ড্যান্ট প্রদীপ চন্দ্র দত্ত সদর উপজেলার গোভীপুর বায়পাড়া দূর্গা মন্ডপ, গোভীপুর দাসপাড়া দূর্গা পূজামন্ডপ, আমঝুপি রাধামাধব পূজা মন্দির, রাধে-শ্যাম পূজা মন্দির, বাড়াদি দাসপাড়া মন্দির, বামনপাড়া সর্বজনীন পূজা মন্দির, পিরোজপুর দূর্গা মন্দির, পিরোজপুর কালীমাতা দাসপাড়া মন্দির, গহরপুর দাসপাড়া মন্দির পরিদর্শন করেন। এর আগে তিনি মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর সার্বজনীন দূর্গা মন্দির, বাবুপুর সার্বজনীন দূর্গা মন্দির, কোমরপুর সার্বজনীন দূর্গা মন্দির, মোনাখালী পূজা মন্ডপ, রতনপুর দাসপাড়া পূজা মন্ডপ, বল্লভপুর পূজা মন্ডপ ও দারিয়াপুর পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালের জেলা কমান্ড্যান্ট প্রদীপ চন্দ্র দত্ত সংশ্লিষ্ট মন্দির কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ পূজা মন্ডপ কমিটির সদস্যদের সাথে মতবিনিময় এবং আইনশৃঙ্খলা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
এদিকে মেহেরপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন পূজা মন্দির পরিদর্শন করেছেন। এদিন সকাল থেকে সারাদিন বিভিন্ন পূজা মন্দির পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন মন্দিরে অনুদান প্রদান করেন। মেহেরপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক সনজিত পাল বাপ্পি, সদস্য সচিব অশোক চন্দ্র বিশ্বাসের নেতৃত্ব পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্যরা মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর, আমঝুপি, চাঁদবিল, পিরোজপুর ও গহরপুর এবং মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর,মহাজনপুর, রতনপুর ও বল্লভপুর পূজা মন্দির পরিদর্শন করেন। এ সময় জাতীয় পুজা উদযাপন পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট বিমল কুমার বিশ্বাস, মেহেরপুর পৌর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বিশ্বনাথ সাহা, সাধারণ সম্পাদক তরুণ কুমার বিশ্বাস, গাংনী উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মহাদেব চন্দ্র দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক সুশান্ত কুমার বিশ্বাস, মেহেরপুর সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মঙ্গল চন্দ্র বিশ্বাস, সহ-সভাপতি চন্ডিচরণ হালদার, গাংনী পৌর কমিটির সভাপতি অপূর্ব কুমার বিশ্বাস ও মুজিবনগর উপজেলা কমিটির সভাপতি ধীরেন হালদার তোমাকে উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গায় পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) সদস্যগণ বিভিন্ন পূজাম-পে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় পুনাক সভানেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দের সাথে শারদীয় শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং সংশ্লিষ্ট পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে উপহার সামগ্রী হিসেবে ফলের ঝুড়ি পৌঁছে দেন। আরও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদিকা জোবাইদা আখতার, কোষাধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হুমায়রা আক্তার প্রমুখ।