সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে বাল্যবিয়ে প্রতিহত করার আহ্বান
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে শিশু তরুণ এবং অভিভাবকদের করণীয় শীর্ষক সচেতনতামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পুলিশপার্ক কমিউনিটি সেন্টারে ন্যাশনাল চিলড্রেন্স টাস্কফোস এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। তিনি বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক অন্যায়। এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে প্রতিহত করতে হবে। আমাদের দেশে বাল্যবিয়ে একটি মারাত্মক সমস্যা৷ ইউনিসেফের শিশু ও নারী বিষয়ক প্রতিবেদনে অনুসারে বাংলাদেশের ৬৪% নারীর বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে৷ বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন অনুসারে ছেলেদের বিয়ের বয়স ন্যূনতম ২১ এবং মেয়েদের বয়স ১৮ বছর হওয়া বাধ্যতামূলক৷ অশিক্ষা, দারিদ্র, নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক নানা কুসংস্কারের কারনে এ আইনের তোয়াক্কা না করে বাল্যবিয়ে হয়ে আসছে। বাল্যবিয়ের প্রধান কুফলঃ নারী শিক্ষার অগ্রগতি ব্যাহত হওয়া ছাড়াও বাল্যবিয়ের কারণে মাতৃ মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ মা হতে গিয়ে প্রতি ২০ মিনিটে একজন মা মারা যাচ্ছেন৷ অন্যদিকে প্রতি ঘন্টায় মারা যাচ্ছে একজন নবজাতক৷ নবজাতক বেঁচে থাকলেও অনেক সময় তাকে নানা শারীরিক ও মানষিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়৷ অপ্রাপ্তবয়স্ক মা প্রতিবন্ধী শিশু জন্মদান করতে পারে৷ এছাড়া এতে গর্ভপাতের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়৷ বাল্যবিয়ের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের আশংকা তৈরি হওয়া ছাড়াও নানা পারিবারিক অশান্তি দেখা দেয়৷ বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের উপায় বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনটি বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রচার/প্রচারণা করা প্রয়োজন৷ রেডিও, টেলিভিশনে ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করা যেতে পারে৷ গ্রাম পর্যায়ে বিট পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং, উঠান বৈঠক ও মা সমাবেশ এক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হবে৷ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক বিবাহ বন্ধসহ মামলা রজ্জু করা যেতে পারে৷’ তিনি আরোও বলেন, ‘বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭ এ আইনে ২২টি ধারা আছে। তন্মধ্যে ১৯ ধারা বিশেষ শর্তসম্পর্কিত। বাল্যবিবাহ হলেই এর জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যতীত কোন অবস্তুায়ই নিকাহ রেজিস্ট্রার যেন বিবাহ নিবন্ধন না করেন, সেরূপ আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। প্রতিটি ইউনিয়নে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। নবম ও দশম শ্রেনীর পাঠ্য বইতে এ বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করা হলে এর সুফল পাওয়া যাবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বেসরকারি সংস্থাগুলোও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। সরকারের দিন বদলের অঙ্গীকার রয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৫৪ থেকে কমিয়ে ১৫ করা হবে৷ ২০২১ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৩.৮ থেকে কমিয়ে ১.৫ করা হবে৷ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা না গেলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না৷ বাল্যবিয়ে সংকুচিত করে দেয় কন্যা শিশুর পৃথিবী৷ আমরা যদি সবাই সচেতন হই তাহলে কন্যা শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে৷ দেশে মা ও শিশুর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে৷ তাই বাল্য বিবাহ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে৷ এখন থেকেই৷’পরিশেষে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি থানাসহ পুলিশ সুপারের কার্যালয় নারী ও শিশু হেল্পডেক্স, উইমেন সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে কর্মরত নারী ও শিশু বান্ধব কর্মকর্তাগন নিরবিচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করে চলেছেন। ইতোমধ্যে উইমেন সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে স্বামী স্ত্রী’র মধ্যকার মনোমালিন্যের অবসান ঘটিয়ে অসংখ্য ভাঙ্গা সংসার জোড়া লাগানো হয়েছে। অবুঝ শিশু ফিরে পেয়েছে তাদের বাবা মাকে। আমার নিজ উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গায় কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলেই গর্বিত পিতা-মাতার হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে বিশেষ পুরস্কার। “কন্যা সন্তান বোঝা নয়, আশীর্বাদ কন্যা সন্তান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। কন্যা সন্তান মা-বাবার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করে। কন্যা সন্তান জন্ম হলে ফোন করুন। উপহার পৌঁছে যাবে সাথে সাথে।” যা অদ্যবদি পর্যন্ত চলমান রয়েছে। দেশের মোট জনগোষ্ঠির অর্ধেক নারী। এই বিপুল সংখ্যাক নারী পিছিয়ে থাকলে সামগ্রীক উন্নয়ন অসম্ভব। তিনি চুয়াডাঙ্গা সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে আইন শৃংঙ্খলা রক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী ও শিশু নির্যতান প্রতিরোধ এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণে সহযোগিতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাজিদ হোসেন, ন্যাশনাল চিলড্রেন’স টাস্কফোর্সের সদসবৃন্দ, সাংবাদিকগন, শিশুকিশোর ও অভিভাবকবৃন্দ।