মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে প্রতিশোধ নিতে ভাতিজি পলিমা খাতুন তার আপন চাচা কক্সবাজার জেলার মহেশখালী এলাকায় কর্মরত মাদরাসা শিক্ষক হাসান ফারুক ওরফে হাসান ও চাচি গৃহিনী সারমিন সুলতানার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া ছেলে আল-মবিনকে মারধর করা হয়েছে এমন খবর শুনে বাড়িতে আসা অপর চাচা রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দিয়েছেন প্রতিশোধ পিপাসু ভাতিজি পলিমা খাতুন। মিথ্যা মামলায় ওই ৩ জন ঘটনাস্থলে না থাকার পরও আসামি করায় সচেতন মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধে গত ২০ জুলাই ভোলাডাঙ্গা গ্রামের মো. আবুল কাশেমের বাড়িঘর ভাঙচুর করার প্রতিবাদ করায় পারিবারিক কলহে পরিকল্পিতভাবে একই গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেন, তার ছেলে মো. তারেকুর রহমান ও মো. মশিউর রহমান সুজন এবং জামাতা রকিবুল ইসলামসহ আরো অনেকে আপন ছোট ভাই আক্তার হোসেন, তার স্ত্রী রুপালী খাতুন, মেজ ভাই রবিউল ইসলামের স্ত্রী মুর্শিদা খাতুন এবং তার ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী আল মবিন ও মারুফ হোসেন সহ আরো অনেককে খুন-জখমসহ মারধর করার জন্য ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে গত গত ২১ জুলাই বাড়িতে হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে মারাত্মক জখম করে। এতে আহতরা কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ঘটনায় রবিউল ইসলামের স্ত্রী মুর্শিদা খাতুন বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের ৬ জনকে আসামি করে গেলো ২৪ জুলাই গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামি ইসমাইল হোসেন ও রকিবুল ইসলাম গত ৩১ জুলাই থেকে জেলহাজতে আছেন। এছাড়া আসামি তারেকুর রহমান রাজন বেশ কিছুদিন হাজত খাটার পর বর্তমানে জামিন আছেন।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে আসামি ইসমাইল হোসেনের মেয়ে পলিমা খাতুন গত ২ আগস্ট প্রতিপক্ষের ১২ জনকে আসামি করে গাংনী থানায় একটি কাউন্টার মামলা করেছেন। ওই মামলায় পলিমা খাতুন তার আপন চাচা মাদরাসা শিক্ষক হাসান ফারুক ওরফে হাসান ও চাচি গৃহিনী সারমিন সুলতানার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। হাসান ফারুক কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ষাইটমারা মহিউস্ সুন্নাহ দাখিল মাদরাসায় ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। একই এলাকায় তিনি স্ত্রী সারমিন সুলতানাকে নিয়ে থাকেন।
জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষক হাসান ফারুক ওরফে হাসান বলেন, বাপ-দাদার ভিটে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের ভোলাডাঙ্গা গ্রামে হলেও তিনি ইতোমধ্যে ঢাকাতে বাড়ি করেছেন। তিনি আরো বলেন, কারো জন্ম-মৃত্যু, ঈদ পার্বনসহ জরুরী কাজ ছাড়া গ্রামের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভোলাডাঙ্গা গ্রামে যাওয়া হয় না। তিনি আরো বলেন, ঘটনার সময় আমি আমার মাদরাসায় কর্মরত ছিলাম। আর আমার স্ত্রী আমার সাথে মহেশখালী থাকেন। তিনি আরো বলেন, আমার আরেক ভাই রবিউল ইসলাম ঢাকা থাকেন ও সেখানে ব্যবসা করেন। ছেলে-বউকে মারধর করা হয়েছে শুনে তিনি পরেরদিন মেহেরপুরের ভোলাডাঙ্গা গ্রামে যান।
ওই মাদাসা সুপার মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন হেলালী লিখিতভাবে জানান, শিক্ষক হাসান ফারুক ওরফে হাসান গেল ১৬ জুলাই হতে অদ্যাবধি কোনোপ্রকার ছুটি গ্রহণ ছাড়া প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। তিনি অফিস প্যাডে এ তথ্য নিশ্চিত করেন এবং হাজিরা খাতার ফটোকপি পাঠিয়েছেন।
ষোলটাকা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য ভোলাডাঙ্গা গ্রামের সুজাউদ্দিন জানান, ঘটনার সময় মাদরাসা শিক্ষক হাসান ফারুক ওরফে হাসান ও তার স্ত্রী সারমিন সুলতানা ভোলাডাঙ্গা ছিলেন না এবং তার জানামতে তিনি সস্ত্রীক মহেশখালী ছিলেন। এছাড়া তার আরেক ভাই রবিউল ইসলাম ঢাকায় থেকে সেখানে ব্যবসা করেন। ঘটনার সময় তিনি ভোলাডাঙ্গা ছিলেন না। স্ত্রী-পুত্রসহ স্বজনদের আহত হওয়ার খবরে তিনি পরের দিন ঢাকা থেকে ভোলাডাঙ্গা গ্রামে আসেন। ঘটনার সময় ভোলাডাঙ্গা গ্রামে না থেকেও মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে। এটা বড় দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা।
মেহেরপুরের গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিষয়টি পুরাতন। এসআ্ই পিন্টু কুমার ম-লকে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা এসআই পিন্টু কুমার ম-ল বলেন, বিষয়টি পুলিশ সুপার মহোদয়ের জ্ঞাত। তিনি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা পিন্টু কুমার ম-ল সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানান।