কোটচাঁদপুরে বাঁওড়ে মাছ ছাড়া নিয়ে হালদার ও ইজারাদারদের হাতাহাতি

কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি: কোটচাঁদপুরের জয়দিয়া বাঁওড়ে মাছ ছাড়ার সময় নারী হালদার ও ইজারাপ্রাপ্তদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাঁওড় পাড়ে এ ঘটনা। এ ঘটনায় দুইপক্ষ একে অপরের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ তুলেছেন। পরে পুলিশের সমঝোতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মৎস্য অধিদপ্তর, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে বাঁওড় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চাষ শুরু করেন। গেল ১৩ এপ্রিল সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় মৎস্য অধিদপ্তর ওই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন। এদিকে মেয়াদ পূর্তির আগেই বাঁওড় ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা। যা এরই মধ্যে সম্পন্নও হয়েছে। অন্যদিকে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ১৪ এপ্রিল বাঁওড়ের তীরে নিশানা দিয়ে, তা দখল নেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা নিরুপমা রায়ের নির্দেশে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা। বাঁওড় পাড়ে মাইকিং ও করেন সংশ্লিষ্টরা। এতে বাঁওড় পাড়ের হালদার সম্প্রদায়ের মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে।

সেই থেকে বাঁওড় ফিরে পেতে বাঁওড় পাড়ের হালদার সম্প্রদায়ের মানুষেরা নামেন আন্দোলনে। মঙ্গলবার বাঁওড়ে মাছ ছাড়তে বাধা দেওয়া ছিল আন্দোলনের অংশ বলেন জানান জয়দিয়া সুফল ভোগী সমবায় সমিতির সভাপতি নিত্য হালদার।

নিত্য হালদার বলেন, ‘আমাদের ভেতরের কিছু কুচক্রী মানুষ, সমাজের প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বাঁওড় নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছেন। এ বাঁওড় আমাদের মা। আর এ মাকে রক্ষা করতে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার আমাদের নারী হালদারদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, আমি তাঁর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি ও বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে বাঁওড় পাড়ের শিলা হালদার বলেন, ‘বাঁওড় নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আগামী ২৯ মে ওই মামলার শুনানি রয়েছে। আমরা তাদের কাছে হাত জোড় করে বলেছি শুনানির পর আপনারা মাছ ছাড়েন। তারা আমাদের কোনো কথা না শুনে, আমাদের সবাই মারধর করে, ঠেলে ফেলে দিয়ে মাছ ছাড়তে যায়। এ সময় আমরা বাধা দিতে গেলে পুলিশসহ স্থানীয়রা আমাদের সকলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। ওই ঘটনার পর আমরা তাদের চারজনকে আটকে রাখি। আমরা লাঞ্ছিত করার ঘটনার বিচার চাই।’

বিষয়টি নিয়ে ইজারাদারের পক্ষের আনন্দ হালদার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা বাঁওড়ের ইজারা পক্ষের জোন। আমরা মাছ ছাড়তে এসেছিলাম। তারা আমাদের মাছ ছাড়তে দেয়নি। এরপরও তারা আমাদের মেরে আটকে রেখেছেন। আমরা তাদের কাউকে মারিনি।’ এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুরের সাবদারপুর পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘মাছ ছাড়ার সময়, তারা আমাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছিল। আমরা ওই সময় সরে দাঁড়াই। আমরা তাদের কেন মারতে যাবো। মহিলাদের গায়ে কী হাত দেয়া যায়!’

এএসআই বলেন, ‘সম্ভবত ইজারা প্রাপ্তরা থানায় যোগাযোগ করেছিল। থানা থেকে আমাদের যেতে বলেছিল। এ জন্য আমরা গিয়েছিলাম।’ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কোটচাঁদপুর থানার এসআই ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, ‘আমরা এসে দেখলাম চারজন আটক রয়েছে। তাদেরকে উদ্ধার করি। এরপর সবাইকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। পরে বসে যা হয় সমাধান করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘মূলত বাঁওড়ে মাছ ছাড়াকে কেন্দ্র করে একটু ঝামেলা হয়েছিল। তবে ওই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।’ বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর থানার ডিউটিরত উপপরিদর্শক (এসআই) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘ওই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত থানায় কোনো পক্ষই অভিযোগ করেনি।’

 

Comments (0)
Add Comment