আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা শিশিরদাড়ি গ্রামের ৪ যুবকের বিরুদ্ধে অবশেষে অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তরা বলেছেন, আমরা ফেসে গেছি। রাতে প্রেমিক প্রেমিকাকে একই ঘরে আটক করতে গিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। এপর রুজু করা হয় অপহরণ মামলা। এসময় তাদের সাথে মেয়ের বাবার ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ের তার মাথা ফেটে রক্তাক্ত জখম হয়। পরে প্রতিবেশীরা সুজন নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশে তুলে দেয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গার শিশিরদাড়ী গ্রামের জনৈক রাজমিস্ত্রির মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রীর ঘরে ঢুকে মধ্যরাতে ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে অপহরণের চেষ্টা চালায় ৪ যুবক। স্কুলছাত্রীর চিৎকারে বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা ছুটে এলে ৩ অপহরণকারী পালিয়ে যায় ও একজনকে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়। স্কুলছাত্রী ও তার পিতা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, গ্রামের মাঠের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় বাড়ি হওয়ার সুযোগে একই গ্রামের মৃত আজিজুল মিস্ত্রির ছেলে সুজন (৩৭), লেলটুর ছেলে কালাম (৩২), মৃত দাউদ মল্লিকের ছেলে মিন্টু (৩৪) ও মুজাম আলীর ছেলে আশিক (২৬) রাত ১২টার দিকে বাড়িতে ঢোকে। ঘরের দরজা না থাকার সুযোগে ৪ জন ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় স্কুলছাত্রীর ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে তাকে অপহরণের চেষ্টা চালায় তারা। এ সময় তার চিৎকারে বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা ছুটে এলে ৩ অপহরক পালিয়ে গেলেও সুজন নামে একজনকে আটক করে রাতেই আলমডাঙ্গা থানা পুলিশে দেয়া হয়। অপহরণকালে বাধা দিতে গেলে ওই স্কুলছাত্রীর পিতাকে বিদেশি টর্চ লাইট দিয়ে পিটিয়ে আহত করে বলে অভিযোগে জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই স্কুলছাত্রীর সাথে একই গ্রামের হাসাবুলের ছেলে বিপ্লবের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাঝে মাঝে রাতে বিপ্লব তার প্রেমিকার ঘরে যাওয়া আসা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। শনিবার রাতেও বিপ্লব তার প্রেমিকার ঘরে যায়। এমন সংবাদে গ্রামের আজিজুলের ছেলে সুজন, দাউদের ছেলে মিন্টু, কালাম ও আশিক প্রেমিক জুটিকে ধরার জন্য বাড়ি গিয়ে ডাকাডাকি করে। ডাকাডাকির একপর্যায়ে মেয়ের ঘরে অন্য ছেলে আছে দাবিতে স্কুলছাত্রীর পিতার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় যুবকদের হাতে স্কুলছাত্রীর পিতা রক্তাক্ত জখম হয়ে চিৎকার শুরু করে। তার চিৎকারে প্রতিবেশিরা ছুটে আসলে ৪ যুবকের তিন জন পালিয়ে গেলেও সুজন গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়ে। এরই মধ্যে স্কুলছাত্রীর প্রেমিক বিপ্লব তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ফেলে পালিয়ে যায়। রাতেই আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে সুজনকে আটক করে নিয়ে আসে। সুজনের কথার ওপর ভিত্তি করে ওই স্কুলছাত্রীর ঘরে গিয়ে ফেলে যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে, সকালে ওই স্কুলছাত্রীর পিতার সাথে ওই ৪ যুবকের পরিবার ২০ হাজার টাকায় মামলা না করার জন্য আপস করে। তাকে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ৪ হাজার টাকা পরে দেয়ার কথা বললে স্কুলছাত্রীর পিতা রাগ করে টাকা ফিরিয়ে দেয়। সন্ধ্যায় স্কুলছাত্রীর পিতা বাদি হয়ে ওই চার যুবকের নামে আলমডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেছে।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে একই গ্রামের হাসাবুলের ছেলে বিপ্লবের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে রাতের আঁধারে দুজনে দেখা করতে যায়। দুজনকে একসঙ্গে গ্রামের কয়েকজন যুবক দেখে ফেলে। রাতেই ওই যুবকেরা স্কুলছাত্রীর বাড়িতে ঘটনা জানাতে গেলে দু পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয় এবং স্কুলছাত্রীর পিতা আহত হন। রাতেই একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে তারা। ঘটনাস্থল থেকে স্কুলছাত্রীর প্রেমিক বিপ্লবের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত একাধিকবার তারা মোবাইলে কথোপকথন করেছে বলে কল লিষ্ট পাওয়া গেছে। এছাড়া স্কুলছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।