অবশেষে বালাইনাশক ইনতেফা কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন বিহীন নিষিদ্ধ পণ্যের তদন্ত শুরু

 

নারায়ণ ভৌমিক: অবশেষে বালাই নাশক ইনতেফা কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন বিহীন সরকার নিষিদ্ধ অবৈধ তরল নাফা সার উৎপাদন, মজুদ, সরবরাহ ও বাজারজাত করায় তদন্ত শুরু হয়েছে। ঢাকা খামারবাড়ি বাংলাদেশ কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর সার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী ইনতেফা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজি মোহাম্মদ আবু দাউদকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দেয়ার জন্য পত্র প্রেরণ করেছেন। পত্রে বলা হয়েছে নিবন্ধন বিহীন নাফা তরল সার বাজারজাতকরণের বিষয়ে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে এখনো আপনার প্রতিষ্ঠানের নামে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপকরণ শাখার ১নং সূত্রপত্রের আলোকে ২০১৩ সালে তরল সারের অনুমোদন বাতিল করা হলেও আপনি অদ্যাবধি এ সারের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। যা সার (ব্যবস্থাপনা) আইন ২০০৬ এর ধারা ১৭ (২) ক এর পরিপন্থী। আপনার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকার অনুমোদনহীন নাফা তরল সার বাজারজাত করণের কারণে কেন আপনার প্রতিষ্ঠানের সকল নিবন্ধন সনদ বাতিল করা হবে না তার নোটিশ প্রাপ্তির তিন কর্মদিবসের মধ্যে জবাব প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। গত ১২ এপ্রিল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় ‘জীবননগরে ইনতেফা কোম্পানির বিরুদ্ধে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ, অবৈধভাবে মজুদ করা ৮৩ বোতল নাফা উদ্ধার শেষে ধ্বংস’ শীর্ষক তথ্য ভিত্তিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদটি আলোচিত হলে জীবননগর উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় কোম্পানির এ অবৈধ পণ্যটির বিরুদ্ধে সর্বসম্মতিক্রমে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়সহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরাবর চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিসার ও চুয়াডাঙ্গার কালীগঞ্জ সড়কের জীবননগরের মেসার্স বাবুল এন্টারপ্রাইজের মালিক আবু সাঈদ বাবুল ও প্রতারিত কৃষকগণ ইনতেফা কোম্পানির অবৈধ পণ্যটির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নালিশি অভিযোগপত্র দায়ের করেন। এ অভিযোগের সূত্র ধরে অবশেষে সার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ পত্র প্রেরণ করা হয়।

যেভাবে ভুয়া রেজিস্ট্রেশন ধরা পড়লো: প্রাপ্ত তথ্যসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকতা শারমিন আক্তার (বদলি) অভিযোগ পেয়ে দেশের খ্যাতনামা বালাই নাশক ইনতেফা কোম্পানির কর্তৃপক্ষকে নাফা পণ্যের রেজিস্ট্রেশন সনদ দাখিল করার জন্য পত্র প্রেরণ করেন। গত ১৩ মার্চ ২০২৩ চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার ইনতেফা কোম্পানির প্রতিনিধিকে এ নোটিশ দেয়া হয়। পত্রটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা জেলা সার বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব উপ-পরিচালককের অনুলিপি প্রেরণ করা হয়। প্রেরিত নোটিশ সূত্রে জানা গেছে, ইনতেফা কোম্পানির নাফা নামক পিজিআর যার রেজি.নং-আইএমপি-৩৩৩ এর রেজিস্টেশন সনদ অদ্য হতে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে অত্র দপ্তরে দাখিল পৃর্বক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। তিন কার্যদিবস অতিবাহিত হলে ইনতেফা কোম্পানির জীবননগর প্রতিনিধি হালনাগাদ কোন রেজি. সনদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করতে না পেরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কোম্পানির আঞ্চলিক কর্মকর্তা নাজমুল হক কর্তৃপক্ষের নিকট রেজি. সনদ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে মর্মে দায়সারা লিখিত দিয়ে পন্যটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এ অঙ্গীকার নামা পেয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকতা শারমিন আক্তার বিব্রত হয়ে কোম্পানী প্রতিনিধিকে এ ধরনের রেজি. বিহীন পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য সর্তক করেন। এ সর্তক বার্তা পেয়ে বাজার থেকে ৮৩ বোতল সরকার অনুমোদনহীন ও ভূয়া রেজিষ্ট্রৈশন নম্বরের নিষিদ্ধ নাফা তরল সার উদ্ধার করে কৃষি অফিসে জমা দেয়া হয়। কৃষি কর্মকর্তা তা জব্দ করে প্রকাশ্যে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ধ্বংস করে। তথ্য ও অনুসন্ধান নিয়ে জানা গেছে, ইনতেফা কোম্পানীর সর্বশেষে ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী সার ও কীটনাশকসহ ৭৪টি পন্য তালিকায় নাফা নামের কোন পর্ণ্যরে নাম নেই। কিন্ত কোম্পানি প্রতিনিধির মাধ্যমে দেশের প্রায় ৮ হাজার ডিলারের মাধ্যমে নাফা নামক পণ্যটি উৎপাদন, মজুদ, সরবরাহ ও বাজারজাত করে প্রায় ১০ বছরে সরকারের কয়েক শ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। যার রেজি: নং লেখা হয়েছে আইএমপি ৩৩৩। নির্ভরযোগ্য সুত্র জানান, ভুয়া রেজি. নং দেখিয়ে এই পণ্যটি বিক্রিতে সংশ্লিষ্ট ডিলারদের  দেয়া হয় লোভনীয় আফার। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর বাজারের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী মের্সাস বাবুল এন্টারপ্রাইজের মালিক আবু সাঈদ বাবুল এ প্রতিবেদক কে বলেন, গত ১৭ আগষ্ট জীবননগর কৃষি কর্মকর্তার নিকট আমার ক্রয়কৃত ১০০ গ্রা: ৩৮ বোতল অবৈধ নাফা তরল সার ও ২০২১-২০২২ সালের ২৫টি ইন ভয়েজ কপি জমা দেয়া হয়েছে। যার মেয়াদকাল ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত লেখা রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উদ্ধারকৃত মালামালের জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা কর্মকর্তা বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে। ইনতেফা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজি মোহাম্মদ আবু দাউদ হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগা করে নোটিশ প্রাপ্তির সত্যতা সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ সংক্রান্ত বিষয়ে আমি কথা বলবো ও নোটিশের জবাব দেব পাটোয়ারী সাহেবের নিকট। কি কথা বলেছি ও জবাব দিয়েছি তা পাটোয়ারী সাহেবের নিকট আপনি জেনে নিন। এ কথা বলেই তিনি ফোন লাইন কেটে দেন। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে ফোন সংযোগ বিড়ম্বনার কারণে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। ঢাকা খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে ইনতেফা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জবাব প্রদানের সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন এটা পরিচালক তাজুল ইসলাম সাহেব বলতে পারবেন। আপনি ওনার সাথে একটু যোগাযোগ করেন। সূত্র জানায়, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জবাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে ঘটনাটি ধামাচাঁপা দেয়ার পয়তারা করছেন।

Comments (0)
Add Comment