স্টাফ রিপোর্টার: সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিদর্শন প্রতিবেদন পরবর্তী গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার হোসেনসহ সিডিসি কেন্দ্রিক ৩ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলীর ৫ম ভাই আনোয়ার হোসেন তাদের চতুর্থ ভাই সংস্থার প্রাক্তন সাধারণ সদস্য আশরাফ আলম বাবুর যোগসাজশে সংস্থা বিরোধী অপতৎপরতা শুরু করেছে। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের চুয়াডাঙ্গাস্থ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে বলা হয়েছে, অপতৎপরতার অংশ হিসেবে সংস্থার অনেকেরসহ নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার, মিথ্যা বানোয়াট কথা প্রচার করে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের জেনারেল বডি, গভর্নিং বডি ও সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের অনেকেসহ গঠিত তদন্ত টিমের সদস্যগণকে পাশে নিয়ে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংস্থার উপপরিচলক কানিজ ফাতেমা। তিনিসহ সংস্থার গর্ভনিং বডির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক, পরিচালক (প্রশাসন), গর্ভনিং কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. শাহিনুর হায়দারসহ উপস্থিত অনেকেই সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়ে বলেন, ওয়েভ ফাউন্ডেশন ১৯৯০ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন আলীর প্রচেষ্টায় দর্শনায় জন্ম নেয়। সেই থেকে সংস্থাটি নিয়ম মেনে স্বচ্ছ্বতার সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে দেশের ২২টি জেলায় বহুমুখি সমাজ কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক ১ হাজার ৭শ ৬১ জন, স্বেচ্ছাসেবক (উন্নয়ন ইস্যুভিত্তিক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত) ২ হাজার ১শ ৩৮ জন নিয়োজিত রয়েছেন। এরমধ্যে চুয়াডাঙ্গাতেই ৬শ ৭০জন কর্মী ও কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অপপ্রচারের অংশ হিসেবে গত আনোয়ার হোসেন তার ৪র্থভাই আশরাফ আলমকে সাথে নিয়ে গত ৭ জানুয়ারি সকাল ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে ৫৯ জন নারী পুরুষ শিশু কিশোরকে নিয়ে মানববন্ধন করে। স্মারকলিপিও পেশ করে। মানববন্ধনে যেসভা কথা লেখা প্লেকার্ড মেলে ধরা হয় তা শুধু মিথ্যাই নয় শিষ্ঠাচার বহির্ভূত। স্মারকলিপিতে যেসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তা মনগড়া। কেন না, গত ৩ বছরে সংস্থার যেসকল কর্মী কর্মকর্তা অব্যাহতি পেয়েছেন তার মধ্যে ৪শ ২৮ জন স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র পেশ করে অব্যাহতি নিয়েছেন। অবসর নিয়েছেন ১৯ জন। তহবিল তছরূপ এবং দায়িত্ব পালনে দুর্বলতার কারণে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ১৬৭ জনকে। বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে ২ জনকে। আর নারীর প্রতি সহিংসতা বা অনৈতিকতার কারণে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ১৬ জনকে। কারো সনদ আটকে রাখা হয়নি। যেসকল কর্মী বা কর্মকর্তার সাথে আর্থিক বিষয়ে আদালতে মামলা বিদ্যমান তাদের সার্টিফিকেট রাখা হয়েছে প্রয়োজনে। তাছাড়া কাউকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। নির্বাহী পরিচালকের কন্যা নাসিফা আলীর পদোন্নতি প্রসঙ্গে সাংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তার একাডেমিক শিক্ষা সনদ পর্যালোচনা করলে তিনি ছাত্রজীবনে মেধাবী ছিলেন বলে যেমন প্রতিয়মান হয়, তেমনই ২০১৯ সালে সহকারী সমন্বয়কারী পদে নিয়োগের পর থেকে সংস্থার প্রতি তার নিষ্ঠা ও কার্যক্রম সন্তোষজনক হওয়ায় যথযথ নিয়ম মেনেই গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সর্বক্ষেত্রেই তার বিচক্ষণতা স্পষ্ট। তাছাড়া আনোয়ার হোসেনের স্থলে সম্ভাব্য নেতৃত্ব হিসেবে কাকে দায়িত্ব দেয়া যায় তা নিয়ে গর্ভানিং ১৩৬তম সভায় বিষদে আলোচনা করা হয়। প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে গর্ভনিং বডি ও সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের সর্বসম্মতি সিদ্ধান্ত-নাসিফা আলীকে সংস্থার ২য় পর্যায়ের নেতৃত্বদানে সক্ষমতা প্রদর্শন করবেন। এখানে কয়েকধাপ পদোন্নতি মূল বিষয় নয়।
সংস্থার ৫ম ভাই আনোয়ার হোসেন সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি ১৯৯৬ সালে প্রশিক্ষক পদে যোগদান করেন। ২০০৬ সালে উপপরিচালক পদে পদোন্নতি পান। তিনি যে সকল কার্যক্রম পরিচালনার গুরুদায়িত্বপালন করেছেন সেসব ক্ষেত্রেই সংস্থার ক্ষতিসাধণ হয়েছে। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নির্বাহী পরিচালক যখনই পর্যবেক্ষণ শুরু করেন তখনই আনোয়ার হোসেন ক্ষুব্ধ হন এবং খেয়াল খুশিমত কার্যক্রম করতে থাকেন। নির্বাহী পরিচালকের ওপর চড়াও হওয়াসহ নানা অনিয়ম করতে থাকেন। এসব বিষয়ে গঠিত তদন্ত টিম তদন্ত করে যে সুপারিশ করে তারই প্রেক্ষিতে তাকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অব্যাহতি পাওয়ার পর সংস্থার অনেকের এবং নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর পাশাপাশি অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে বিভ্রান্ত না হয়ে সংস্থার পাশে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে সংবাদ সম্মেলন থেকে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়েভ গভর্ণিং বডির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশিদুন নাহার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মহসীন আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার বদরুল আলম, মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক (প্রশাসন ও মানব সম্পদ বিভাগ) ইফতেখার হোসেন, উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ বিভাগ) জহির রায়হান, উপদেষ্টা (সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি) আব্দুস শুকুর, সহকারী পরিচালক (নবায়নযোগ্য শক্তি কর্মসূচি) মো. কিতাব আলী, সিনিয়র রিজিওনাল ম্যানেজার (কমিউনিটি অর্থয়িন কর্মসূচি) মো. জিল্লুর রহমান যুদ্ধ, সিনিয়র সমন্বয়কারী (সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি) কামরুজ্জামান যুদ্ধ, সিনিয়র সমন্বয়কারী (ওয়েভ ট্রেড ট্রেনিং সেন্টার), আব্দুস সালাম, সমন্বয়কারী (অডিট বিভাগ) কামরুজ্জামান কামাল প্রমুখ।