।। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী।।
আজ ১০ রমজান। আজ শেষ হচ্ছে রহমতের দশক। রমজান মাস তাকওয়া অর্জনের মাস। মহান আল্লাহ জাল্লাশানুুহ্ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপরও ফরজ করা হয়েছিলো যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার (বাকারা: ১৮৩)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায় রোজার প্রধান উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া হাসিল করা। তাকওয়া আরবি শব্দ। এর বাংলা অর্থ হলো পরহেযগারী বা নিজেকে কোন কিছু থেকে বাঁচিয়ে রাখা। তাকওয়া কে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশিষ্ট সাহাবি উবাই ইবনে কা’ব (রা.) একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যদি কেউ কোন কন্টকাকীর্ণ রাস্তায় চলে তাহলে সে নিজেকে এবং তার পোশাককে প্রতি পদে পদে বাঁচিয়ে রাখে যাতে কাঁটা তার গায়ে না বিধে এবং কাঁটার খোঁচায় তার পোশাক ছিন্নভিন্ন না হয়। এটাই হলো তাকওয়া। একজন প্রকৃত মুমিন ব্যাক্তিও সর্বপ্রকার পাপ-পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে, এটাই রোজার লক্ষ্য। আমরা অনেক সময় খুব কষ্ট করে হলেও রোজা পালন করি, কিন্তু নিজেকে গোনাহ থেকে পরহেয করি না। এতে রোজার আসল উদ্দেশই ব্যর্থ হয়। মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ পাকের ভয়ে সমস্ত নাজায়েজ কাজ থেকে বেঁচে থাকার নামই তাকওয়া। যারা তাকওয়া অর্জন করে তাদের বলা হয় মুত্তাকি। আর মুত্তাকিদের জন্য পরকালে রয়েছে অঢেল প্রতিদান ও পুরস্কার। জান্নাতে তাদের দেয়া হবে অগণিত নেয়ামত। মহান আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন পবিত্র কুরআন মাজীদে মুত্তাকিদের পুরস্কার ঘোষণা করতে গিয়ে বলেন, নিশ্চয় মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে সাফল্য। উদ্যান, আঙ্গুর; সমবয়ষ্কা, পূর্ণযৌবনা তরুণী এবং পূর্ণ পানপাত্র। তারা সেখানে অসার ও মিথ্যা কথা শুনবে না। এটা আপনার পালনকর্তার তরফ থেকে যথোচিত প্রতিদান (সূরা আন নাবা: ৩১-৩৬)। কুরআনের আরও অনেক আয়াত এবং অসংখ্য হাদিসে মুত্তাকিদের পুরস্কার ঘোষণা করে বলা হয়েছে যে তারা নানাবিধ উত্তম পানাহার, ফলমূল, আঙ্গুর, বাগবাগিচা, নয়নাভিরাম অট্টালিকা, বালাখানা, শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ এবং সবচেয়ে বড় জিনিস আল্লাহর চির সন্তুষ্টির মধ্যে থাকবে। রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে বান্দা তাকওয়া হাসিলের সুযোগ পায়, যার মাধ্যমে পরকালে বিশাল বাদশাহির মালিক হওয়া যায়। (লেখক: মৎস্য বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)