আশা-আতংকের দোলাচলে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। গতবছর বইমেলা সংলগ্ন স্থানে অভিজিত্ রায়কে হত্যায় বইমেলার নিরাপত্তা নিয়ে বেশ চিন্তিত বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। সেজন্য এবার মেলায় আসা দর্শকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেয়া হচ্ছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যদিও অভিজিত্ রায় প্রথম নয়, এর আগেও হমায়ূন আজাদের ওপরেও এই বইমেলাতেই হামলা হয়েছিল। সবদিক বিবেচনা করে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক চলছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের। অভিজিত্ রায় হত্যার পরে প্রকাশকদের ওপরে হামলা ও জাগৃতির প্রকাশক ফয়সল আরেফীন দীপনকে হত্যার পরে জঙ্গি হামলার আতঙ্ক রয়েছে প্রকাশকদের মধ্যেও। যদিও অনেক প্রকাশকই দৃঢ়চেতা মনোভাব নিয়ে বলছেন, মুক্ত প্রকাশনা অব্যাহত থাকবে। তারপরও এবারের বইমেলা নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে প্রকাশকদের মধ্যে। ফলে নতুন বই প্রকাশে ইতস্তত করছেন অনেকেই।
একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বললেন, বইমেলার ব্যবস্থাপনা যে কোন বছরের তুলনায় নিপুণ। পুরো মেলাকে দৃষ্টিনন্দন ও পাঠকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ঢেলে সাজানো হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে নিরাপত্তার দিকে। এবারের বইমেলায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, আইন-শৃংখলা বাহিনীর বেশ কয়েকটি ক্যাম্প থাকবে, থাকবে ওয়াচ টাওয়ার। মেটাল ডিটেক্টর ও আর্চ ওয়ের নিরাপত্তা বেষ্টনি পেরিয়ে সবাইকে মেলায় প্রবেশ করানো হবে। আইন-শৃংখলা বাহিনী পুরো এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আন্তরিক। ফলে মেলা এবার ভালো হবে বলেই আশা প্রকাশ করলেন মহাপরিচালক।
এ প্রসঙ্গে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি বললেন, আশাকরি এবার মেলা ভালো হবে। কারণ এবছর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ শান্ত। গতবছরের মত সহিংস আন্দোলন নেই। তাছাড়া মেলার পরিধি বাড়ছে। দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হচ্ছে মেলা। ফলে এবারের মেলা বেশ জমবে বলেই আশা প্রকাশ করলেন তিনি। বইমেলার সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জালাল আহমেদ মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বললেন, এবার চারুকলা অনুষদ থেকে টিএসসির সামনের রেস্টুরেন্ট ডাস হয়ে দোয়েল চত্বর পুরো এলাকা সিসি টিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবে। এর আগের বছরগুলোতে যেখানে ৬০টি সিসি টিভি ব্যবহার করা হতো সেখানে এবার প্রায় ৩০০ সিসি টিভি ব্যবহার করা হবে। থাকবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওয়াচ টাওয়ার। সেইসঙ্গে মেলা প্রাঙ্গণসহ আশেপাশের পুরো এলাকায় উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা করা হবে। আর টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বরের রাস্তায় কোন হকার বসতে দেয়া হবে না।
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, এবার বইমেলার পরিধি বাড়ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে মেলার স্টল বসবে। মুক্তমঞ্চ চলে আসছে মেলা চৌহদ্দির ভেতরে। প্রতিদিন থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিশু কর্নারও চলে আসবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। তাছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিক দিয়ে প্রবেশের সময় যে ফাঁকা অংশ ছিল সেটাও চলে আসছে মেলার ভেতরে। ফলে কালী মন্দিরের গেট দিয়ে সরাসরি বইমেলায় প্রবেশ করবেন দর্শনার্থীরা। এছাড়াও দোয়েল চত্বরে তিন নেতার মাজার দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকে মেলায় প্রবেশ করা যাবে। একইভাবে টিএসসির দিক থেকে উদ্যানে ঢুকে মেলায় প্রবেশ করা যাবে। এছাড়া বাংলা একাডেমির উল্টোদিকে উদ্যানের দেয়াল উঠিয়ে সেখানে ৫০ ফুট গেট বানানো হবে। যাতে মেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় কোন জটলা সৃষ্টি না হয়। এদিকে পুরোনো কাঠামো বদলে ফেলে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হবে মেলা। প্যাভিলিয়নকে ঘিরে গুচ্ছ গুচ্ছ স্টল বিন্যাস করা হবে। একেকটি প্যাভিলিয়নকে কেন্দ্র করে সাজানো হবে স্টল। এছাড়া থাকবে মসজিদ, মানুষের বসবার ব্যবস্থা। সবমিলিয়ে মেলা এবার পরিপাটি হবে বলে আশা বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের। তবে মেলার সময়সীমা বাড়ছে না। কর্মদিবসগুলোতে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্তই খোলা থাকবে মেলা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে খুলবে মেলার দ্বার।