নতুন স্বাস্থ্যঝুঁকি ই–বর্জ্য

স্টাফ রিপোর্টার: বাতিল হওয়া টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, মোবাইলফোন, বিদ্যুতসাশ্রয়ী বাতিসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্বাস্থ্য ও পরিবেশের নতুন ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা ইলেকট্রনিক্স বর্জ্য বা ই-বর্জ্য নামে পরিচিত। একটি এনজিওর গবেষণা বলছে, দুই বছর আগেও দেশে দৈনিক গড়ে ৫০০ টনের বেশি ই-বর্জ্য তৈরি হতো। বর্তমানে তা আরও বেড়েছে। কিন্তু এসব বর্জ্য ধ্বংস, রক্ষণাবেক্ষণ বা ব্যবস্থাপনার জন্য দেশে কোনো পরিকাঠামো নেই। নেই আইন কিংবা সচেতনতাও। অথচ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে ই-বর্জ্য সংক্রান্ত আলাদা আইন রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ই-বর্জ্যের বিষয়টি এখন বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। এর স্বাস্থ্যঝুঁকিও মারাত্মক। এ ক্ষেত্রে এখনই ব্যবস্থা না নিলে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।

দেশের মানুষ প্রতিবছর কী পরিমাণ বৈদ্যুতিক পণ্য ব্যবহার করে বা তার কতোটা বাতিল হয়, এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত সিরিয়াস মার্কেটিং অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ লিমিটেডের ‘ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভে’ বলছে, সে সময় দেশে টিভি সেটের সংখ্যা ছিলো দুই কোটির কাছাকাছি। বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, দেশের মানুষ প্রতিবছর গড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকার বৈদ্যুতিক পণ্য ব্যবহার করে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, বর্তমানে দেশে প্রায় ১৩ কোটি মুঠোফোনের সংযোগ চালু আছে। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, গত এক বছরে বৈধ পথে আমদানি করা মুঠোফোনের সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লাখ। আর অবৈধ পথে এসেছে ৫০ লাখের বেশি।

বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি আলী আশফাক জানান, প্রতিবছর দেশে ব্যবহৃত ডেস্কটপ, ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট কম্পিউটারের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত একেবারেই অব্যবহারযোগ্য হয়ে পড়ে।

সুইডেনের প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংগঠন এসএসএনসির অর্থায়নে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) পরিচালিত ‘ই-বর্জ্য: বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র, ২০১৪’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশে বাতিল হয়ে যাওয়া ই-বর্জ্যের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৫১ লাখ মেট্রিক টন।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ১ কোটি ১০ লাখ টনে দাঁড়ায়। এর মধ্যে শুধু মোবাইলফোন থেকেই তৈরি হয়েছে ৫১ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য। আর টেলিভিশন এবং কম্পিউটার বর্জ্য তৈরি হয়েছে যথাক্রমে ৮ লাখ ৬০ হাজার ও ৩৪ হাজার ৪০০ টন। এদিকে বাংলাদেশে জাহাজভাঙা শিল্পের জন্য আমদানি করা প্রতিটি জাহাজে বিভিন্ন প্রকারের বিপুল পরিমাণ অব্যবহৃত বৈদ্যুতিক পণ্য থাকায় এ থেকে তৈরি হওয়া বর্জ্যের পরিমাণই সর্বাধিক, যা প্রায় ৯০ লাখ মেট্রিক টনের কাছাকাছি। এর বাইরে সিএফএল বাতি, মার্কারি বাতি, থার্মোমিটারসহ নানা প্রকারের চিকিৎসা ও গৃহস্থালি যন্ত্র থেকে তৈরি হওয়া বর্জ্যের পরিমাণ ২ লাখ ১০ হাজার ৩৩৬ মেট্রিকটন।

Comments (0)
Add Comment