………………হাসানুজ্জামান…………….
বিশ্বব্যাপী একটি আতংকের নাম করোনাভাইরাস। এই অদৃশ্য ভাইরাসে আক্রান্ত এক কোটি মানুষের কাছাকাছি। ইতোমধ্যে মৃত্যু বরণ করেছে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষ। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিজ্ঞানের এই যুগে এই মৃত্যু অনভিপ্রেত হলেও বাস্তবতাকে স্বীকার না করে উপায় নেই। বিশ্বের ১৮৮ টি দেশে করোনার মহামারি চলছে। সাধারণ মানুষ থেকে বিশ্ববরেণ্য কেউতো করোনার ভয়াল থাবা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিসলেনসেন, বিশ্ব গায়িকা ম্যাডোনা সুস্থ হয়ে উঠলেও তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল। বাংলাদেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ড. আনিসুজ্জামান ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ধর্মমন্ত্রী মোজাম্মেল হক , সিলেটের সাবেক মেয়র বদরুদ্দিন কামরান ছাড়াও সহ¯্রাধিক বাংলার মানুষ ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে। সামনের দিনগুলিতে মৃত্যুর এই মিছিলে কাদের নাম অর্ন্তভুক্ত হয় তা বলা এখনই কঠিন। এখন এই মহামারী থেকে রক্ষার উপায় কি তা নিয়ে দিনরাত চলছে গবেষণা। ভ্যাকসিন আবিস্কারের অপেক্ষায় দিন গুণছে ভুক্তভোগীরা।
যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ঔষধ কোম্পানী আস্ট্রাজেনেকার করোনার ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিস্কারে অনেকটাই এগিয়েছে। তারা সাফল্যের কাছাকাছি চলে এসেছে বলে দাবী করছে। ইতোমধ্যে জার্মান,ফ্রান্স,ইতালী ও নেদারল্যান্ড ঐ ঔষধ কোম্পানীর সাথে ভ্যাকসিনের ৩০ কোটি ডোজ এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউিটের সাথে ১০০ কোটি ডোজের অপর একটি চুক্তি করেছে বলে আর্ন্তজাতিক মিডিয়ায় খবর এসেছে। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে থাকা এই ভ্যাকসিনের জন্য ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোও একই পথে এগুনোর চেষ্ঠা করছে।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের ৪ জনের মধ্যে ৩ জনেরই রক্তজমাট বাধা, শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা, ব্রেন স্ট্রোক,হূদযন্ত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনি ও হার্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রফেসর শন জ্যাকসনের নেতৃত্বে এই ধরণের সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য তারা গবেষণাগারে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে তাদের আবিস্কৃত ভ্যাকসিন প্রথম ধাপের ট্রায়াল শেষ করে দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু করেছে। তারা জানিয়েছে আগামী কয়েকমাসের মধ্যে তাদের এই ভ্যাকসিন বাজারে আসবে। এই ভ্যাকসিনের বদৌলতে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা মুক্তি পাবে।
নিউইয়র্কের ফাইজার এবং চীনের ফসুন ফার্মার তৈরী এমআরএনএ ভ্যাকসিন গেল মে মাসে ৮ জনের উপর পরীক্ষা করে সাফল্য পেয়েছে। আগামী জুলাই মাসে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শেষে ২০২১ সালের প্রথম দিকে এই ভ্যাকসিন বাজারজাত করবে বলে জানা গেছে।
যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজের বিজ্ঞানীরা তাদের আবিস্কৃত প্রথম ধাপের পরীক্ষা সফল হলে অক্টোবরের দিকে ৬ হাজার মানুষের মধ্যে এই ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করবেন। আগামী বছরের প্রথমদিকে তারা এই ভ্যাকসিন বাজারজাত করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এখানকার বিজ্ঞানীদের বড় বৈশিষ্ঠ্য এই যে তাদের আবিস্কৃত ভ্যাকসিন প্রথমেই তারা গরীব মানুষের মধ্যে নামমাত্র মূল্যে বিতরণ করতে চায়।
ভারতের সেন্ট্রাাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন হোমিওপ্যাথিক সায়েন্টেফিক অ্যাডভাইজারি বোর্ডের ৬৪ তম সভায় করোনা প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ আর্সেনিকাম অ্যালবাম-৩০ ব্যবহারের মত দিয়েছে। তারপরেই সারা ভারত জুড়ে আলোচনার ঝড় ওঠে হোমিওপ্যাথিক এই ঔষধ নিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি বিজ্ঞানী ড. সৌম্য স্বামীনাথন ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসকে বলেন, এই ঔষধে কোন কাজ হবে বলে এখনও প্রমাণ মেলেনি।
চীনের বেইজিংভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক গবেষকরা ভ্যাকসিন তৈরীর পথে এগিয়ে চলেছেন। তাদের পরীক্ষা প্রথম ধাপ অতিক্রম করে দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছেছে। বানরের উপরে সফল পরীক্ষার পর তারা এই ভ্যাকসিন আবিস্কারের পথে এগুচ্ছে বলে জানা গেছে। ৫টি ভ্যাকসিন নিয়ে এগিয়ে চলেছে চীন। কয়েক মাসের মধ্যে তারা ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়বে বলে জানা গেছে।
মার্কিন ঔষধ কোম্পানী মর্ডানা কোভিড -১৯ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে। গেল ১৮ মে মর্ডানা তাদের প্রথম ধাপের পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর শেয়ার মার্কেটে তাদের শেয়ারের দাম বেড়ে যায়। ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব অ্যালার্জী অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্টনি এস ফসি মর্ডানার ভ্যাকসিনের পরীক্ষার ফলাফল খুব আশা ব্যাঞ্জক বলে উল্লেখ করেছেন। এদিকে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের পরীক্ষা পুনরায় শুরু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসে এই ঔষধের ব্যবহার ইতোপূর্বে নিষেধ করলেও এখন আবার পরীক্ষার পক্ষে মত দিয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ত্রুটিযুক্ত গবেষণার তথ্য পাওয়ায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এর আগে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সিএনএন জানায়, মোট করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশের কোন উপসর্গ নেই। কিছুদিন আগে উপসর্গবিহীন রোগীরা করোনা ছড়ায় না বলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বললেও এখন তারা তাদের আগের বক্তব্য থেকে সরে এসেছে।
লকডাউনের কারণে ইউরোপে ৩০লাখ মানুষ রক্ষা পেয়েছে। বিবিসি অনলাইন লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের বরাতদিয়ে এ কথা বলেছে। লকডাউন না দিলে মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তো। ইম্পেরিয়ালের গবেষক সেথ ফ্ল্যাক্সম্যান বলেন, লক ডাউনের কারণে অনেক মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে কয়েক বছর লেগে যাবে। গবেষকরা বলছেন, মে মাসের চার তারিখ পর্যন্ত ইউরোপে ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতো। বর্তমানে এ সব দেশে ৪ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত। যুক্তরাজ্যের ১০ জনের মধ্যে ৭ জন করোনায় আক্রান্ত হতো। ক্যালিফোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক গবেষণায় বলা হয়েছে চীন,দক্ষিণ কোরিয়া,ইরান , ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্টে ্র লকডাইনের কারণে ৫৩ কোটি মানুষকে করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
লেখকঃ সদস্য, খেলাঘর কেন্দ্রিয় কমিটি।