স্টাফ রিপোর্টার: মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যায় ব্যবহৃত ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীর সরকারি পিস্তল ও গুলি জব্দ করে হেফাজতে নিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। গতকাল পঞ্চম দিন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ওই অস্ত্র দিয়েই তাকে গুলি করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে কাগজ-কলমে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অস্ত্রটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে।
এদিকে রিমান্ডে থাকা মামলার আসামি ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী, টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত জিজ্ঞাসাবাদে পরস্পরকে দোষারোপ করেছেন। প্রদীপের দাবি, লিয়াকত উশৃঙ্খল, কারো পরোয়া করতো না। অপরদিকে লিয়াকতের দাবি, ওসির নির্দেশে তিনি গুলি করেন। অন্যদিকে নন্দ দুলালের দাবি, ঘটনার সময় তিনি লিয়াকতের নির্দেশে সেখানে গিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে ওসির নির্দেশে মামলার বাদী হন। এমন পরিস্থিতিতে ঘটনার খুব কাছ থেকে দেখা এপিবিএন’র তিন সদস্যকে গতকাল থেকে সাতদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞসাবাদ করা হচ্ছে। তারা হলেন এপিবিএন’র (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) এএসআই শাহাজান, কনস্টেবল রাজিব ও আবদুল্লাহ। তারা সিনহা হত্যা মামলার আসামি। আজ তাদের সামনে লিয়াকত ও নন্দ দুলালকে মুখোমুখি করার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর সোমবার তাদের প্রদীপের সামনে হাজির করা হতে পারে।
জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় রিমান্ডে থাকা আসামিরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত লিয়াকতের সরকারি পিস্তল ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেবেন। একই সঙ্গে গতকাল থেকে এপিবিএন’র তিন সদস্যকেও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে। প্রতিটি ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো তদন্ত কর্মকর্তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সে হিসেবে তদন্তকাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে রামু থানা থেকে ২৮ ধরনের আলামত জব্দ করে র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা। একই সঙ্গে সিনহা হত্যাকা-ের সব ধরনের আলামত তাদের হেফাজতে নেয়ারও নির্দেশনা ছিলো র্যাবের প্রতি। এ কারণে শনিবার কক্সবাজারের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে যান তদন্তকারী কর্মকর্তা। সেখান থেকে লিয়াকতের ব্যবহৃত সরকারি পিস্তল ও দুটি খালি ম্যাগাজিন তারা হেফাজতে নেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই অস্ত্রটি হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছিলো কিনা, সেটা নিশ্চিত হতে অস্ত্রটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। এরপর সেখান থেকে পাওয়া তথ্যমতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদিও র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সরকারি ওই পিস্তল দিয়েই সিনহাকে গুলি করা হয় বলে ইন্সপেক্টর লিয়াকত দাবি করেছেন।
সূত্রমতে, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেখানে দেখা গেছে, টেকনাফের সাবেক ওসি ওই এলাকার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেয়া একটি মাইক্রোবাস সব সময় ব্যবহার করতেন। ওই মাইক্রোবাসে চড়েই তিনি ঘটনার পর চেকপোস্টে গিয়েছিলেন। আসামিদের ব্যবহৃত গাড়ির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে এমনটাই জানতে পেরেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে লিয়াকতও তার এলাকা থেকে অনেক ধরনের অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। তিনি বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রে এর আগেও কোনো বন্দুকযুদ্ধ ঘটিয়েছেন কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেখানে দেখা গেছে, তদন্তকেন্দ্রে যোগদানের তিন মাসের মধ্যে এক মানব পাচারকারী তার বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
জানা গেছে, প্রথম দফায় কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়া এবং পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী আয়াছ, নূরুল আমিন এবং নিজাম উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। তাদের কাছ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সিনহাকে গুলি করার আগে ইন্সপেক্টর লিয়াকত কয়েক দফা কথা বলেন নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে।