স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরে একজন, রাজবাড়ীতে একজন, বরিশালে দুজন, পটুয়াখালীতে দুজন, জামালপুরে একজন, চাঁদপুরে দুজন, বগুড়ায় একজন, কুমিল্লায় একজন, ময়মনসিংহে দুজন, মানিকগঞ্জে একজন ও চট্টগ্রামে দুজন মারা গেছেন। তাদের অনেকের করোনা পরীক্ষা করা হলেও ফলাফল পাওয়ার আগেই মারা গেছেন। এছাড়া মৃত ব্যক্তিদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। আবার অনেকের পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে গতকাল সকালে করোনা উপসর্গ (জ্বর, সর্দি কাশি, শ্বাসকষ্ট, ও গলাব্যথা) নিয়ে ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তিনি উপজেলার বামনী ইউনিয়নের শাইশা গ্রামের বাসিন্দা। জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে প্রচ- জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথায় ভুগছিলেন। দুই দিন আগে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করেন। রাতে জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বেড়ে গতকাল রোববার সকালে তার মৃত্যু হয়।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হানিফ গাজী (২৮) নামে এক যুবক গতকাল ভোরে মারা যান। তিনি সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে মামার বাড়িতে মায়ের সঙ্গে বসবাস করতেন। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষার জন্য মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন জানান, শনিবার রাত ১১টার দিকে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪০ বছর বয়সের এক পুরুষ রোগীর (খালেক আকন) মৃত্যু হয়। ওইদিন দুপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। তিনি নগরীর পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। গত শনিবার ১০টা ১০ মিনিটে ৩০ বছর বয়সের আরেক পুরুষ রোগী (মো. পারভেজ) মারা যায়। একই দিন সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনি করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মৃত ওই ব্যক্তি পটুয়াখালীর নাইয়াপট্টি এলাকার। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় মো. সাত্তার হাওলাদার (৬৫) করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসার পর তার মৃত্যু হয়। মো. সাত্তার উপজেলার ইদ্রকুল গ্রামের আশরাফ আলী হাওলাদারে ছেলে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবসরপ্রাপ্ত স্টোর কিপার ছিলেন। এদিকে শনিবার রাত ৯টার দিকে হেলাল উদ্দিনের (৪৮) শ্বাসকস্ট বেড়ে যাওয়ায় পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়ার পর পরই মারা যান। গত ৩১ মে হেলালের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রিপোর্ট আসার আগেই তিনি মারা যান। তিনি বাসায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। জামালপুরের মেলান্দহে করোনা উপসর্গ নিয়ে সাবেক এক ইউপি সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফজলুল হক জানান, রোববার সকালে করোনা উপসর্গ নিয়ে উপজেলার ২নং কুলিয়া ইউনিয়নের কুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক মজনু (৬৫) মারা যায়। তিনি দীর্ঘদিন থেকেই শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলো। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার বলাখালে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছেন। শনিবার দিনগত রাত ১১টার দিকে বলাখাল গুরুচরণবাড়ীতে কার্তিক চন্দ্র দাস (৪৫) মৃত্যু হয়। হাজীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রশিদ জানান, শনিবার দিনগত রাতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন পৌর এলাকার বলাখাল গুরুচরণবাড়ীর কার্তিক চন্দ্র দাস।
রোববার সকাল ১১টায় নিজ এলকায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে তার দাহ সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক বৃদ্ধ (৬৫) মারা গেছেন। গত শনিবার সন্ধ্যায় তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষার জন্য মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে (বাড়িতে সঙ্গনিরোধ) থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে বগুড়া জেলা শহরের থানা মোড় কাঁঠালতলা রাস্তার পাশে মারা গেছেন মো. সালামত (৫৫)। করোনা আক্রান্ত সন্দেহ হওয়ায় অসুস্থ হওয়ার পরেও কেউ তার কাছে যায়নি। পরে তিনি সেখানেই মারা যায়। তিনি পেশায় রিকশা ভ্যানচালক ছিলেন। পরে খবর পেয়ে রোববার সকালে বগুড়া সদর থানার পুলিশ সদস্যরা ওই বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। উদ্ধারের আগে লাশটি দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকলেও করোনাভাইরাস আতঙ্কে কেউ কাছে যাননি। কুমিল্লায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মিন্টু লাল ধর (৪০) নামের এক বন প্রহরীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি কুমিল্লা সদর উপজেলার জামবাড়ি বিটে কর্মরত ছিলেন। মিন্টু লাল ধর কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার তলাগ্রামের কমল লাল ধরের ছেলে। কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. নুরুল করিম জানান, মিন্টু লাল ধরের করোনার উপসর্গ ছিলো। ৫ জুন রাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। ৬ জুন নগরীর ঠাকুরপাড়া শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় শ্বাসকষ্ট, সর্দি ও জ্বর নিয়ে এক কাঠমিস্ত্রির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে নিজ বাড়িতে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তির নাম নজরুল ইসলাম (৪৫)। তিনি উপজেলার মেদুয়ারী ইউনিয়নের শোয়াইল গ্রামের আজগর আলীর ছেলে। এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর এসকে হাসপাতালে দেবাশীষ দাস (৫২) নামের এক গার্মেন্ট কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি ঢাকার ফকিরা গ্রুপের গার্মেন্টস বিভাগের এইচআর বিভাগের প্রধান ছিলেন। তার বাড়ি সাভার শিমুলিয়া। মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোববার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক যুবকের (২৬) মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে ভর্তির আধা ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশাদ উল্লাহ এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের আরও এক ব্যক্তি কভিড-১৯ এর মতো উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে। মারা যাওয়া ব্যক্তির বয়স ৫৮ বছর। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের মা ও শিশু হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলার কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী। এদিকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় কভিড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে এক ব্যবসায়ীর (৬০) মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ওই রাতেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে তার মৃতদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।