যশোরে চা-নাশতার কথা বলে ৯৪ নার্সের প্রণোদনার টাকা কর্তন

যশোর প্রতিনিধি: চা-নাশতার খরচ বাবদ যশোর জেনারেল হাসপাতালের ৯৪ জন নার্সের করোনা প্রণোদনার টাকা থেকে ১ লাখ ৪১ হাজার টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। গত দুইদিনে হাসপাতালের হিসাব বিভাগ থেকে নার্সদের মূল বেতনের দুটির সমান প্রণোদনার টাকা দেয়া হয়। এ সময় হিসাব শাখার কর্মকর্তারা প্রত্যেকের কাছ থেকে গড়ে দেড় হাজার টাকা করে কেটে নেন। গত বছর কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হলে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের বিশেষ ভাতা দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণা অনুযায়ী যশোর জেনারেল হাসপাতালের ৯৪ জন নার্স এই প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। মঙ্গলবার নার্সদের ওই প্রণোদনার টাকা দেয়া শুরু হয়।
প্রণোদনা পাওয়া নার্সদের কয়েকজন জানান, ব্যাংক হিসাব বা চেকের মাধ্যমে না দিয়ে হাসপাতালের হিসাব শাখা থেকে সরাসরি নগদ টাকা দেয়া হচ্ছে। এ সময় চা-নাশতা খাওয়া বাবদ দেড় হাজার টাকা করে কেটে রেখে অবশিষ্ট টাকা দেয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নার্স বলেন, ‘আমার মূল বেতন ১৭ হাজার ৬৪০ টাকা। মূল বেতনের দুটি হিসাবে আমার ৩৫ হাজার ২৮০ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু আমাকে ৩৩ হাজার ৭০০ টাকা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ১ হাজার ৫৮০ টাকা কেটে নেয়া হয়। এই টাকা কেন কাটা হচ্ছে, জানতে চাইলে হিসাব বিভাগের কর্মচারীরা জানান, ‘চা-নাশতা খাওয়ার জন্য সবার কাছ থেকে এই টাকা নেয়া হচ্ছে।’ বিনা রসিদে আমাদের সবার কাছ থেকেই ওই টাকা কর্তন করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে হেনা বিশ্বাস নামের একজন সিনিয়র নার্স তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘দুর্নীতিরও একটা নীতি থাকা প্রয়োজন, নার্সদের প্রণোদনার দুই মাসের বেসিক থেকে ১৫০০ টাকা করে চা-নাশতা বাবদ কর্তন করা হচ্ছে। দেখবার কি কেউ নেই? কোথায় বাস করছি আমরা।’
বিনা রসিদে নার্সদের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা করে কর্তন করা হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘নার্সদের প্রণোদনার টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা করে কর্তন করা হয়েছে, এটা সত্য। অপরিদর্শিত কিছু খরচ রয়েছে। এর মধ্যে জেলা এজি (অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স) অফিসে ৫ শতাংশ ও অভ্যন্তরীণ হিসাব নিরীক্ষণের জন্য ৫ শতাংশ ঘুষের টাকা দিতে হয়। এটা এখন ওপেন সিক্রেট বিষয়। কিন্তু আমাদের কিছুই বলার নেই। ওই টাকা না দিলে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। এ নিয়ে আমি সরকারের অনেক বড় জায়গাতেও কথা বলেছি। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। যে কারণে নার্সদের প্রণোদনা থেকে ওই টাকা কর্তন করা ছাড়া আমাদের কোনো পথ ছিল না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘নার্সদের প্রণোদনার বরাদ্দ হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২৮ জুন ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। দুই দিনের মধ্যে, অর্থাৎ জুনের মধ্যেই ওই টাকা উত্তোলন করতে হবে। কিন্তু উত্তোলনের প্রক্রিয়ায় কিছু কাজ আটকে রাখা হয়। যেখানে কিছু টাকা দেয়ার প্রশ্ন থাকে। এভাবেই সব জায়গায় ঘুষ দিতে হচ্ছে।
জেনারেল হাসপাতালের নার্সদের প্রণোদনার টাকা ছাড়ের জন্য ঘুষ আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে জেলা অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নার্সদের প্রণোদনা দেয়ার জন্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে ৪০ লাখের বেশি টাকা দেয়া হয়েছে। ওই টাকার দায়দায়িত্ব তত্ত্বাবধায়কের। ওই টাকা ছাড়ার জন্য ৫ শতাংশ ঘুষ নেয়ার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা একেবারেই সত্য নয়। এজি অফিসে কোনো ঘুষ নেয়া হয় না। যদি কেউ নিয়েও থাকে, তথ্য দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Comments (0)
Add Comment