দেশে কোনোভাবেই সোনা চোরাচালান রোধ করা যাচ্ছে না। কিছুদিন পরপরই উদ্ধার হচ্ছে সোনার বার। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝিনাইদহে ভারতে পাচারকালে ৪০ পিস সোনার বার উদ্ধার করেছে বিজিবি। মহেশপুর উপজেলার মাটিলা সীমান্ত দিয়ে পাচারকালে এ সোনার বার উদ্ধার করা হয়। এ সময় শওকত আলী নামে একজনকে আটকও করা হয়েছে। অপরদিকে, যশোরের শার্শা সীমান্ত থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় পৃথক তিন অভিযান চালিয়ে ৪ কেজি ৩৯৩ গ্রাম সোনার বার উদ্ধার করেছে বিজিবি। এছাড়া গত সোমবার চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের উপজেলার গয়েশপুর গ্রাম থেকে সোনার ৪টি বারসহ তাজমুল হোসেন (৩০) নামের এক যুবককে আটক করে বিজিবি। গত বুধবার মেহেরপুরে ছয়টি সোনার বারসহ দুজনকে আটক করা হয়। এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর দামুড়হুদা উপজেলার বারাদী সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ৯ কেজি ৮৬০ গ্রাম সোনাসহ রকিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে বিজিবি।
আমাদের দেশের বিমানবন্দরসহ নানা এলাকায় এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সোনার ছোট-বড় চালান আসছে, ফাঁক গলে বের হয়ে যাচ্ছে, মাঝেমধ্যে দু’একটি চালান ধরাও পড়ছে। শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশে সোনার চাহিদা বছরে ১৬ থেকে ২৬ টন। কিন্তু এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সোনা অবৈধ পথে দেশে আসছে। পাঁচটি সোনার চালান এলেও ধরা পড়ে মাত্র একটি।
এ ক্ষেত্রে কাজ করছে বড় ধরনের দেশি ও বিদেশি সিন্ডিকেট। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক চক্র বাংলাদেশকে সোনার চোরাচালানের বড় ধরনের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। এর আগে এমন খবরও সামনে এসেছে, যাদের চোরাচালান রোধ করার দায়িত্ব তাদের মধ্যেও কেউ কেউ অবলীলায় জড়িয়ে পড়ছে সোনা চোরাচালান চক্রের সঙ্গে। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি চক্রের সন্ধান পেয়েছিলো গোয়েন্দারা।
বাংলাদেশকে যেভাবে সোনার চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করতে চোরাচালানকারীরা তৎপর তা বিভিন্ন সময়ের ঘটনা থেকেই স্পষ্ট হয়। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বিভিন্ন সময়ে সোনার বার উদ্ধার করা হয়েছে। প্যান্টের ভেতর, কম্বলের ভেতর কিংবা বিমানের টয়লেটে, এমনকি যাত্রীর জুতোয়, মানিব্যাগে, লাগেজে, হ্যাঙ্গার গেটে সর্বত্রই পাওয়া গেছে সোনার বার বিভিন্ন সময়ে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালিয়েও উদ্ধার করছে সোনার বার। দেশের সীমান্ত এলাকায়ও ধরা পড়ছে সোনার চোরাচালান। আমরা মনে করি, এ ধরনের ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে। কেননা, এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে তা দেশের জন্য বিপজ্জনক। এটা দেশের ভাবমূর্তিরও প্রশ্ন।
এবারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। যারা সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত তারা রাতারাতি ধনী হতে চায় এবং তারা দেশ ও জাতির শত্রু, মানুষের শত্রু। কেননা, এর ফলে দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হয়। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা খুবই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি এবং এ পরিস্থিতির অবসান হওয়া জরুরি। দেশ থেকে চোরাচালান একেবারেই বন্ধ হোক এমনটি সবার কাম্য। আর সেজন্য সক্রিয় হতে হবে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদেরই।