সার নিয়ে নৈরাজ্য : এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে

সম্পাদকীয়

সার নিয়ে নৈরাজ্যের অবসান হয়নি এখনো। কৃষকরা দোকানে গেলে ডিলাররা বলে দিচ্ছেন, সার নেই। অথচ স্থানীয় প্রশাসন বলছে, সারের কোনো সংকট নেই। সার গুদামে মজুত রয়েছে। কোথাও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিলে সার পাওয়া যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে কৃত্রিমভাবে সারের সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কারণ এখন চলছে আমনের মরসুম। এ সময় কৃষকরা সার না পেলে উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এ সময়েই যদি কৃষকরা সার না পান, তাহলে তারা ধান উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে খাদ্য নিরাপত্তায়। কাজেই বিষয়টিতে জরুরি ভিত্তিতে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা।

বস্তুত সারের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয় আগস্টের শুরুতে। ১ আগস্ট ইউরিয়া সারের দাম কেজিপ্রতি ৬ টাকা বাড়ানো হয়। এরপর ৫ আগস্ট বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের দাম। এর প্রতিক্রিয়ায় পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে খুচরা পর্যায়ে কৃষকদের কাছ থেকে সারের বাড়তি দাম নেয়া হতে থাকে। শুধু তা-ই নয়, সার পরিবহণেও নানা অনিয়ম রয়েছে। লাখ লাখ টন সার মাঝপথে গায়েব করে দেয়ার অভিযোগ আছে। এমনকি সারে ভেজাল মেশানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে।

এদিকে গ্যাস সংকট ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থিত যমুনা সার কারখানায় ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ রয়েছে চার মাস ধরে। সেখানে সারের মজুত এখন শেষ পর্যায়ে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে জমিতে সেচ দেয়া এবং ট্রাক্টর ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। সব মিলে কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

এ অবস্থায় সারের কৃত্রিম সংকট রোধে অসাধু ডিলারদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে নিয়মিত বাজার মনিটরিং চালিয়ে যেতে হবে। ভেঙে দিতে হবে পরিবহণ ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট। বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের কঠোর ভূমিকা না থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

শুধু সার নয়, দেশে নানা অপকৌশলে ভোক্তাদের ঠকানো ছাড়াও কারসাজি ও যোগসাজশের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। এবার আমনের মরসুমে যারা কারসাজি করে সারের বাজার অস্থির করে তুলেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে, এটাই কাম্য।

Comments (0)
Add Comment