বিশ্ব এক ভয়াবহ সংকটকাল অতিক্রম করছে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে কার্যত বিশ্ব থমকে গেছে, মানুষ বন্দি হয়ে পড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে লকডাউন করা হয়েছে। এ অবস্থায় করোনা রোধের উপায় খুঁজতে যেমন নানা ধরনের প্রচেষ্টা চলছে, তেমনি এর প্রভাব সংক্রান্ত নানা বিষয়ে গবেষণাও হচ্ছে। করোনা মহামারী ঠেকাতে যে ‘লকডাউন’ চলছে, তা যদি তিন মাস চলে, তবে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হবে বলে আশঙ্কা করেছে অর্থনীতি গবেষণা সংস্থা সানেম। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। গত দেড় দশকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে, এটা তারই ফল। কিন্তু এখন সানেমের আশঙ্কা যদি ঠিক হয়, তবে তিন মাস পর দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, যা ২০০৫ সালে ছিলো। সঙ্গত কারণেই এই আশঙ্কাকে সামনে রেখে করণীয় নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
বলা দরকার, বৈশ্বিক মহামারী রূপ নেয়া ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে দেখা দেয়ার পর তার বিস্তার ঠেকাতে অন্য দেশের মতোই লকডাউনে যায় সরকার। আর এর ফলে সবকিছু বন্ধ হয়ে পড়ায় স্বল্প আয়ের ও শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
এখন সবচেয়ে বেশি দরকার করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখা এবং একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার-করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকা। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, দেশের ৪০টি জেলার দারিদ্র্য হার জাতীয় হারকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। যেমন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাঙামাটি। এ জেলায় ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্য হবে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এখন সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নেয়া দরকার, অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাস সংকটের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ এবং বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি অর্থ খরচে তিনটি পরামর্শ দিয়েছে সানেম। প্রথমত, দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীকে কার্যকরভাবে চিহ্নিত করা এবং এর মাধ্যমে তাদের সহায়তা প্রদানের ধরণ ও সময়ের ব্যাপ্তি নির্ধারণ করা। দ্বিতীয়ত, এটি নিশ্চিত করা যাতে প্রকৃত অর্থে যে সব শিল্প-কলকারখানা এবং গরিব মানুষের সহায়তা প্রয়োজন, তাদের কাছে এই সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছায়। আর তৃতীয়ত, একটি ‘পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া’ চালু করা, যার মাধমে এই সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের কার্যকারিতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়। পরামর্শগুলো আমলে নেয়া জরুরি একই সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে এমনটি কাম্য।