সরকারি চাকরিজীবীদের বাইরে দেশের সব প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিককে পেনশন-ব্যবস্থার আওতায় আনতে জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস করা হয়েছে। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের পৃথক গেজেট জারি করে এই পেনশন ব্যবস্থায় আনার সুযোগ বিলে রাখা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকে বিলটি উত্থাপণ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। পরে এটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। বর্তমান সরকারের প্রধান বিবেচ্য যে জনকল্যাণ, সেটিই এর মধ্যদিয়ে আরও একবার স্পষ্ট হয়ে উঠলো। বাস্তবতা হলো, দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত। তারাই পেনশন সুবিধা পান। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্রাচ্যুইটি সুবিধা পেলেও অন্যদের জন্য সে সুবিধাও নেই। সচেতন শিক্ষিত সমাজ ভবিষ্যতের কথা ভেবে সঞ্চয় করেন এবং এমন খাতে পুঁজি বিনিয়োগ করেন যাতে সেখান থেকে যে মুনাফা আসে সেটিই তাকে প্রবীণকালে আর্থিক সুরক্ষা দিতে পারে। উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন বীমা, ব্যাংক ও বিনিয়োগ কোম্পানির আর্থিক উপদেষ্টা রয়েছে। তারা আয়-ব্যয়ের ধরন ও ভবিষ্যত সম্ভাবনার বিবেচনায় একজন গ্রাহকের জন্য বিনিয়োগের পরিকল্পনা প্রণয়ন করে থাকে। তখন একজন গ্রাহক ঠিক করতে পারেন তিনি কোন্টা বেছে নেবেন। এর মধ্যে আছে বীমার পেনশন স্কিম, বন্ডে বিনিয়োগ, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ প্রভৃতি। প্রতিটি খাতের জন্যও আবার আলাদা আলাদা সঞ্চয়ের ব্যবস্থা থাকে। যেমন-ভ্রমণ, বাড়ি বা ফ্ল্যাট ক্রয় প্রভৃতি। প্রত্যেক গ্রাহকের জন্য তারা আলাদা আলাদা পরিকল্পনা করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে এসবের বালাই নেই। অবসরবিষয়ক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা এখনও আমাদের দেশে অনুপস্থিত। প্রধানমন্ত্রী ইতঃপূর্বে দারিদ্র্য দূরীকরণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এক্ষেত্রে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তবে এখনও প্রতি পাঁচজনে একজন দারিদ্র্যের শিকার। এসব নিয়ে সরকার কাজ করছে। পাশাপাশি প্রবীণদের নিয়েও কাজ করছে। প্রবীণদের জন্য আইন ও বিধিমালা হওয়ায় এখন আর কারও পক্ষে মাতাপিতাকে অবহেলা করা সম্ভব নয়। আধুনিক রাষ্ট্রে প্রবীণদের জন্য চারটি বিষয় গুরুত্ব দেয়া হয়। সেগুলো হলো- ২৪ ঘণ্টা থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, সমবয়সী বন্ধুবান্ধবের সাহচর্য ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। নিয়মিত আর্থিক প্রাপ্তি ঘটলে প্রথম দুটি সহজ হয়ে যায়। এ জন্য পেনশনের মতো সামাজিক আর্থিক সুরক্ষা বিরাট উপকারী। দেশে সার্বিক অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি হয়েছে। ফলে মানুষ দীর্ঘায়ু হচ্ছে। ক্রমশ বাড়ছে প্রবীণ নারী ও পুরুষের সংখ্যা। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে প্রবীণের সংখ্যা দাঁড়াবে মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের বেশি। মানুষের গড় আয়ু বাড়ার কারণে প্রবীণদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, বিপরীতে নগরায়ণের ফলে প্রবীণদের আর্থিক ও সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীন হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই শেষ জীবনে প্রবীণদের আর্থিক সুরক্ষায় সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি অবশ্যই একটি মহৎ উদ্যোগ। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে শতভাগ আন্তরিক মানবিক ও দায়িত্বশীল হতে হবে।