সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হোক

সম্পাদকীয়

প্রতিটি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হোক এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। আর এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আমলে নেয়া দরকার, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করতে পারলে তাতে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। আর তা নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশের নির্বাচনগুলো শতভাগ সহিংসতামুক্ত হতে পারছে না। অন্যদিকে নির্বাচনে বিভিন্ন দল অংশগ্রহণ না করার বিষয়ও আলোচনায় আসে।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেলো, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন সাবেক সিইসি, ইসি ও ইসি সচিবরা। আমরা মনে করি, এই তাগিদ দেয়ার বিষয়টি আমলে নিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। সাবেক সিইসি, ইসি ও ইসি সচিবদের দাবি, সব দল যদি না আসে, নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক না হয় তাহলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই যে কোনো মূল্যে সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বলে মত দিয়েছেন তারা। আমরা মনে করি, এই মতকে আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের যথাযথ উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

উল্লেখ্য, রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে সাবেক সিইসি, ইসি ও ইসি সচিবরা তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সংলাপে সাবেক ২৮ জন সিইসি, ইসি ও ইসি সচিব-অতিরিক্ত সচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের মধ্যে ১০ জন অংশ নেন। এমন বিষয় আলোচনায় এসেছে যে, সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে সবাই মনে করবে, নির্বাচন ভালো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ইনভলব (যুক্ত) হতে পারবে না। যদি তারা ইনভলব হয়ে যায়, তাহলে দেখা যাবে যে, কিছুই করা যাচ্ছে না। এছাড়া নির্বাচন কমিশন সব দলকে ভোটে আনতে সক্ষম হলে ৮০ ভাগ কাজ হয়ে গেলো, এমন বিষয়ও উঠে এসেছে। এটাও আলোচনা এসেছে যে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। সংলাপ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না থাকলে আমাদের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কষ্টকর হবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একার পক্ষে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তার মতে, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগামী নির্বাচন ভালো করতে পারা সম্ভব। আমরা মনে করি, যে সব সংকট আলোচনায় এসেছে প্রত্যেকটি বিষয় আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে এমনটি প্রত্যাশিত।

এটাও আমলে নেয়া জরুরি যে, সবাই বলেছেন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। নির্বাচন যদি ইনক্লুসিভ না হয়, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাস্তব অর্থে থাকবে না। এছাড়া আলোচনায় এসেছে, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনেকটা নষ্ট হেয়ে গেছে। এই সংস্কৃতির মধ্যে কিছু ইতিবাচক গুণ আনতে হবে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথার্থ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক- এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হোক-আর এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি। মনে রাখা দরকার, এর আগে ইউপি নির্বাচনের অধিকাংশ ধাপেই সহিংসতার ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। ফলে কোনো নির্বাচনে যেন সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সেই বিষয়টিকে সামনে রেখেও পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি তৎপর হতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হোক এবং এই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

Comments (0)
Add Comment