দেশে যে হারে নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি কতোটা ভয়াবহ হয়ে উঠবে তা অনুমান করা অসম্ভব নয়। চিকিৎসা দূরের কথা লাশের স্তুপ নিয়েও বেশামাল অবস্থার শঙ্কা অবান্তর নয়। এরপরও সংক্রামক রুখতে কেন আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা পুরোপুরি অনুসরণ করতে পারছি না? সচেতনতা ও সামর্থে রয়েছে ঘাটতি।
এটা ঠিক যে, ভাইরাস যতোই মহামারী রূপ নিক না কেন, ধরিত্রী থেকে মানুষ জাতিকে বিলুপ্ত করতে পারবে না। কিছু মানুষের শরীরেই প্রতিষেধক তৈরি হয়, হচ্ছেও। মরছেও কম নয়। আর কিছুদিনের মধ্যে ভেকসিন হয়তো আসবে, তার আগে বাঁচতে তো হবে। যা হয় হবে, ওষুধ তো এসে গেছে এমনভেবে গড্ডালিকায় গা ভাসানোর পরিণাম অনেকেই হয়তো ভাবতেও পারছেন না। কিছু প্রতিষেধক ইতোমধ্যেই আবিষ্কার হয়েছে। যদিও আমাদের দেশে ‘রেমডেসিভি’ নামক ওই প্রতিষেধকের দাম স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। স্বল্প মাত্রার তথা ৫দিনের জন্য ইনজেকশনের দাম নাকি ৩০ হাজার টাকা। আর ১০দিনের জন্য গুনতে হবে ৫৫ হাজার টাকা। আমাদের দেশে ওই ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারেই এ মূল্যের ধারণা প্রকাশ পেয়েছে। অতো টাকার ওষুধ সরকারিভাবে ক্রয় করে তা রোগীদের জন্য সরবরাহ হলেও রোগীর সংখ্যা অনিয়ন্ত্রিত হলে কতোটা নিশ্চিত করা যাবে? ভাবতেও গা শিউরে ওঠার মতো অবস্থা। এ অবস্থায় বিক্রয় বিপণী কেন্দ্রগুলো খোলা হচ্ছে, বলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মসজিদেও নামাজ আদায় করা যাবে। দোকানপাঠ খোলার আগেই গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে যে হারে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে এবং অটো বা ইজিবাইকের মতো গণপরিবহনের সংখ্যা রাস্তায় ব্যাপকতা পেয়েছে; তা দেখে স্বাস্থ্য সচেতনদের অবশ্যই কিংকর্তব্য বিমূঢ় হতে হয়েছে।
অবশ্যই সুস্থ থাকতে হলে প্রত্যেকেরই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। কতোদিনই আর ঘরবন্দি অবস্থায় রাখা বা থাকা যায়? একদিকে দারিদ্র্যতার কষাঘাত, অন্যদিকে ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব। জীবন এবং ক্ষুধা কোনোটিকেই কি খাটো করে দেখা যায়? ক্ষুধার যন্ত্রণার কাছে কি জীবন তুচ্ছ নয়? মূলত এসব বিবেচনা করে সরকারকে কিছু ক্ষেত্রে শিথিলতার পথে হাটতে হচ্ছে। তার মানে এই নয় যে, ভাইরাসের ভয় উবে গেছে। নোভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ বিশ্বে ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ লাখের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাও কম নয়। আমাদের দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা এখন পর্যন্ত তুলনামূলক কম হলেও তা নিশ্চয় স্বস্তিদায়ক নয়। মানুষের শরীরে রোগ প্রতিষেধক তৈরি হলেও মহামারীর ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে কোনোভাবেই খামখেয়ালিপনা কাম্য নয়। যে দেশগুলো আগেভাগে সংক্রামক রোধে শক্ত অবস্থান নিতে পেরেছে সেসব দেশগুলো যতোটা ভালো আছে আমরা অতোটা নেই। তাছাড়া পরীক্ষার পর্যাপ্ততা নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্ন অবান্তর নয়। চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য সেবাদানে নিয়োজিতদের নিরাপত্তাতেও ঘাটতি। এ অবস্থায় সুচিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত হবে কীভাবে?
ভাইরাসটি যেহেতু ভয়ানক ছোঁয়াচে। এ থেকে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে হলে সামাজিক দূরুত্ব মেনে চলতে হবে নিজের দায়িত্বেই। যারা আক্রান্ত হয়েছে তারাই বুঝতে পেরেছে এবং পারছে এই ভাইরাসের ভয়াবহতা। সময় থাকতে ওই ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থ থাকার এবং সুস্থ রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা নিশ্চয় বয়ে আনবে সুন্দর সকাল।